স্বীকৃতি বিশ্বাস, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
১৭৭২ সালের ২২ মে বাংলা নব জাগরণের আদিপুরুষ রাজা রামমোহন রায় জন্মগ্রহন করেন। তিনি প্রথম ভারতীয় যিনি ধর্মীয় ও সামাজিক পুনর্গঠনের জন্য আন্দোলন শুরু করেন ও ফলস্বরূপ ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি একজন বাঙালি দার্শনিক। তৎকালীন রাজনীতি, প্রশাসন, ধর্ম এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে তিনি উল্লেখযোগ্য প্রভাব রাখতে পেরেছিলেন। ভারতবর্ষে তাঁর নাম সবচেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে স্মরণ করা হয় সতীদাহ প্রথা বিলুপ্ত করার প্রচেষ্টার জন্য। ভারতে দীর্ঘকাল যাবৎ বিধবা নারীদের স্বামীর চিতায় সহমরণে যেতে বা আত্মাহুতি দিতে বাধ্য করা হত।
তা বন্ধ করার জন্য তিনি বেদ, উপনিষদ ও নানা ধর্মশাস্ত্র থেকে এই রীতির বিরুদ্ধাচারণ করেন এবং তা যে অশাস্ত্রীয় বোঝায় এমন অসংখ্য বিধান খুঁজে অনেক গ্রন্থ লেখেন।
তাঁর প্রথম তত্ত্বগ্রন্থ – ‘প্রবর্তক ও নিবর্তকের সম্বাদ’। ১৮২৮ সালের ডিসেম্বর মাসে আইন করে সহমরণ-রীতি নিষিদ্ধ করা হয়।
তবুও মনুবাদী স্বার্থান্বেষীরা চেষ্টা করতে লাগল যাতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বিষয়টি পুনর্বিবেচিত হয়। এই চেষ্টায় বাধা দেওয়ার জন্য রামমোহন বিলেত যান । এব্যাপারে তাকে আর্থিক সহায়তা দান করেন প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর। তাঁদের যৌথ উদ্যোগে বন্ধ হয় “সতীদাহ”-র মত বর্বর প্রথা।
তৎকালীন মোঘল সম্রাট তাঁর দাবি ব্রিটিশ সরকারের কাছে পেশ করার জন্য ১৮৩০ সালে রামমোহনকে বিলেত পাঠান ও তিনিই রামমোহনকে রাজা উপাধি দেন।
রামমোহন রায় একেশ্বরবাদে বিশ্বাস করতেন। তিনি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মূর্তি পূজার বিরোধী ছিলেন। এই বিশ্বাস থেকে তিনি ব্রাহ্মসমাজ ও ব্রাহ্মধর্ম প্রতিষ্ঠা করেন। রামমোহন রায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আচরণীয় ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান মানতেন না ও তা প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতেন। তিনি মনে করতেন সকল ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান কুসংস্কার ছাড়া কিছু নয়। রামমোহন রায় বেদের বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করে তার বক্তব্য প্রমাণ করেন।
উনবিংশ শতাব্দীতে রাজা রামমোহন যে মুক্ত চিন্তাচেতনার আলো জ্বেলে দিয়ে গিয়েছিলেন, সেই আলোতেই ভারত বর্ষে নব-জাগরণের পথটি ত্বরান্বিত হয়েছিল। আর তাই আজ এই মহামানবের জন্মদিনে জানাই স্বশ্রদ্ধ শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা।