সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
চারু নিকেতন (Anjali jewllers) নামে স্বর্ণ বিক্রির অনলাইন পেইজের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়া পাঁচ সদস্যের প্রতারক চক্র গ্রেফতার
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, র্যাব এলিট ফোর্স হিসেবে আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই বিভিন্ন ধরনের নৃশংস ও ঘৃণ্যতম অপরাধ বিশেষ করে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, জঙ্গি দমন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, মাদক, ছিনতাই ও প্রতারণাকারীসহ বিভিন্ন অপরাধীদের গ্রেফতারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কারসাজির মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ গ্রাহককে পণ্য ডেলিভারী না দিয়ে অর্থ আত্মসাত করার বিষয়টি দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। বিভিন্ন লোভনীয় গগনচুম্বী অফারের মাধ্যমে প্রলুব্ধ করে সাধারণ জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বেশ কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান।
এছাড়াও বিভিন্ন পণ্য বিক্রির উদ্দেশ্যে ফেসবুক পেইজ ওপেন করে চলছে প্রতারণা। যাতে অনেক মানুষ সরল বিশ^াসের কারনে প্রতারিত হচ্ছেন। ২. গত ১৫ ই ডিসেম্বর ২০২১ খ্রিঃ তারিখে সিলেট শহরের বাসিন্দা ডাক্তার নিষ্ঠা চক্রবর্তী এসএমপির জালালাবাদ থানায় “চারু নিকেতন (Anjali jewllers) নামক স্বর্ণ বিক্রির একটি অনলাইন পেজের মাধ্যমে প্রতারিত হওয়ার ঘটনা সাধারণ ডায়েরি ভুক্ত করেন। থানায় সাধারণ ডায়েরি করার পাশাপাশি তিনি র্যাব-৯ এর কর্তৃপক্ষের নিকট প্রতিকার চেয়ে লিখিত অভিযোগ করেন।
অনলাইন প্রতারণার এই অভিযোগটি প্রাপ্ত হয়ে টিম র্যাব-৯ আভিযানিক কার্যক্রম শুরু করে। অত্যন্ত কৌশলী এবং অনলাইন কার্যক্রমে পারদর্শী এই প্রতারক চক্র কে শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। দীর্ঘ সময় এই নিয়ে গোয়েন্দা তৎপরতার এক পর্যায়ে গত ৩০ এপ্রিল ২০২২ খ্রিঃ তারিখ র্যাব-৯ এর একটি বিশেষ আভিযানিক দল সিএমপির, বাকালিয়া থানাধীন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের মূল হোতাসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিগণ হচ্ছেন ১। আয়েশা সিদ্দিকা (২০) [মূলহোতা], ২। আব্দুল আল মোমেন @ বাক্কার (২৬)[সহযোগী/মূলহোতার স্বামী], ৩। মোঃ ওসমান গনি সরোয়ার (২৩) [সহযোগী], ৪। মোঃ বাবর আলী শেখ (২৫) [সহযোগী] এবং ৫। মোঃ মেহেদী হাসান (১৭) [সহযোগী]। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের নিকট থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ০৬টি মোবাইল ফোন এবং ০৭টি সিম উদ্ধার করা হয়।
অভিযোগকারীর অভিযোগ এবং গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে স্বর্ণ বিক্রির ভূয়া অনলাইন পেইজ “চারু নিকেতন (Anjali jewllers) ব্যবহার করে প্রতারক চক্রের বিশাল প্রতারণা কার্যক্রম সম্পর্কে জানা যায়। আয়েশা সিদ্দিকা হচ্ছেন এই পেইজের এডমিন এবং বাকি আসামিরা সহযোগী।
এছাড়াও অজ্ঞাত নামা ব্যক্তিরা এই চক্রের সাথে যুক্ত আছেন। আয়েশা সিদ্দিকা মূলত ঘবীঃ Next Your Shopping নামক একটি অনলাইন পেইজের মাধ্যমে কাপড় বিক্রি করতেন। কিন্তু ছয় মাস আগে তিনি প্রতারণার উদ্দেশ্যে ফেসবুকে “চারু নিকেতন (Anjali jewllers) নামক স্বর্ণ বিক্রির পেইজ ওপেন করেন। তার এই পেইজের বর্তমান ফলোয়ার্সের সংখ্যা সাত হাজারের অধিক। কম দামে এবং কিস্তিতে আকর্ষণীয় ডিজাইনের স্বর্ণের গহনার পোস্ট দিয়ে জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেন।
ক্রেতারা পেইজে নক করে বিস্তারিত জানতে চাইলে বলা হত গহনা কিনতে হলে অ্যাডভান্স ৫০% টাকা বিকাশ করতে হবে। অ্যাডভান্স বিকাশ করা সম্পন্ন হলে এই প্রতারকরা নিত আরেক প্রতারণার আশ্রয়। ভুয়া কুরিয়ার স্লিপের ছবি পাঠানো হতো ক্রেতাদের মেসেঞ্জারে। এরপর ও যখন দেরি হতো তখন এই প্রতারক চক্র আরো টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য টালবাহানা করত।
অবশেষে ভুক্তভোগী ক্রেতাকে ম্যাসেঞ্জারে এবং ফেসবুকে ব্লক করে দিত এই প্রতারক চক্র। সরল বিশ্বাসে এবং লোভের বশবর্তী হয়ে প্রতারণার ফাঁদে পা দেয়া এ পর্যন্ত ২৫০ থেকে ৩০০ ব্যক্তির নিকট থেকে ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্রটি। ৫. “অঞ্জলি জুয়েলার্স” নামক একটি জুয়েলারি শপ এর প্রকৃত অবস্থান মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল থানা এলাকায়। এই জুয়েলারি শপ এর মালিকের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি অনলাইনে স্বর্ণ বিক্রির কোন ফেসবুক পেজ চালান না এবং প্রতারিত হওয়া অনেক ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ তার কাছে অভিযোগ করলে তিনি সংশ্লিষ্ট থানায় এ নিয়ে অভিযোগ করেছেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা তাদের অপরাধ স্বীকার করেছেন। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী ডাঃ নিষ্ঠা চক্রবর্তী কর্তৃক দায়েরকৃত এসএমপির জালালাবাদ থানার মামলায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এই প্রতারক চক্রের সাথে জড়িত অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র্যাব-৯ এর অভিযান অব্যাহত আছে।