মোঃ শহিদুল ইসলাম, টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধিঃ
“আকপেন হাওয়াই মিঠাই, আকপেন হাওয়াই মিঠাই” বলে ছোট একটি ঘণ্টা বাজিয়ে গ্রাম থেকে গ্রামে ছুটে বেড়াচ্ছেন সত্তর বছর বয়সী এক বৃদ্ধ। তাঁর পথ যেন ফুরোয় না। জীবিকার তাগিদে বৃদ্ধ বয়সেও ছুটে বেড়ান এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। তাঁর চেহারায় ক্লান্তির ছাপ, অসুস্থতায় চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। তবুও যেন থেমে নেই তিনি।
এই বৃদ্ধের নাম বেলায়েত হোসেন। তাঁর বাড়ি টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে। ৪০ বছর ধরে হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করে কোনো রকমে সংসার চলছে তাঁর। তিন ছেলে আর দুই মেয়ে রয়েছে বেলায়েতের। ছেলেরা বিয়ে করে যে যার মতো আলাদা সংসার পেতেছেন। মেয়েদেরও বিয়ে দিয়েছেন তিনি। বর্তমানে বেলায়েত আর তাঁর স্ত্রী মিলে দুজনের সংসার। তবু অভাব যেন লেগেই থাকে সংসারে। তাঁর জমিজমা নেই বললেই চলে।
সারাদিন ভূঞাপুরের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে প্রতি প্যাকেট হাওয়াই মিঠাই ১০ টাকায় বিক্রি করেন তিনি। সারাদিন যা বিক্রি করেন, তা থেকে মাত্র ১৫০-২০০ টাকা রোজগার হয় বেলায়েতের। এই আয় দিয়ে দুজনের সংসার চালানো অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে তাঁর। তবুও এই পেশায় কাটিয়ে দিয়েছেন দীর্ঘ ৪০ বছর।
এই বয়সে ক্লান্তি এলেও থেমে থাকার মানুষ নন তিনি। ভোরের সূর্য উঠতে না উঠতেই তাঁকে ভূঞাপুরের গোবিন্দাসী এলাকায় হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করতে দেখা যায়। তাঁর গলার স্বর শুনে শিশু থেকে বৃদ্ধ অনেকেই এসেছে হাওয়াই মিঠাই কিনতে।
প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া নাইম হাসান বলে, এই দাদা আমগোর এলাকায় হাওয়াই মিঠাই বেচতে আহে। তাঁর কাছ থিকা আমরা কিনা খাই। খুব স্বাদ লাগে।
স্থানীয় বাসিন্দা মসিরন বেওয়া বলেন, চাচা অনেক দিন ধরে আমাদের এলাকায় হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করেন। বয়স অনেক হলেও যেন তাঁর ক্লান্তি নেই। গ্রামে গ্রামে ঘুরে হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করেন তিনি।
বেলায়েত বলেন, “বাপু, পেটের দায়ে এই বয়সেও রোজগার করতে হয়।” কামাই করে খাই। সেই ৪০ বছর ধইরা হাওয়াই মিঠাই বেচি। এখন শরীরে পারে না, তবু করতে হয়। চিনির দাম বেশি হওয়ায় এখন লাভও কম হয়। যে কয়েকটা দিন বাচমু, এই পেশায়ই থাকমু।
বেলায়েত আরো বলেন, যা কামাই হয়, তা দিয়ে কোনোমতে খেয়ে না খেয়ে চলি। আমগোর আর ভাগ্যের পরিবর্তন হইব নাগো বাপু। সারাজীবন কষ্ট করছি, বৃদ্ধ বয়সেও কষ্ট কইরাই চইলতে হইব।