শরীয়তপুর প্রতিনিধি: মোঃ ওবায়েদুর রহমান সাইদ
শরীয়তপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার সম্পাদক ও রুদ্রকর ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নং ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) মহব্বত খান মাসুদ মেম্বার কর্তৃক বুড়িরহাট বাজারের ব্যবসায়ী নাঈম সরকারের ওপর হামলা ও তার দোকান ভাঙচুর এবং লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাতে এ হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী ও বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, গত বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪) শরীয়তপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার সম্পাদক ও রুদ্রকর ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নং ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) মহব্বত খান মাসুদ মেম্বার বুড়িরহাট বাজারের চার ব্যবসায়ীকে মুঠোফোনে কল দিয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) কল দিবে এবং তাদের কথা শুনতে বলেন। পরে ওই চার ব্যবসায়ীর মধ্যে দুই ব্যবসায়ী প্রতারকচক্র বুঝতে পারলেও এক ব্যবসায়ী ৫০ হাজার টাকা দেয় ওই প্রতারকচক্রকে। পরে বিষয়টা নিয়ে পুরো এলাকায় জানাজানি হলে মাসুদ মেম্বার বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে না বলেন।
এ বিষয়ে বাজারের ব্যবসায়ী নাঈম সরকার প্রতিবাদ করলে তার ওপর মাসুদ মেম্বার দলবল নিয়ে হামলা করে। এসময় দোকানে থাকা মোবাইল ফোন, নগদ টাকা নিয়ে যায় এবং দোকান ভাঙচুর করে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় নাঈম সরকার শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এঘটনায় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি অভিযোগ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ব্যবসায়ীর ওপর হামলার ঘটনায় মামলার প্রস্তুুতি চলছে।
এর আগে গত উপজেলা নির্বাচনের সময় চেয়ারম্যান প্রার্থী শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান আকন্দ উজ্জ্বলের পক্ষে কাজ না করায় মাসুদ মেম্বারের নেতৃত্বে বাজারের অনেক ব্যবসায়ীর দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
এব্যাপারে ভুক্তভোগী নাঈম সরকার বলেন, বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ীর থেকে মাসুদ মেম্বার ধোকা নিয়ে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়েছে। আমি তাঁর প্রতিবাদ করায় মাসুদ মেম্বারের ১০/১২ জন আমার দোকানে এসে আমার ওপর হামলা করে আমাকে মারধর করে এবং দোকানঘর ভাঙচুর করে ও দোকানে থাকা ৫ লাখ ১১ হাজার টাকা নিয়ে যায়। এরআগেও নির্বাচনের সময় আমার দোকান বন্ধ করে দিয়েছিল।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী তাপস কুন্ড বলেন, মেম্বার গত বুধবার আমাকে ফোন করে বলেন ইউএনও সাহেব ফোন করবে আপনি রিসিভ করবেন। এর একদিন পর ইউএনও পরিচয়ে আমার ফোন করে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে বিকাশের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা নেয়।
ব্যবসায়ী রতন দে বলেন, মাসুদ মেম্বার গত বুধবার আমাকে ফোন করে বলেন ইউএনও সাহেব ফোন করবে আপনি রিসিভ করবেন। এর একদিন পর ইউএনও পরিচয়ে আমার ফোন করে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রথমে ৬০ হাজার, পরে ৪০ হাজার, এরপর ২০ হাজার। সর্বশেষ ১০ হাজার টাকা চায়। আমি অপারগতা প্রকাশ করলে আমাকে নানা ধরনের হুমকি দেয়।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত রুদ্রকর ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নং ওয়ার্ডের সদস্য মহব্বত খান মাসুদ বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের কম্পিউটার অপারেটর জয়ন্ত আমাকে ফোন দিয়ে বলে ইউএনও স্যার আপনাকে ফোন দিবে। তখন একটি নাম্বার থেকে ফোন করে আমাকে ইউএনও পরিচয় বুড়িরহাট বাজারের মিস্টি দোকান ও স মিলের বিষয়ে জানতে চায় এবং মোবাইল নম্বর নেয়। পরে চার ব্যবসায়ীর মাঝে একজনের থেকে ৫০ হাজার টাকা নেয় বলে পরে জানতে পারি। আর বিকাশ ব্যবসায়ী আমার বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়ায় এই অভিযোগে তাকে আমি জিজ্ঞেস করেছি। এসময় পোলাপান ওকে হালকা দিছে।
এ ব্যাপারে পালং মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, বিষয়টি শুনেছি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ ব্যাপারে শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাইনউদ্দিন বলেন, আমি এ ধরনের একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।