বাংলাদেশ ০৩:২৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :

সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,, সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,,০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০, ০১৭১২-৪৪৬৩০৬,০১৭১১-০০৬২১৪ সম্পাদক

     
ব্রেকিং নিউজ ::
নিষিদ্ধ Buprenorphine Injection সহ ০১ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল ও নিষিদ্ধ ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেটের বিশাল চালানসহ ০১ নারী মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। রাঙ্গাবালীতে স্লুইজগেট দখল নিতে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ১০ ঠাকুরগাঁওয়ে পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মানববন্ধন। নরসিংদীতে পিকআপ ও মোটরসাইকেল সংঘর্ষে দুইজনের মৃত্যু বদলগাছীতে জাতীয় কন্যা দিবস পালিত। শহীদ কাইয়ুমের পরিবারের পাশে কুবি শিক্ষক সমিতি সলঙ্গায় বৃষ্টির অজুহাতে বাড়ছে সকল সবজির দাম ইবি ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সভাপতি সালাউদ্দিন, সম্পাদক গালিব দৌলতপুরে এক ইউপি চেয়ারম্যানকে পরিষদে থাকাবস্থায় গুলি করে হত্যা পবিস,অভিন্ন সার্ভিস কোড চালু, চাকুরী নিয়মিতকরণের দাবি পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শরীয়তপুরে কর্মচারীদের হয়রানি ও চাকুরি নিয়মিত করণের দাবিতে পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মানববন্ধন। হরিপুর হাজী সুরুজ মিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে বানবাসিদের জন্য উপহার বিতরণ শিক্ষার সকল স্তরে ইসলাম শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবিতে রাবিতে মানববন্ধন কচুয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ন আহবায়ক মোঃ রিয়াজ নকিব এর উপর হামলা

আল্লামা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যার বিচার এবং তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনী

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১০:৫৩:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • ১৬৭৩ বার পড়া হয়েছে

আল্লামা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যার বিচার এবং তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনী

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির।
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের  প্রেসিডিয়াম সদস্য ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত বাংলাদেশ এর আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মিডিয়া জগতে সুন্নীয়তের পক্ষে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ব্যক্তিত্ব  শহিদে মিল্লাত আল্লামা  নুরুল ইসলাম ফারুকী (রাঃ) কে এদেশের বাতিল অপশক্তি, ওহাবী জঙ্গি গোষ্টি অত্যন্ত নির্মমভাবে জবাই করে হত্যা করে । ২০১৪ সালের ২৭ আগষ্ট এ হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়।
তারপর থেকে দেশের  শান্তিপ্রিয় সুন্নিজনতা আন্দোলন করে আসছে শহিদ আল্লামা নুরুল ইসলাম ফারুকী (রা:) এর হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে দীর্ঘ ৯ বছর। ২৫,২৬ আগষ্ট ও আজ ২৭ আগষ্ট সুন্নি- সূফীধারার দেশ বিদেশে অসংখ্য জায়গায় সভা- সমাবেশ, মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভা এবং দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
তৎকালীন ছাত্রসেনার সাহসী নেতৃত্বে সাংবাদিক সম্মেলন করে দেশব্যাপী হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে, যা বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, যুবসেনা, ছাত্রসেনার নেতা-কর্মী সহ সুন্নী জনতার স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহনে নজিরবিহীন ভাংচুরহীন  হরতাল পালন করা হয়। যা  এদেশের ইতিহাসে  বিরল হয়ে থাকবে।
এভাবে ২৭ আগষ্ট উপলক্ষে ফারুকী দিবস পালিত হয়ে আসছে। ২০১৫ সালে শান্তিপূর্ণ প্রতিকি অবরোধ থমকে দাঁড়াও দেশবাসী ও কাফন মিছিল, লালদিঘীতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ছাত্রসমাবেশ, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার সাড়া জাগানো টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া জঙ্গিবাদ বিরোধী রোড মার্চ কর্মসূচি, ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকা বিভাগীয় ছাত্রসমাবেশ ১৬ ও লাখো কন্ঠে ইয়া নবী সালাম আলাইকা সহ প্রতিটি বিভাগে কর্মসূচি পালন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রালয় ঘেরাও, গণ স্বাক্ষর কর্মসূচি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও।
এছাড়া  প্রতিবছর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারক লিপি পেশ, অবস্হান কর্মসূচি, বিক্ষোভ, মানববন্ধন, কালো পতাকা মিছিল সহ কোন না কোন কর্মসূচি আওতাধীন জেলা উপজেলা  ইউনিয়ন ইউনিট পর্যায়ে অব্যাহত আছে। আজকের এই দিনে এই বরেণ্য আলেম, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও সুন্নী মুসলমানদের প্রিয় শহীদ আল্লামা নুরুল ইসলাম ফারুকী রা: এর হত্যাকান্ডে জড়িত আসামিদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানিয়ে তার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরার চেষ্টা করছি:-
জন্ম:
শহীদ আল্লামা নুরুল ইসলাম ফারুকী ২৪ নভেম্বর ১৯৫৯ সালে পঞ্চগড় জেলার বড়শশী ইউনিয়নের নাউতারী নবাবগঞ্জ গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা জামসেদ আলী ছিলেন একজন গুনি আলেম। তিনি এমন একজন সুন্নিয়াতের বীর সৈনিক ছিলেন। যিনি লাখো কোটি সুন্নি মুসলমানদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন।
আল্লামা নুরুল ইসলাম ফারুকী (রা:) সারা দেশে ওয়াজ মাহফিল করতেন। সুন্নিয়াতের পক্ষে যুক্তিযুক্ত দলিল উপস্থাপন করতেন। তার মতো সাহসী কথা বলার মতো আলেম সুন্নিদের মধ্যে খুবই কম। আল্লামা নুরুল ইসলাম ফারুকী (রা:) মানুষের চোখে আঙ্গুল দিয়ে সত্য-মিথ্যা দেখিয়ে দিয়ে ছিলেন। তিনি জনসম্মুখে ইয়াজিদি ইসলাম ও হোসাইনি ইসলামের পরিচয় তুলে ধরতেন। এজন্যই এজিদের অনুসারীরা তাঁকে দেখতে পারত না। তিনি মাহফিলে একটা কথা বলতেন, ইসলাম দু’ভাগে বিভক্ত- একটা হোসাইনি ইসলাম আরেকটা ইয়াজিদি ইসলাম। তিনি দুই মেয়ে ও চার ছেলেসহ অসংখ্য ভক্তবৃন্দ রেখে যান।
শিক্ষাজীবন:
শহীদ আল্লামা  নুরুল ইসলাম ফারুকী তাঁর নিজ গ্রামে প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অর্জন করেন। ১৯৭৫ সালে নীলফামারী জেলার ডোমার থানার অন্তর্গত চিলাহাটি জামিউল উলুম সিনিয়র মাদরাসা থেকে দাখিল পরবর্তীতে একই মাদরাসা থেকে আলিম পাস করেন। ১৯৭৯ সালে প্রাচীনতম ঐতিহাসিক ছারছীনা দারুসসুন্নাত কামিল মাদরাসা থেকে আলিম ও কামিল (হাদিস বিভাগ) ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮১ সালে নীলফামারী সরকারি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে জগন্নাথ কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে স্নাতক করেন। তাঁর জ্ঞান ও মেধার প্রখরতা এমন ছিল যে তিনি ছাত্র জীবন থেকে লেখা-লেখি, বক্তৃতা এবং কোরআন তেলাওয়াতে প্রথম স্থান অধিকার করতেন।
দায়িত্ব পালন:
তিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি প্রথমে পুরান ঢাকার রায় সাহেবের বাজার জামে মসজিদের খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার কিছুদিন পর ঢাকা কেরানীগঞ্জের নূরানীয়া চিশতীয়া আলীয়া মাদরাসার প্রধান হিসেবে যোগদান করেন। এছাড়াও তিনি ১৯৮৯ সালে প্রথম হজ গমনের উদ্দেশে মক্কায় যান। সে বছর জেদ্দা বিমানবন্দর মসজিদের ইমামের দায়িত্ব পালনের সুযোগ পান।
শহীদ নুরুল ইসলাম ফারুকী মক্কা মোয়াজ্জামায় আল্লামা সায়েদ মোহাম্মদ মালিকি আলাদি (রা:) রওজায় ১০ বছর দায়িত্ব পালন করেন। কিছুদিন সেখানে কাটিয়ে আবার ঢাকায় ফিরে আসেন। এসময় ঢাকাসহ বিভিন্ন মসজিদে ৩৩ বছর ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করেন। আবার ছারছীনা পীর আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ (রা:) মাজারে খেদমত করেন।
সর্বশেষ জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত খাজা হযরত শরফুদ্দিন চিশতি (রা:) এর মাজারে খাদেম ও সুপ্রিমকোর্ট জামে মসজিদের খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জানা যায়, মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী ইসলামী মিডিয়া জনকল্যাণ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ছিলেন। পূর্ব রাজাবাজার জামে মসজিদের সেক্রেটারি দায়িত্ব পালন করেন এবং মেঘনা ট্রাভেলস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছিলেন।
জনপ্রিয় মিডিয়া  ব্যক্তিত্ব:
চ্যানেল আইয়ের ইসলামিক অনুষ্ঠান ‘কাফেলা ও শান্তির পথ’র অনুষ্ঠানের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশসহ বাংলা ভাষা-ভাষী মানুষের নিকট বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেন।  অনুষ্ঠান ২টির জন্য তিনি মুসলিম বিশ্বের অনেক দেশে ভ্রমণ করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন আলীয়া মাদরাসায় ১৫ বছর শিক্ষকতা, রেডিও, টেলিভিশনে ২৫ বছর ওয়াজ নসিহত ও বিভিন্ন ইসলামীক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন।
সফর:
তিনি কাফেলা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বহু দেশ ভ্রমন করেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দেশগুলো হচ্ছে- আমেরিকা, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, ভারত, শ্রীলঙ্কা, জর্ডান, তুরস্ক, ইতালি, ইরান, মিশর ইত্যাদি।
প্রকাশনা:
তিনি কয়েকটি বই লিখেছেন। বইগুলো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বায়েদে সুফিবাদ ভিত্তিক। সর্বশেষে ‘মারেফুল হারামাইন’ বইটি লিখেছেন। বইগুলোতে ইসলামের স্থাপত্য বা অবিক্রিত রূপগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরা হয়েছে।
ওফাত:
২০১৪ সালের ২৭ আগস্ট রাতে রাজধানীর ১৭৪, পূর্ব রাজাবাজারের নিজ বাসায় দুর্বৃত্তর পরিচয়ে ইসলামী চরমপন্থিরা তাকে গলাকেটে হত্যা করে।
তাঁর ছেলে আহমেদ রেজা ফারুকী বলেন, রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁর বড় ভাই ফয়সাল দরজা খোলা পেয়ে বাসায় ঢুকে প্রথমে বসার ঘরে থাকা তাঁর ভাই মারুফের বাঁধন খুলে দেন। পরে খাবার ঘরে গিয়ে বাবাকে গলা কাটা ও নিথর অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। খুবই নৃশ: স্যভাবে হত্যা করে ঘাতকেরা। যা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। আল্লাহ্ তার শাহাদাতকে কবুল করুন। (আমিন)
তাঁর নামাযে জানা যায় লক্ষ লক্ষ মানুষ অংশ গ্রহণ করে। পরে তাকে তাঁর নিজে গ্রামে (পঞ্চগড়) বাবা ও মার পাশে শায়িত করা হয়। প্রতিদিন তাঁর মাজার জিয়ারত করার জন্য অনেক মানুষ তার সমাধীস্থলে উপস্থিত হয়। প্রতি বৎসর তাঁর ওফাত বার্ষিকী সারা দেশে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের  অনুসারী বাংলাদেশ ইসলামী ফন্ট,বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনাসহ বিভিন্ন   ইসলামী সংগঠন পালন করে থাকে। আজ  দীর্ঘ ৯ বছর পরও এদেশের লক্ষ লক্ষ সুন্নি সূফীধারার মানুষ শহীদ আল্লামা নুরুল ইসলাম ফারুকী রা: এর নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে মাঠে ময়দানে শান্তিপূর্ণ সভা সমাবেশ করে আসছে।আশাহত হৃদয়ে আর মহান আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা রেখে আস্থার সংকট নিরসনে সরকার ও প্রশাসনের সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সহিত এই হত্যাকাণ্ডের বিচার আশা করছে লক্ষ্য কোটি সুন্নি জনতা।।
গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির, সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা ও শূরা সদস্য – বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও চেয়ারম্যান, গাউছিয়া ইসলামিক মিশন, কুমিল্লা।০১৭১৮-২২৮৪৪৬

নিষিদ্ধ Buprenorphine Injection সহ ০১ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব।

আল্লামা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যার বিচার এবং তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনী

আপডেট সময় ১০:৫৩:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির।
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের  প্রেসিডিয়াম সদস্য ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত বাংলাদেশ এর আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মিডিয়া জগতে সুন্নীয়তের পক্ষে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ব্যক্তিত্ব  শহিদে মিল্লাত আল্লামা  নুরুল ইসলাম ফারুকী (রাঃ) কে এদেশের বাতিল অপশক্তি, ওহাবী জঙ্গি গোষ্টি অত্যন্ত নির্মমভাবে জবাই করে হত্যা করে । ২০১৪ সালের ২৭ আগষ্ট এ হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়।
তারপর থেকে দেশের  শান্তিপ্রিয় সুন্নিজনতা আন্দোলন করে আসছে শহিদ আল্লামা নুরুল ইসলাম ফারুকী (রা:) এর হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে দীর্ঘ ৯ বছর। ২৫,২৬ আগষ্ট ও আজ ২৭ আগষ্ট সুন্নি- সূফীধারার দেশ বিদেশে অসংখ্য জায়গায় সভা- সমাবেশ, মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভা এবং দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
তৎকালীন ছাত্রসেনার সাহসী নেতৃত্বে সাংবাদিক সম্মেলন করে দেশব্যাপী হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে, যা বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, যুবসেনা, ছাত্রসেনার নেতা-কর্মী সহ সুন্নী জনতার স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহনে নজিরবিহীন ভাংচুরহীন  হরতাল পালন করা হয়। যা  এদেশের ইতিহাসে  বিরল হয়ে থাকবে।
এভাবে ২৭ আগষ্ট উপলক্ষে ফারুকী দিবস পালিত হয়ে আসছে। ২০১৫ সালে শান্তিপূর্ণ প্রতিকি অবরোধ থমকে দাঁড়াও দেশবাসী ও কাফন মিছিল, লালদিঘীতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ছাত্রসমাবেশ, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার সাড়া জাগানো টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া জঙ্গিবাদ বিরোধী রোড মার্চ কর্মসূচি, ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকা বিভাগীয় ছাত্রসমাবেশ ১৬ ও লাখো কন্ঠে ইয়া নবী সালাম আলাইকা সহ প্রতিটি বিভাগে কর্মসূচি পালন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রালয় ঘেরাও, গণ স্বাক্ষর কর্মসূচি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও।
এছাড়া  প্রতিবছর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারক লিপি পেশ, অবস্হান কর্মসূচি, বিক্ষোভ, মানববন্ধন, কালো পতাকা মিছিল সহ কোন না কোন কর্মসূচি আওতাধীন জেলা উপজেলা  ইউনিয়ন ইউনিট পর্যায়ে অব্যাহত আছে। আজকের এই দিনে এই বরেণ্য আলেম, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও সুন্নী মুসলমানদের প্রিয় শহীদ আল্লামা নুরুল ইসলাম ফারুকী রা: এর হত্যাকান্ডে জড়িত আসামিদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানিয়ে তার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরার চেষ্টা করছি:-
জন্ম:
শহীদ আল্লামা নুরুল ইসলাম ফারুকী ২৪ নভেম্বর ১৯৫৯ সালে পঞ্চগড় জেলার বড়শশী ইউনিয়নের নাউতারী নবাবগঞ্জ গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা জামসেদ আলী ছিলেন একজন গুনি আলেম। তিনি এমন একজন সুন্নিয়াতের বীর সৈনিক ছিলেন। যিনি লাখো কোটি সুন্নি মুসলমানদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন।
আল্লামা নুরুল ইসলাম ফারুকী (রা:) সারা দেশে ওয়াজ মাহফিল করতেন। সুন্নিয়াতের পক্ষে যুক্তিযুক্ত দলিল উপস্থাপন করতেন। তার মতো সাহসী কথা বলার মতো আলেম সুন্নিদের মধ্যে খুবই কম। আল্লামা নুরুল ইসলাম ফারুকী (রা:) মানুষের চোখে আঙ্গুল দিয়ে সত্য-মিথ্যা দেখিয়ে দিয়ে ছিলেন। তিনি জনসম্মুখে ইয়াজিদি ইসলাম ও হোসাইনি ইসলামের পরিচয় তুলে ধরতেন। এজন্যই এজিদের অনুসারীরা তাঁকে দেখতে পারত না। তিনি মাহফিলে একটা কথা বলতেন, ইসলাম দু’ভাগে বিভক্ত- একটা হোসাইনি ইসলাম আরেকটা ইয়াজিদি ইসলাম। তিনি দুই মেয়ে ও চার ছেলেসহ অসংখ্য ভক্তবৃন্দ রেখে যান।
শিক্ষাজীবন:
শহীদ আল্লামা  নুরুল ইসলাম ফারুকী তাঁর নিজ গ্রামে প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অর্জন করেন। ১৯৭৫ সালে নীলফামারী জেলার ডোমার থানার অন্তর্গত চিলাহাটি জামিউল উলুম সিনিয়র মাদরাসা থেকে দাখিল পরবর্তীতে একই মাদরাসা থেকে আলিম পাস করেন। ১৯৭৯ সালে প্রাচীনতম ঐতিহাসিক ছারছীনা দারুসসুন্নাত কামিল মাদরাসা থেকে আলিম ও কামিল (হাদিস বিভাগ) ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮১ সালে নীলফামারী সরকারি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে জগন্নাথ কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে স্নাতক করেন। তাঁর জ্ঞান ও মেধার প্রখরতা এমন ছিল যে তিনি ছাত্র জীবন থেকে লেখা-লেখি, বক্তৃতা এবং কোরআন তেলাওয়াতে প্রথম স্থান অধিকার করতেন।
দায়িত্ব পালন:
তিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি প্রথমে পুরান ঢাকার রায় সাহেবের বাজার জামে মসজিদের খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার কিছুদিন পর ঢাকা কেরানীগঞ্জের নূরানীয়া চিশতীয়া আলীয়া মাদরাসার প্রধান হিসেবে যোগদান করেন। এছাড়াও তিনি ১৯৮৯ সালে প্রথম হজ গমনের উদ্দেশে মক্কায় যান। সে বছর জেদ্দা বিমানবন্দর মসজিদের ইমামের দায়িত্ব পালনের সুযোগ পান।
শহীদ নুরুল ইসলাম ফারুকী মক্কা মোয়াজ্জামায় আল্লামা সায়েদ মোহাম্মদ মালিকি আলাদি (রা:) রওজায় ১০ বছর দায়িত্ব পালন করেন। কিছুদিন সেখানে কাটিয়ে আবার ঢাকায় ফিরে আসেন। এসময় ঢাকাসহ বিভিন্ন মসজিদে ৩৩ বছর ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করেন। আবার ছারছীনা পীর আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ (রা:) মাজারে খেদমত করেন।
সর্বশেষ জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত খাজা হযরত শরফুদ্দিন চিশতি (রা:) এর মাজারে খাদেম ও সুপ্রিমকোর্ট জামে মসজিদের খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জানা যায়, মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী ইসলামী মিডিয়া জনকল্যাণ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ছিলেন। পূর্ব রাজাবাজার জামে মসজিদের সেক্রেটারি দায়িত্ব পালন করেন এবং মেঘনা ট্রাভেলস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছিলেন।
জনপ্রিয় মিডিয়া  ব্যক্তিত্ব:
চ্যানেল আইয়ের ইসলামিক অনুষ্ঠান ‘কাফেলা ও শান্তির পথ’র অনুষ্ঠানের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশসহ বাংলা ভাষা-ভাষী মানুষের নিকট বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেন।  অনুষ্ঠান ২টির জন্য তিনি মুসলিম বিশ্বের অনেক দেশে ভ্রমণ করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন আলীয়া মাদরাসায় ১৫ বছর শিক্ষকতা, রেডিও, টেলিভিশনে ২৫ বছর ওয়াজ নসিহত ও বিভিন্ন ইসলামীক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন।
সফর:
তিনি কাফেলা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বহু দেশ ভ্রমন করেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দেশগুলো হচ্ছে- আমেরিকা, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, ভারত, শ্রীলঙ্কা, জর্ডান, তুরস্ক, ইতালি, ইরান, মিশর ইত্যাদি।
প্রকাশনা:
তিনি কয়েকটি বই লিখেছেন। বইগুলো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বায়েদে সুফিবাদ ভিত্তিক। সর্বশেষে ‘মারেফুল হারামাইন’ বইটি লিখেছেন। বইগুলোতে ইসলামের স্থাপত্য বা অবিক্রিত রূপগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরা হয়েছে।
ওফাত:
২০১৪ সালের ২৭ আগস্ট রাতে রাজধানীর ১৭৪, পূর্ব রাজাবাজারের নিজ বাসায় দুর্বৃত্তর পরিচয়ে ইসলামী চরমপন্থিরা তাকে গলাকেটে হত্যা করে।
তাঁর ছেলে আহমেদ রেজা ফারুকী বলেন, রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁর বড় ভাই ফয়সাল দরজা খোলা পেয়ে বাসায় ঢুকে প্রথমে বসার ঘরে থাকা তাঁর ভাই মারুফের বাঁধন খুলে দেন। পরে খাবার ঘরে গিয়ে বাবাকে গলা কাটা ও নিথর অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। খুবই নৃশ: স্যভাবে হত্যা করে ঘাতকেরা। যা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। আল্লাহ্ তার শাহাদাতকে কবুল করুন। (আমিন)
তাঁর নামাযে জানা যায় লক্ষ লক্ষ মানুষ অংশ গ্রহণ করে। পরে তাকে তাঁর নিজে গ্রামে (পঞ্চগড়) বাবা ও মার পাশে শায়িত করা হয়। প্রতিদিন তাঁর মাজার জিয়ারত করার জন্য অনেক মানুষ তার সমাধীস্থলে উপস্থিত হয়। প্রতি বৎসর তাঁর ওফাত বার্ষিকী সারা দেশে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের  অনুসারী বাংলাদেশ ইসলামী ফন্ট,বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনাসহ বিভিন্ন   ইসলামী সংগঠন পালন করে থাকে। আজ  দীর্ঘ ৯ বছর পরও এদেশের লক্ষ লক্ষ সুন্নি সূফীধারার মানুষ শহীদ আল্লামা নুরুল ইসলাম ফারুকী রা: এর নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে মাঠে ময়দানে শান্তিপূর্ণ সভা সমাবেশ করে আসছে।আশাহত হৃদয়ে আর মহান আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা রেখে আস্থার সংকট নিরসনে সরকার ও প্রশাসনের সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সহিত এই হত্যাকাণ্ডের বিচার আশা করছে লক্ষ্য কোটি সুন্নি জনতা।।
গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির, সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা ও শূরা সদস্য – বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও চেয়ারম্যান, গাউছিয়া ইসলামিক মিশন, কুমিল্লা।০১৭১৮-২২৮৪৪৬