মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) প্রতিনিধিঃ
পটুয়াখালীতে গত বছরের নভেম্বরে গঠিত হয় জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি। জেলা কমিটির গঠনের পরে উপজেলা ছাত্রলীগকে গতিশীল করার লক্ষ্যে বিভিন্ন ইউনিটের নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয় জেলা ছাত্রলীগ। এরই ধারাবাহিকতায় গত বিশ সেপ্টেম্বর মির্জাগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করে ৭ দিনের মধ্যে নতুন কমিটির সভাপতি-সম্পাদক হতে আগ্রহীদের কাছ থেকে জীবন বৃত্তান্ত চাওয়া হয়।
এতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বার বার নৌকার বিরোধিতাকারী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থক মোঃ রাকিব মৃধা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হতে চাওয়ায় সমালোচনা ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মাঝে চাপা ক্ষোভের ঝড় উঠেছে। সেই ক্ষোভ যেকোনো মুহূর্তে বিস্ফোরণে রুপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করেন আওয়ামী পরিবারের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীদের বিশেষ একটি মহল।
অপরদিকে একটি প্রভাবশালী মহল দলের জলাঞ্জলি দিয়ে হলেও নিজ স্বার্থের তাগিদে তাকে সভাপতি বানাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন অনেকেই।
জানা যায়, সভাপতি প্রার্থী হওয়া রাকিব মৃধা উপজেলা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পরেই তিনি এবং এক সময়ের ছাত্রদল করা তার বড় ভাই ও ছোট ভাই পদের নাম ভাঙিয়ে জড়িয়ে পড়েন নানা অপকর্মে। যাহার হাজারও নজির রয়েছে মির্জাগঞ্জ এর এই ছোট জনপদে।
এ বিষয়ে সাধারণ নেতাকর্মীদের বক্তব্য, আপনারা গোপনে তদন্ত করলেই সবকিছুর প্রমান মিলবে। যার একাধিক রিপোর্ট ও প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এছাড়াও যেখানে নৌকার প্রার্থী সেখানেই তিনি করেছেন বিরোধিতা মোটা অংকের বিনিময়ে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে হয়েছিলেন বহিষ্কার এবং কমিটি হয়েছিল স্থগিত।
কিন্তু উপজেলার বিশেষ একটা মহলের প্রভাবে স্ব-দর্পে পরিচালনা করেছে কার্যক্রম। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রধান সিপাহসালার ভুমিকায় নৌকার প্রার্থী ও তার সমর্থকদের উপর চালিয়েছে নানা দাঙ্গা হাঙ্গামা।
এ ব্যাপারে তার কমিটির সহ-সভাপতি ও সহকারি মোঃ আনোয়ার হোসেন জোমাদ্দার এসব ঘটনা স্বীকার করে বলেন, যা কিছু করেছি দলের পরোয়া না করে কোরাম ভিত্তিক রাজনীতির স্বার্থেই স্থানীয় নির্বাচনে করছি। ভুল করেছিলাম। কিন্তু দলের স্বার্থেও অটল ছিলাম।
এছাড়াও উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অধিকাংশ ইউনিয়ন নির্বাচনেই টাকার বিনিময়ে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। দিয়েছেন মোটরসাইকেল শোডাউন।
এ ব্যপারে ১ নং মাধবখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান লাবলু আক্ষেপ করে বলেন, তার কাজই হলো নৌকার বিরোধিতা করা। তার মন মত নিজস্ব কেউ নৌকা না পেলে জননেত্রী শেখ হাসিনা এমনকি বঙ্গবন্ধু নিজে দিলেও কাজ হবে না।
মজিদ বারিয়া ইউনিয়নে অবস্থান নিয়েছেন বিএনপি ও রাজাকার পরিবারের সন্তান শানু মোল্লার পক্ষে। একাধিক মঞ্চে ওঠে তার পক্ষে চেয়েছেন ভোটও। করেছে দাঙ্গা-হাঙ্গামা।
এ বিষয়ে মজিদবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি গোলাম সারোয়ার কিচলু বলেন, আমার বিরোধী প্রার্থীর বাবা ছিল শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ও রাজাকার, তার পুত্র শানু মোল্লার পক্ষে উপজেলা চেয়ারম্যান আবুবকর ও তার অনুসারীরা বিশেষ করে রাকিব মৃধাসহ আরও কয়েকজন যা করেছে তা বলে বুঝাতে পারবোনা আমার এলাকার সাধারণ জনগণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে প্রশ্ন করেন।
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে যেখানেই নৌকা সেখানেই বিরোধিতা এই শ্লোগানে তিনি কাজ করেন বলে জানান অনেক পদ প্রত্যাশী।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী আতাহার উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ওর কাজই নৌকার বিরোধিতা করা। নৌকার প্রার্থী যদি হয় জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমান এমপি শাহজাহান মিয়ার কর্মী অথবা আবুবকর আর আফজাল বিরোধী তাহলে তো কথাই নাই। আমার নির্বাচনের সময় দাঙ্গা-হাঙ্গামা তো করছেই, সেই জের ধরে ফাঁক পেলে এখনও করে। অতএব এই ছেলে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হলে দলের এবং নেতাকর্মীদের জম ক্ষতি।
এবিষয়ে সভাপতি প্রার্থী রাকিব মৃধাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও ফোন কেটে দেন এবং রিসিভ করেন না।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান আরিফ বলেন, যাকেই কমিটি দিবো তার বিষয়ে সবকিছু যাচাই করে দিবো। সভাপতি সাংবাদিককে বলেন যখন এগুলো করছে তখন কেন আওয়ামী লীগ নেতারা বলেনি। তখন জেলায় কমিটি ছিলোনা বললে তিনি ফোন কেটে দেন।