রংপুর প্রতিনিধিঃ
রংপুরের মিঠাপুকুরে পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে এক ইউপি সদস্যের সাজানো মিথ্যা অভিযোগে ভুক্তভোগীসহ চারজনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায় মিঠাপুকুর থানা পুলিশ। অন্যদিকে একই ঘটনায় নতুন করে আরেকটি অভিযোগ দায়ের করে ভুক্তভোগীদের হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে ঐ ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী এবং স্হানীয়দের দাবি, মিঠাপুকুর উপজেলার ০৭ নং লতিবপুর ইউনিয়নের নিঝাল গ্রামের মোঃ হারেছ উদ্দিনের পুত্র মোঃ শাহিন আহম্মেদের রংপুর মর্ডান মোড়ে অবস্থিত ফিল্যান্সিং অফিসে একই এলাকার মৃত- মিজানুর রহমানের পুত্র আশিকুর রহমান ম্যানেজার পদে কর্মরত অবস্থায় (তেইশ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা আত্মসাৎ করে আত্মগোপনে চলে যান। পরে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিশ মিমাংসা হলে আশিকুর রহমান (পনেরো লক্ষ টাকা) স্বীকার করে সমঝোতার ভিত্তিতে অবশিষ্ট (তিনলক্ষ একত্রিত হাজার) টাকা শাহিন আহম্মেদকে ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ইং তারিখে দেওয়ার জন্য অঙ্গিকার করেন। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও আশিকুর রহমান তালবাহানা করে আসছিলেন।
ঘটনার দিন, ১৫ মার্চ ২০২৩ ইং শাহিন আহম্মেদ পাওনা টাকা চাইতে আশিকুর রহমানের বাড়িতে গেলে আশিকুর রহমান শাহিন আহম্মেদকে হুমকি ধামকি প্রদান করে টাকা দিবেনা মর্মে হুমকি দেয়। শাহিন আহম্মেদ এ বিষয়ে মিঠাপুকুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন এবং অভিযুক্ত আশিকুর রহমান টাকা দিতে চেয়ে পূনরায় সময় নেয়।
নির্দিষ্ট সময়ে পাওনা টাকা না পেয়ে শাহিন আহম্মেদ, আশিকুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন যে, আশিকুর রহমান উপজেলার রানীপুকুর বাজারে ব্যবসা পরিচালনা করছেন, সেহেতু শাহিন আহম্মেদ রানীপুকুর বাজারে গিয়ে তার আত্মীয় মোজাহিদ নামে এক ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে আশিকুর রহমানের কাছে যান। কিন্তু আশিকুর রহমান টাকা না দিয়ে রানীপুকুর বাজারের ব্যবসায়ি তার মামা আরিফ নামে এক ব্যক্তিকে ডাকেন, এবং আরিফ, মোজাহিদের কাছে তার ভাগ্নে আশিকুর রহমানের জন্য (৪৫) দিন অর্থাৎ ১০ এপ্রিল থেকে ২৫ মে পর্যন্ত সময় নেয়,কিন্তুু আরিফ ২৫ মে টাকা দিতে না পারায় তার বাবা সফিউল মেম্বার ও অন্য এক -ইউপি সদস্যসহ ৪ জুন পর্যন্ত সময় নেন এবং সফিউল মেম্বার নিজে টাকা দিবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
সোমবার (৪-জুন) আশিকুর রহমান, শাহিন আহম্মেদকে জানায়, সে তার নানা সফিউল মেম্বারকে টাকা জমা দিয়েছে, তারা যেনো তার কাছে গিয়ে টাকা নিয়ে স্টাম্প ফেরত দেয়। নির্ধারিত সময়ে শাহিন আহম্মেদ এবং তার স্বজনরা পাওনা টাকা ফেরতের উদ্দেশ্যে সফিউল মেম্বারের ছেলে আরিফের দোকানে গিয়ে সফিউল মেম্বারকে ফোন দিয়ে টাকা নিয়ে আসতে বললে ইউপি সদস্য সফিউল মেম্বার ফোনে জানায়, সে টাকা নিয়ে আসতেছে। রাত একটায় কৌশলে সে তার ছেলের দোকানে হামলা করেছে মর্মে অভিযোগ দিয়ে পুলিশ নিয়ে আসে।
পুলিশ আরিফ এবং ইউপি সদস্যের অভিযোগের পরিপেক্ষিতে শাহিন আহম্মেদ, জাহিদ হাসান, এনামুল, তুহিন নামে চার যুবককে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। পাওনা টাকা দেওয়ার বাহনায় কৌশল করে নির্দোষ ছেলেদের গ্রেফতার করায় রানীপুকুর বাজারের স্হানীয় লোকজন ইউপি সদস্য সফিউল মেম্বারের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়ে। পরে সফিউল মেম্বার স্হানীয়দের তোপের মুখে বাইকযোগে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
সারারাত আটকের পর ঐ চার যুবককে মিঠাপুকুর থানা পুলিশ কোর্টে চালান করলে তারা জামিনে বের হয়ে আসেন। কিন্তু সফিউল মেম্বার তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি থেকে মোজাহিদুল ইসলাম (মোজাহিদ) সহ কয়েকজনকে আসামি করে মিঠাপুকুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এ বিষয়ে মোজাহিদুল ইসলাম মোজাহিদ জানান, এখানে তেমন কিছুই ঘটেনি। মেম্বার জামিনদার হয়ে টাকা দিতে চেয়েছিলো, আশিকুর টাকা মেম্বারকে জমা দেওয়ায় আমরা পাওনা টাকা নিতে যাই, কিন্তু সে তার কাছে জমা টাকা আত্মসাৎ করতে কৌশলে পুলিশ ডেকে আমাদের হয়রানি করেছে এবং মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছে।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য সফিউল মেম্বার জানান, আমাকে তারা মারধর করে ফাঁকা স্টাম্পে স্বাক্ষর করে নিয়েছে। মিঠাপুকুর থানার অপারেশন (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। মামলা দায়ের করা হবে কিনা পরবর্তীতে তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। একাধিকবার চেষ্টা করেও প্রধান অভিযুক্ত আশিকুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে চারজনকে গ্রেফতার এবং মিথ্যা অভিযোগ দায়েরের ঘটনায় সফিউল মেম্বারের প্রতি অনেকে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।