মোঃ এনামুল হক ( খোকন) পাটওয়ারী চাঁদপুর জেলা– প্রতিনিধি
পিএসএল-বিপিএলসহ বিভিন্ন ক্রিকেট ম্যাচে বাজিতে হেরে জুয়ার দেনা পরিশোধ করতে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণের নারায়ণপুর বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী অমর সরকারকে (৩৫) হত্যা করে দুই কর্মচারী। বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ।
ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের আটকের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য স্বীকার করেছে নিহতের দোকান কর্মচারী জয় বিশ্বাস প্রকাশ অনিক (২২) ও হৃদয় সূত্রধর (২৩)।
জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেওয়া তথ্যমতে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে একটি বালুর স্তূপ থেকে ৪০ ভরি স্বর্ণালংকার, হত্যাকাণ্ডের সময় হাতে পরা গ্লাভস পাবলিক টয়লেট থেকে এবং ছুরি উদ্ধার হয় পাশের একটি পুকুর থেকে। গ্রেফতার দুই জন হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করায় আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, গত ২১ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) স্বর্ণ ব্যবসায়ী অমর সরকার বাড়িতে ফেরার পথে খুন হন। এ ঘটনার পর তদন্ত শুরু করি। যেহেতু তিনি প্রতিদিনই স্বর্ণালংকার এবং টাকা পয়সা বাসায় নিয়ে যেতেন সেই সূত্র ধরেই তদন্ত শুরু করি। পরে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে প্রথমে দোকান কর্মচারী অনিককে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে সে এবং তার বন্ধু হৃদয় জড়িত থাকার কথা শিকার করে। তারা আমাদেরকে জানিয়েছে, ওই ব্যবসায়ী দোকান থেকে ফেরার পথে বাড়ির ২০০ গজ দূরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার গলায় আঘাত করে। এরপর তার মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য বাম হাতের রগ কেটে দেয়। দুই ঘণ্টা পর কর্মচারী অনিক তার বাসায় গিয়ে খবর দেয় রাস্তায় দুষ্কৃতিকারীরা মেরে ফেলে রেখেছে।
এ হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, অনিক এবং হৃদয় দুই জন বন্ধু। এক সময় হৃদয়ও অমর সরকারের দোকানের কর্মচারী ছিল। তারা আইপিএল, পিএসএল, বিপিএলসহ বিভিন্ন ক্রিকেট ম্যাচে বাজি ধরতো। এতে করে তারা প্রায় আড়াই লাখ টাকা দেনা হয়ে গিয়েছিল। এই দেনা শোধের জন্য তারা পরিকল্পনা করে। যেহেতু জানতো দোকানের মালিক প্রতিদিন রাতে স্বর্ণালংকার ও টাকা নিয়ে বাড়িতে যায়। এ কারণে তারা প্রায় এক মাস আগে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করে।
পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, অমর সরকার খুন হওয়ার দিন দোকান শেষ করে তিনি তার এক আত্মীয়ের বাসায় গেলে ফিরতে কিছুটা দেরি হয়। এ সুযোগটিই বেছে নেয় তারা। পরিকল্পনা অনুযায়ী অনিক তার মালিককে নিয়ে রওনা হয়। পথিমধ্যে হৃদয় যুক্ত হয়। প্রথমে হৃদয় অমর সরকারের গলায় ছুরিকাঘাত করে। পরে তারা দুই জন মিলে তাকে ধরে হাতের রগ কাটে এবং গলায় আরও দুইটি আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন- অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) সুদীপ্ত রায়, মতলব সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার ইয়াসির আরাফাত, মতলব দক্ষিণ থানার ওসি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন মিয়া, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মফিজুল ইসলাম খান এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই হাবিবুর রহমান প্রমুখ।
এর আগে, সোমবার রাতের কোনও একসময় নারায়ণপুর বাজারের পাশে বাড়িতে যাওয়ার পথে খুন হন স্বর্ণ ব্যবসায়ী অমর সরকার।