এস.কে হিমেল, নীলফামারী প্রতিনিধিঃ
নীলফামারীর সদরের সওদাগর পাড়ার বাগান বাড়ি পার্কে বিনা টিকিটে প্রবেশের অপরাধে সিয়াম (১৫) নামের দশম শ্রেনীর এক স্কুল ছাত্রকে জোরপূর্বক গোবর ও প্রসাব মিশ্রিত পানি খাইয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে পার্কটির মালিক নবাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে। গত রবিবার (৮মে) বিকালে পার্কের ভিতরে একটি গরুর ঘরে এই পাশবিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই ছাত্রের মা বাদী হয়ে সোমবার দিবাগত রাতে নীলফামারী সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত নবাব উদ্দিন নীলফামারীর সদরের মুক্তা ফিলিং ষ্টেশনের মালিক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী।
নির্যাতিত ফারহান শাহরিয়ার সিয়াম জেলা শহরের এ আর ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের দশম শ্রেনীর ছাত্র। সে কালি বাড়ি মোড় এলাকার বাসিন্দা আখি আক্তার স্মৃতি বেগম ও শহরের ইলেকট্রনিকস ব্যবসায়ী মৃত ফরহাদ হোসেনের ছেলে।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত রবিবার বিকেলে বন্ধুদের সাথে কিছুদিন আগে উদ্বোধন হওয়া শহরের সওদাগর পাড়া এলাকার পার্ক বাগান বাড়িতে যায়। তবে টাকা না থাকায় ৬ বন্ধু ২০ টাকা করে টিকিট কেটে প্রবেশ করলেও পিছন দিক দিয়ে প্রাচীর পার হয়ে লুকিয়ে প্রবেশ করে সিয়াম। বিষয়টি জানা জানি হলে অভিযুক্ত নবাব উদ্দিন সিয়ামকে ডেকে প্রথমে মারধর করে। পরে পার্কের ভিতরে একটি গরুর রাখার ঘরে নিয়ে গিয়ে মারধর করার পর গোবর ও প্রসাব মিশ্রিত পানি জোর করে খাওয়ায়। পরে বিষয়টি বাইরে কারো কাছে বললে ইলেকট্রিক শক দিয়ে মারার হুমকি দেয়।
ভয়ে নির্যাতনের বিষয়টি কাউকে না বলে পরের দিন সিয়াম স্কুলে গেলে বন্ধুরা গোবর প্রসাব খাওয়ার বিষয়ে হাসাহাসি করলে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহননের চেস্টা করে সে। পরে অজ্ঞান হয়ে গেলে বিষয়টি জানা জানি হয়। এবং নীলফামারী সদর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নির্যাতিত স্কুল ছাত্র সিয়াম বলে, আমি আমার বন্ধুরা গেলেও আমার কাছে টাকা না থাকায় আমি পিছন দিয়ে ভিতরে যাই। বের হওয়ার আগে সবাই বের হলে আমাকে বের হতে দেয়না। প্রথমে আমাকে থাপ্পড় দেয়। আমি পা ধরে বলি চাচা আমাকে ছেড়ে দেন আমার বাবা নাই। আমি বাড়ি যাব। কিন্তু উনি আমাকে টেনে গরুর ঘরে নিয়ে যায়। গোবর ও প্রসাব মিশিয়ে খাওয়ায়। বুকে পিঠে খুব মারে। আমি বার বার পা ধরে মাফ চাই কিন্তু শুনে নাই উনি। এবং ঘটনার কথা কাউকে বললে শক ডীয়ে মারার হুমকি দেয়।
কান্নায় ভেঙে পরে আহাজারি করে সিয়ামের মা আখি আক্তার স্মৃতি জানান, স্বামী মারা যাওয়ার পর খুব কস্টে দুই সন্তান নিয়ে আছেন উনি। এমন নির্মম নির্যাতন কোন সুস্থ মানুষ কিভাবে করে। আজ যদি আমার সন্তান মারা যেত আমি কাকে নিয়ে বাচতাম।
তিনি আরো বলেন, অভিযুক্ত নবাব লোক দিয়ে নানা ভাবে হুমকি দিচ্ছেন। উনি খুব প্রভাবশালী টাকা ওয়ালা লোক বলে সাংবাদিক পুলিশ সবাইকে কিনে নিবে বলেও হুমকি দিচ্ছেন৷ আমি তো অসহায় আমার স্বামী নেই আমি কি করবো জানিনা৷ তবে আমি আমার সন্তানের নির্যাতনের বিচার চাই।
নীলফামারী সদর জেলারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আর.এম.ও) আব্দুর রহিম জানান, বর্তমানে শিশুটি সুস্থ আছেন তবে যেহেতু মারধর করা হয়েছে এবং ঘুমের ওষুধ খেয়েছে। পুরোপুরি সুস্থ হতে কয়েকদিন সময় লাগবে।
এ বিষয়ে নীলফামারী সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রউপ জানায়, এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত নবাব উদ্দিনের সাথে কথা বলতে একাধিক বার যোগাযোগ করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। মুঠো ফোনেও একাধিক বার কল করেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।