গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির।।
দান-সদকা সম্পদশালীদের ওপর দুর্বল আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশি ও অন্যান্য অভাবগ্রস্তদের জন্য আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত প্রাপ্য অধিকার। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আর আত্মীয়স্বজনকে দাও তার প্রাপ্য এবং অভাবী ও মুসাফিরকেও এবং কিছুতেই অপচয় করো না। -সূরা ইসরা: ২৬
আল্লাহতায়ালা অন্যত্র ইরশাদ করেন, তাদের (ধনীদের) সম্পদে রয়েছে প্রার্থী ও বঞ্চিতদের অধিকার। -সূরা জারিয়াত: ১৯
হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ওই ব্যক্তি মুমিন নয় যে পেটপুরে খায় অথচ তার পাশের প্রতিবেশী না খেয়ে থাকে। -আল আদাবুল মুফরাদ।
দান-সদকার গুরুত্ব ও ফজিলত
দানশীল ব্যক্তিকে বলা হয় আল্লাহর বন্ধু। দান-সদকার ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা স্বীয় ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাদের উপমা হলো- যেমন একটি শস্য বীজ, তা হতে উৎপন্ন হলো সাতটি শীষ, প্রত্যেক শীষে (উৎপন্ন হলো) শত শস্য এবং আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছে করেন বর্ধিত করে দেন, বস্তুত আল্লাহ হচ্ছেন বিপুল দাতা, মহাজ্ঞানী।’ -সূরা বাকারা: । অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান করো তবে তা ভালো, আর যদি গোপনে করো এবং অভাবীকে দাও তা তোমাদের জন্য আরও ভালো এবং এতে তিনি তোমাদের জন্য কিছু পাপ মোচন করবেন। আর তোমরা যে আমল করো আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্মক অবহিত।’ -সূরা বাকারা: ২৭১
আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, যারা নিজেদের ধন-সম্পদ রাতে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে তাদের প্রতিদান তাদের রবের নিকট রয়েছে। আর তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। -সূরা বাকারা: ২৭৪
উম্মতকে দান-সদকার প্রতি উদ্ধুদ্ধ করে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা খেজুরের সামান্য অংশ সদকা করে হলেও নিজেদের জাহান্নাম থেকে রক্ষা করো। –সহিহ বোখারি ও মুসলিম
রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণে সচেষ্ট হয়, মহান আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করে দেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের পার্থিব কষ্ট বা বিপদ দূর করে দেয়, আল্লাহ কিয়ামত দিবসে তার কষ্ট বা বিপদ দূর করে দেবেন। –বোখারি ও মুসলিম
আবার কঠিন হৃদয়ের লোকদের সতর্ক করে রাসূলের পাক (সা.) বলেন, যে মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন না। – বোখরি ও মুসলিম
রাসূলুল্লাহ সা.-এর দান-সদকা: রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দানশীল, কল্যাণকামী ও মহান হৃদয়ের অধিকারী ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন সকলের একান্ত আপনজন। রাসূলুল্লাহ (সা.) কোনোদিন কোনও সওয়ালকারীকে শূন্য হাতে ফিরিয়ে দেননি। শুধু মুসলিম নয়, অমুসলিমদের প্রতিও তার দান-অনুগ্রহ বিস্তৃত ছিল। আম্মাজান হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর দানের হাত এতোটা প্রসারিত ছিল যে, আমার মনে হয়, সকাল বেলা যদি তার কাছে ওহুদ পরিমাণ সম্পদ রাখা হয়, তবে সন্ধ্যার আগেই তিনি সব দান করে দেবেন। – বোখারি ও মুসসিম
হযরত আনাস (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর চেয়ে অধিক দয়ালু লোক দেখিনি। – মুসলিম শরীফ।
রমজানে রাসূলুল্লাহ সা.-এর দান-সদকা:
রাসূলুল্লাহ (সা.) সর্বদা দান-সদকা করতেন। মহিমান্বিত এ মাসে তার দান-সদকা অপরাপর মাসের তুলনায় বহুগুণ বেড়ে যেত। -বোখারি শরিফ।
রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, রমজান মাসের একটি নফল ইবাদত অন্য মাসের একটি ফরজ ইবাদতের সমপরিমাণ সওয়াব। এ মাসের একটি ফরজ ইবাদত অন্য মাসের সত্তরটি ফরজ ইবাদতের সমপরিমাণ সওয়াব। -ইবনে খুযাইমা
এ হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয়, রমজান মাসে কেউ নফল সদকা হিসেবে এক টাকা দান করলে সত্তর টাকা দান করার পুণ্য লাভ করবে। আর যদি ফরজ হিসেবে (যেমন- জাকাত) আদায় করে, তবে তা সত্তরটি ফরজ ইবাদতের সমপরিমাণ ফজিলতপূর্ণ হবে।
সময়ের দাবি:
আমাদের চারপাশে রয়েছেন অসংখ্য নিঃস্ব, সহায়-সম্বলহীন, অভাবী আর খেটে খাওয়া মানুষ। নিজ নিজ সাধ্যের আলোকে তাদের প্রতি দয়াপরবশ হতে হবে। অপরদিকে বৈশ্বিক এ ক্রান্তিলগ্নে নিম্নবিত্তদের মতো মধ্যবিত্তরাও চরম কষ্ট আর দুর্ভোগে সময় পার করছেন। কেউ মুখ খুলে কারও কাছে বলেন, আবার কেউ লজ্জাবোধ করে তাদের দূরাবস্থার কথা কারও কাছে প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকেন। বিত্তবানরা অসহায়দের প্রতি সাহায্য-সহযোগিতার পাশাপাশি মধ্যবিত্ত অভাবগ্রস্থদের প্রতি কল্যাণের হাত প্রসারিত করাও এখন সময়ের দাবি।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বর্ণনা করেন, জনৈক লোক রাসূল (সা.) কে প্রশ্ন করল, ইসলামের উত্তম কাজ কোনটি? রাসূল (সা.) বললেন, কারও মুখে আহার তুলে দেওয়া…। – বোখারি শরীফ
সহানুভূতি ও পুণ্য লাভের উর্বর এ মওসুমে আমাদের শারীরিক ইবাদতের পাশাপাশি সাধ্যানুযায়ী দান-সদকায়ও অধিক মনোযোগী হতে হবে। আর তা আমাদের জন্য অনেক কল্যাণকরও বটে।
যেমন, দান-সদকা বিপদ-বিপর্যয় দূরীভূত করে, জীবন বরকতময় করে। গোনাহ মিটিয়ে দেয়, ক্ষমা লাভের মাধ্যম হয়। আল্লাহর ক্রোধ থেকে বাঁচিয়ে রাখে। অসুখ-বিসুখ থেকে সুস্থতা পাওয়া যায়। দোয়া কবুলে সহায়ক হয়। জীবিকায় বরকত লাভ হয়। ইবাদত ও সম্পদের ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর হয়, পবিত্রতা ও সমৃদ্ধি অর্জন হয়। সর্বোপরি আল্লাহর সাহায্য ও ভালোবাসা লাভ হয় এবং ইমানের সাথে মৃত্যু হয়। সুতরাং মাহে রমজানের এসময়ে মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের আশায় এবং অধিক নেকির জন্য বেশি বেশি দান-সদকা দেবার মোক্ষম সময় যাচ্ছে চলে।চলুন, হেলা-ফেলায় সময়গুলো নষ্ট না করে কাজে লাগাই সবাই মিলে। আল্লাহ তায়ালা সকলকে সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।।