নামুল হাসান নাইম :-
স্ত্রীর মর্যাদা ফিরে পেতে পিতামাতা হারা এক অসহায় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রী আদালত, প্রশাসন ও মানবাধিকার সংস্থার কার্যালয় সহ বিভিন্ন মানুষের দ্বারে-দ্বারে ঘুরছেন। শুধু তাই নয়, অভিবাবকহীন অসহায় মেয়েটি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ন্যায় বিচারের দাবীতে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করায় বর্তমানে মেয়েটি তাদের হুমকি ধামকিতে জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। ছেলের পিতা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আবু সাঈদ ও তার মা কোন মতেই পুত্রবধূকে মেনে নিতে রাজি হচ্ছেনা। মানবতা আজ কোথায়? নারী কি শুধুই পুরুষের ভোগ বিলাসিতার পাত্র।
জানা গেছে, যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার বড়েঙ্গা গ্রামের আবু সাঈদ এর ছোট ছেলে মোস্তফা মহিদের সঙ্গে পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া থানার মৃত ফারুক হোসেন এর বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়ের সাথে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরিচয় হয়। সেই সুবাদে একে অপরের ফেসবুক ফ্রেন্ড হন। পরিচয়ের এক পর্যায়ে মহিদ তার ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে পুলিশের পোশাক পরিধানের ছবি পাঠিয়ে নিজেকে পুলিশ সদস্য হিসেবে ওই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রীর কাছে পরিচয় দেয়।
এরপর থেকে তাদের ভেতর ফোনে এবং ফেসবুকের মাধ্যমে বন্ধুত্ব আরো গাড়ো হতে থাকে। এক পর্যায় ওই ছাত্রী তার ও পরিবারের অবস্থার কথা তাকে জানান যে, খুব ছোট বেলায় আমার পিতা মারা গেছে, মা থাকতেও নেই। আমি বর্তমানে আমার দাদি ও চাচাদের আশ্রিত হিসেবে এ পর্যন্ত লেখা-পড়া চালিয়ে এসেছি।
বিভিন্ন সময় আলাপ চারিতার একে-অপরের জানাশুনার মাধ্যমে তাদের মধ্যে গভীর সম্পর্কের সৃষ্টি হয়। উক্ত সম্পর্কের জের ধরে মহিদ তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। প্রথম পর্যায়ে তার প্রস্তাবে রাজি না হলেও পরিবারের সম্মতিতে বিয়ের প্রস্তাব দিলে ওই ছাত্রী পরিবারের সম্মতিতে রাজি হন। এরপর মহিদ তড়িঘড়ি করে তাকে বিয়ের দিনক্ষণ জানিয়ে দেয়। ওই সময় মহিদের আসল রূপ বুঝতে পারিনি সে। মহিদের কথা মতো গত বছরের ২৭ জানুয়ারী আশুলিয়া থানার বাইপাইল নামাবাজার আ: সালামের বাড়িতে মেয়ের পক্ষীয় ওই এলাকার কিছু লোকজনকে দাওয়াত করেন।
এরপর বরপক্ষ মহিদ ও তার আপন বড় ভাই আব্দুল্লাহ আল মামুন কিছু সংখ্যাক লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে সেই বাড়ীতে হাজির হন। ওই সময় উভয় পক্ষের ও এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে কোন বিবাহ রেজিষ্ট্রার ছাড়ায় শুধুমাত্র বর পক্ষের সরবরাহকৃত কাগজে স্বাক্ষর করে স্থানীয় মৌলভী দিয়ে তাদের বিয়ে পড়িয়ে বিবাহের কাজ সম্পন্নের প্রস্তাব দেয়। ওইসময় মেয়ে রাজি না হলে, মহিদ ও তার আপন বড় ভাই এবং তাদের সঙ্গীয়রা তাকে বুঝায় যে, প্রথম পর্যায় কাগজে স্বাক্ষর করে বিয়েটা হয়ে গেলেই পরবর্তী সময় সুযোগে বিবাহ রেজিষ্ট্রারের মাধ্যমে বিবাহ রেজিষ্ট্রি করে নেব।
মেয়েটি যেহেতু অভিভাকহীন তাই পরবর্তীতে তার পক্ষীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের পরবর্তীতে উপস্থিত করতে পারবো কিনা সেই শঙ্কায় ওই দিনই কাগজে মেয়ের স্বাক্ষর নিয়ে বরপক্ষ বিবাহের কাজ সম্পন্ন করে। এরপর থেকে মেয়ের ভারাটিয়া বাড়ীতে ও মহিদের পিতার নামীয় গাজীপুর জেলার কাশিমপুর থানার চক্রবর্তি টেকের ২নং ওয়ার্ডের ডি-২ ফ্লাটের ৪র্থ তলায় স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বেশ কিছুদিন বসবাস করতে থাকে। স্বামী স্ত্রীর মেলামেশায় একপর্যায়ে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে।
এরপর গর্ভধারণের বিষয়টি মহিদকে জানালে সে মেয়েটিকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং গত ১৯ আগষ্ট মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ঔষধ সেবন করিয়ে গর্ভের সন্তান নষ্ট করে দেয়। যার কারণে মেয়ের শরীর থেকে রক্তক্ষরণ হতে থাকলে গত বছরের ৩০ আগষ্ট হাবিব হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করেন। এরপর মেয়েটি সুস্থ হয়ে মহিদকে রেজিস্ট্রি কাবিনের কপি দেওয়ার জন্য তাগিদ দিলে সে মেয়েকে বলে আরে কাবিন দিয়ে কি হবে, আমাদের দু’জনের ভালোবাসাটাই হলো বড় কথা।
তারপর কাবিনের কথা বলতে গেলেই বিভিন্ন সময় ছল-চাতুরী করে এড়িয়ে যেতে থাকে। বিষয়টি মেয়ের সন্দেহের সৃষ্টি হলে পরে জানতে পারে সেদিনের কাগজে সাক্ষর করা কাগজটি ভূয়া ও কোন কাবিননামা হয় নাই।
এরপরও সে মেয়েটিকে মিথ্যা বানোয়াট আশ্বস্ত করে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চাইলে মেয়েটি বাধা প্রদান করে এবং বলে তুমি আমাকে মিথ্যা বিয়ের নাটক করে কেন আমার জীবনটা নষ্ট করতে চাও। আমাকে পুনরায় বিয়ের রেজিস্ট্রার ও কাবিননামা করে তুমি আমার সাথে মেলামেশা করো। ওইসময় সে মেয়ের কথার কোন কর্নপাত না করে জোরপূর্বক তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আবারও ধর্ষণ করে। কোন উপায় না পেয়ে কান্নাকাটি ও ডাকচিৎকার শুরু করলে সে দ্রুত সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে মহিদের পরিবারের লোকজনদের কাছে অবগত করলে তারা উল্টো মেয়েকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে এবং এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন হুমকি ধামকিসহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।
পরবর্তীতে মেয়েটি মহিদের পুলিশের চাকরির বিষয় খোজখবর নিয়ে জানতে পারে, সে পুলিশের চাকরি করে না, সে পুলিশের পোশাক পরিধান করে ছবি তুলে ও মিথ্যা বানোয়াট পুলিশের চাকরির কথা বলে তার সাথে প্রতারণা করেছে। এরপর ওই এলাকা ছেড়ে মেয়েটিকে রেখে পালিয়ে আসে মোহিদ। এরপর তার সাথে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে পরিশেষে তার স্ত্রীর অধিকার নিয়ে মহিদের গ্রামের বাড়িতে কেশবপুরের বড়েঙ্গা গ্রামে আসে। সেখানে একদিন অবস্থান করার পর মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন মহিদ ও তার মা তাকে অসুস্থ অবস্থায় কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করেন। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর ওইদিন রাতেই পৌরশহরের একটি হোটেল থেকে খাওয়া দাওয়া করে তাকে সাথে করে নিয়ে তাদের কেশবপুরের বাড়িতে নিয়ে যান। পরের দিন তাকে স্ত্রীর মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ও মেয়ের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে তাকে ঢাকাতে পাঠিয়ে দেয়।
পরবর্তীতে ছেলের পিতা ঢাকায় গিয়ে মেয়ের পরিবারের লোকজনের কাছে বিয়ের কথা অস্বীকার করেন এবং মেয়েটি খুবই খারাপ ও দুশ্চরিত্র স্বভাবের বলে এমন মন্তব্য করেন। পরিশেষে মেয়ে কোন উপয়ান্তর না-পেয়ে ভূয়া পুলিশ সদস্য পরিচয় দিয়ে নারীকে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ ও অবৈধ গর্ভপাত ঘটানোর অভিযোগে প্রতারক মহিদ ও তার পিতা এবং আপন বড় ভাইয়ের নাম উল্লেখ করে গত বছরের ৩০ নভেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল আদালতে মামলা করেন।
পরবর্তীতে ওই মামলাটি রেকর্ড ও তদন্তের জন্য ঢাকার আশুলিয়া থানা পুলিশকে নির্দেশনা প্রদান করে আদালত। তারই প্রেক্ষিতে গত ২৮ডিসেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে থানায় মামলাটি গ্রহণ করে আশুলিয়া থানা পুলিশ। যার মামলা নম্বর-৫৫(১২)২১। এরপর কেশবপুরের বড়েঙ্গা গ্রামের বাড়ি থেকে মোস্তফা মহিদকে (২১) আটক করে পুলিশ। বর্তমানে মহিদ জেলহাজতে রয়েছে।
এ ঘটনায় ছেলের পিতা ও পরিবারের লোকজন মামলা তুলে নিতে এবং মহিদের জীবন থেকে সরিয়ে দিতে বিভিন্ন সময় হুমকী অব্যাহত রেখেছে। এ ঘটনায় মেয়েটি জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে চলতি বছরের গত ২২ জানুয়ারী আশুলিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। যার নং-১৬৪৬।
এব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রী বলেন, মাত্র দেড় বছর বয়সে আমার পিতাকে হারিয়েছি, এমনকি মাকেও হারিয়ে বহুত কষ্টে বিশ্ববিদ্যালয় মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ার পর্যন্ত লেখাপড়া চালিয়ে এসেছি। আমার আপন বলতে তেমন কেও নেই। সেই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মহিদ আমার জীবনটাকে এলোমেলো ও জীবনের সব স্বপ্ন ভেঙ্গে তছনছ করে দিয়েছে। তার প্রতারণার ফাঁদে পড়ে আমার জীবনের মহা মূল্যবান সম্পদ হারিয়ে বর্তমানে আমি খুবই অসহায় ও মানবেতর জীবনযাপন করছি।
তাদের বিরুদ্ধে মামলা করায় মহিদের পিতামাতা ও তাদের বিভিন্ন লোকজনদ্বারা জীবনন্যাশের হুমকিতে আমি জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগিতেছি। সে কারণে ন্যায় বিচারের দাবীতে আদালত, প্রশাসন ও বিভিন্ন সংস্থার কার্যালয়ের দ্বারেদ্বারে ঘুরছি। মানবতা আজ কোথায়? নারীরা কি শুধুই পুরুষের ভোগ বিলাসিতার পাত্র। বর্তমানে আমার শ্বশুর আবু সাঈদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত থাকার সুবাদে তার অবৈধভাবে উপার্জনের টাকার গরমে আমাকে পুত্রবধু হিসেবে মেনে নিতে কোন মতেই রাজি হচ্ছেনা। এহেন কর্মকান্ডের জন্য ন্যায় বিচারের দাবীতে আমি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
বিয়ের ব্যাপারে মহিদের আপন বড় ভাই আবদুল্লা আল মামুনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমিসহ আমাদের পক্ষের ও মেয়ের পক্ষের লোকজনের উপস্থিতিতে লিখিত একটি কাগজে সহি স্বাক্ষর ও মৌলভী দ্বারা তাদের বিবাহের কাজ সম্পন্য করা হয়। তবে আমাদের পক্ষের লোকজন কম ছিলো। বিয়ের পর থেকে আমাদের বাসায় তারা কিছুদিন ছিল। এখন আদালতে মামলা চলমান। আদালতের বিচারে যাহা হবার তাই হবে। আমিতো আর ছেলের প্রকৃত অভিভাবক না। বাপ জীবিত আছে তিনি যাহা করেন।
এ ঘটনার বিষয়টির ব্যাপারে জানার জন্য মহিদের পিতা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আবু সাঈদ এর মুঠোফোনে ব্যবহৃত ০১৭৫৪৬৫০৬৫০ নম্বরে গত মঙ্গলবার দুপুরে ১.৪২ মিনিটে ১বার ১.৪৩ আরো একবার, পরের দিন বুধবার সকালে ৮.০২ মিনিটে ফোন দিলেও ফোন কল রিসিভ করেনি এমনকি ওইদিন চৌগাছায় তার কর্মস্থলে গিয়ে ২.৩৬ মিনিটে আবারও ফোন দিলেও রিসিভ হয়নি, শুধুই তাই নয়, তার কর্মস্থলেও তিনি ছিলেন না।
এরপর বৃহস্পতিবার বিকেলে ৪.০৯ মিনিটে পরপর দুবার কল করলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়, শুক্রবার সকাল ৯.৫৫ মিনিটে ও ৯.৫৬ মিনিটে কল করলেও ফোন রিসিভ হয়নি। এরপর দুপুর ২.০৪ মিনিটে এবং বিকালে ৪.৩৩ মিনিট ও ৪.৫৬ মিনিটে ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। যার কারণে বক্তব্য দেওয়া যায়নি।