রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার স্থানীয় এনজিও সেন্টার ফর সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট কুড়িগ্রাম (সিএসডিকে) এর নির্বাহী পরিচালক আবু হানিফের বিরুদ্ধে চাকুরী দেওয়ার নামে প্রতারণা করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘুষের টাকা ফেরত চাইতে গিয়ে মারধর ও শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করা হয়।
এ ঘটনায় সোমবার রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রাণালয়ের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো, পিইডিপি-৪ শিক্ষা প্রকল্পের ‘আউট অব স্কুল চিল্ড্রেন’ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ২০২০ সালে সহযোগি এনজিও হিসাবে কাজ পান সিএসডিকে। পরে বিভিন্ন পদের বিপরীতে উপজেলায় মোট ১৬২ জনের নিয়োগ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন।
এর মধ্যে প্রোগ্রাম ম্যানেজার ২ জন, হিসাবরক্ষক ২ জন, প্রোগ্রাম সুপারভাইজার ১৪ জন, শিক্ষক ১৪০ জন, অফিস সহকারী-কাম কম্পিউটার অপারেটর ২ জন ও অফিস সহায়ক পদে ২ জন। এসব পদে আবেদন করেন প্রায় চার শতাধিক চাকুরীপ্রার্থী। আবেদনকারী সবার মৌখিক পরিক্ষাও নেওয়া হয়। এর পর শুরু হয় নিয়োগ বানিজ্য। ১৬২জনকে নিয়োগের জায়গায় ঘুষের টাকা নেওয়া হয় ৪শতাধিক চাকুরীপ্রার্থীর কাছ থেকে। প্রতি শিক্ষক পদের জন্য ৫০ হাজার, সুপারভাইজার পদে ১ লাখ টাকা করে ঘুষ নেওয়া নেন সিএসডিকের নির্বাহী পরিচালক আবু হানিফ।
এদের মধ্যে ১৬২জনকে নিয়োগপত্র দিলেও অন্যদেরকে এখনও নিয়োগপত্র দেওয়া হয়নি। আবার যারা নিয়োগপত্র পেয়ে পাঠদান করছেন তারাও ১ বছর ধরে কোনো বেতন-ভাতা পাননি বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন। শিক্ষক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত ভুক্তভোগি লিমা খাতুন, বিউটি খাতুন, বাছিরন আক্তার, সাবানা খাতুন, আখি আক্তার, নাছিমা খাতুন, আনোয়ার হোসেন ও সাহাদৎ হোসেন অভিযোগ করে বলেন, বেকারত্ব দূর করতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর জন্য দৌড়-ঝাঁপের এক পর্যায়ে ৫০হাজার টাকা ঘুষের বিনিময়ে ওই এনজিও’তে চাকুরী দেন সিএসডিকের নির্বাহী পরিচালক আবু হানিফ মাস্টার।
এক বছর ধরে চাকুরী করলেও আজও কোনো বেতন-ভাতা পাইনি। দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পেয়ে পরিবার পরিজনকে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। উপায় না পেয়ে গত ৫মার্চ জামানতের টাকা ফেরত চাইতে সিএসডিকে’র অফিসে যাই। এ সময় ঘুষের টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো আমাদেরকে ভয়-ভীতি, অশালিন গালিগালাজ ও শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করেন ওই নির্বাহী পরিচালক।
এ নিয়ে সোমবার রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। প্রতারণার জন্য সিএসডিকে এনজিও’র নির্বাহী পরিচালক আবু হানিফের শাস্তিসহ ঘুষের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করার দাবি জানান ভুক্তভোগিরা।। বন্দবেড় ইউনিয়নের ফলুয়ারচর গ্রামের শিরিন আক্তার অভিযোগ করে বলেন, ‘শিক্ষক পদে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে সিএসডিকের নির্বাহী পরিচালক আবু হানিফ মাস্টার আমার কাছে নগদ ৫০হাজার টাকা দাবি করেন। পরে বেকারত্ব ঘোচাতে ধার-দেনা করে দাবিকৃত ৫০হাজার টাকা দেই। চাকুরীতে নিয়োগ দিবেন বলে দীর্ঘ দেড় বছর ধরে ঘোরাচ্ছেন।
এখন নিয়োগপত্রও দিচ্ছেন না, টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, সব কিছুই ছিলো প্রতারণা। আমি টাকা ফেরতসহ প্রতারক হানিফের বিচার চাই।’ উপজেলার কুটিরচর গ্রামের লিমা খাতুন অভিযোগ করে বলেন,‘আমার ভাইকে সুপারভাইজার পদে চাকুরী দেওয়ার নামে আমার কাছ থেকে নগদ ১লাখ টাকা নিয়েছেন আবু হানিফ মাস্টার। এখন চাকুরীও নাই, টাকাও নাই।
এ ব্যাপারে সিএসডিকের নির্বাহী পরিচালক আবু হানিফ বলেন, তাদের অভিযোগের কোনো সত্যতা নাই, ওরা অফিসে আসছিল, মিমাংসা হয়ে গেছে।’টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমরা কারো কাছে কোনো টাকা নেই নাই। রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল ইমরান বলেন, এব্যাপারে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে ওই এনজিও’র নির্বাহী পরিচলকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থ্যা নেওয়া হবে।