আয়নাবাজ সোহাগের অন্যতম সহযোগী ও কদমতলীর টিটু হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড প্রাপ্ত ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী মামুন’কে মেঘনা ঘাট হতে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
র্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, জঙ্গি দমন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, মাদক ও ছিনতাইকারীসহ বিভিন্ন অপরাধীদের গ্রেপ্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। গোয়েন্দা নজরদারী ও আভিযানিক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে র্যাব ইতিমধ্যেই জনগণের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
বিগত ২৬/১১/২০১০ তারিখে কদমতলী থানাধীন আউটার সার্কুলার রোডে নোয়াখালী পট্টিতে, নান্নু জেনারেল ষ্টোর এর সামনে বেলা অনুমান ১৪:১৫ ঘটিকায় একটি হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। উক্ত আলোচিত হত্যাকান্ডে জড়িত আসামীগণ (ক) মামুন (৩৩), পিতা- মৃত আলাউদ্দিন শেখ, সাং- ৪৫৪ খালপাড় (নোয়াখালী পট্টি), মুরাদপুর, থানা-কদমতলী, ঢাকা, (খ) সোহাগ @ বড় সোহাগ (৩৪), পিতা- গিয়াস উদ্দিন @ কাঙ্গাল, সাং-৪৪০ বিড়ি ফ্যাক্টরী গলি, মুরাদপুর, থানা-কদমতলী, ঢাকা (গ) সোহাগ @ ছোট সোহাগ (৩০), পিতা- শফু মিয়া, সাং- ৪১২, মুরাদপুর হাই স্কুল রোড, থানা-কদমতলী, ঢাকাসহ অজ্ঞাতনামা ঃ আরো ৩/৪ জন।
উল্লিখিত আসামীরা পূর্ব শত্রæতার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে গত ২৬/১১/২০১০ খ্রিঃ তারিখ হুমায়ুন কবির @ টিটু’কে আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে। গুলি ভিকটিম টিটু-র মাথার ডান পার্শ্বে লেগে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। আহত টিটু’কে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষনা করেন। পরবর্তীতে ভিকটিমের স্ত্রী বাদী হয়ে কদমতলী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-৪৯ তাং-২৬/১১/২০১০ ইং, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড।
মামুন শেখ বিগত ২০১০ সালে টিটু হত্যা মামলার ০২ নং আসামী হিসেবে গ্রেফতার হয় এবং ২০১৪ সালে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি লাভ করে। সে জামিন লাভ করার পর থেকে পলাতক রয়েছে। গত ২৮/১২/২০১৭ খ্রিঃ তারিখ উক্ত মামলার ০২ নং আসামী মামুন শেখ এর অনুপস্থিতিতে বিজ্ঞ আদালত রায় প্রকাশ করেন। বিজ্ঞ আদালত মোহাম্মাদ মামুন শেখ (২৮) এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করেন। বিজ্ঞ আদালতের রায় প্রকাশের পর মামুন শেখ আতœগোপনে চলে যায়।
এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল অদ্য ১০/০৩/২০২২ খ্রিঃ তারিখ আনুমানিক ভোর ০৫:৪০ ঘটিকায় নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও থানাধীন মেঘনা ঘাট এলাকা হতে আয়নাবাজ সোহাগের অন্যতম সহযোগী ও টিটু হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড প্রাপ্ত ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী মোহাম্মদ মামুন শেখ (২৮)’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সে নিজেকে লুকিয়ে রাখার জন্য মুন্সিগঞ্জে ০৬ মাস, যশোরে ০৯ মাস, মেঘনা ঘাট লাকি ডগইয়ার্ডে ০৫ মাস, ধামুরাইতে ০৪ মাস, নবীনগরে ০২ মাস, মেঘনা ঘাট মদিনা ডগইয়ার্ডে ০৭ মাস করে বিভিন্ন এলাকায় মিথ্যা পরিচয় দিয়ে জাহাজ মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করার নামে আইনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে অদ্যবদি পর্যন্ত গা ঢাকা দিয়ে ছিল।
জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, আসামী মামুন এর মা ও আয়নাবাজ সোহাগ এর বাবার মধ্যে ধর্মের ভাই-বোনের সম্পর্ক। সেই সুবাদে মামুন ও সোহাগের মধ্যে ঘনিষ্ট বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। সেই সাথে মামুন ও সোহাগ একত্রে মাদক সেবন, মাদক ব্যবসা, ছিনতাই, ডাকাতি, হত্যাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছিল এবং উক্ত কর্মকান্ডে মামুন সোহাগের প্রধান সহযোগী হিসেবে কাজ করে করত।
জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, ২০১৫ সালে কদমতলী থানাধীন জুরাইন এলাকায় মামুন, হাবু, চান মিয়া @ চানু, শুকুর, দিপু, স্বপন, রকি ও ইব্রা মিলে একত্রে ইয়াবা, হেরোইনসহ বিভিন্ন ধরণের মাদক ব্যবসা করত। টাকা ভাগাভাগি নিয়ে চান মিয়া ও ইব্রার সাথে মামুনসহ অন্যদের বিবাধের ফলে তারা দুইটি দলে বিভক্ত হয়ে যায়। পরবর্তীতে মামুন ও হাবুদের মাদক ব্যবসায় চান মিয়া বিভিন্নভাবে বাধা প্রদান করলে মামুন ও তার দল চান মিয়াকে হত্যার করার পরিকল্পনা করে। পরবর্তীতে চান মিয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যে কদমতলী থানাধীন জুরাইন বাগানবাড়ী এলাকায় ইব্রার পাশের বাড়ীতে গেলে চান মিয়াকে না পেয়ে তার ভাই ও সহযোগী ইব্রাকে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত আসামী মামুন পেশায় একজন জাহাজ মেরামত মিস্ত্রি। উক্ত পেশার আড়ালে সে মাদক ব্যবসা, ছিনতাই, ডাকাতি ও কন্ট্রাক্ট কিলিংসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছিল। এছাড়া তার বিরুদ্ধে কদমতলী থানায় ০২ টি হত্যা মামলাসহ আরও ০৪টি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত আসামীকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।