পেকুয়া প্রতিনিধি
কক্সবাজারের পেকুয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মালিকানাধীন জায়গায় দিনদুপুরে নির্মিত হয়েছে প্রভাবশালীর স্থাপনা। প্রবাহমান নদীর চরেই উপকুলীয় সবুজ বেষ্টুনীর প্যারাবন সাবাড় করে ওই স্থানে নির্মিত হচ্ছে বসতবাড়ি। ১৫ শতক জায়গা বিক্রি হয়েছে চড়া দামে। স্থানীয় বাংলাদেশ বিএনপির ইউনিয়ন কমিটির সহসভাপতি ও পেকুয়া উপজেলা ভূমি অফিসের দালাল মঈজ উদ্দিন নামের এই ১৫ শতক পরিমাণের জায়গাটি বিক্রি করে।
বিক্রিত জায়গার ৬ লক্ষ টাকা পকেটে নিয়েছেন এই ভূমি অফিসের দালাল ওই বিএনপি নেতা। জায়গা পাউবোর নিয়ন্ত্রনাধীন সম্পত্তি টইটং মৌজার বিএস ৪৯১ দাগের ওই জমি সকারের ৩ নং খাস খতিয়ানভূক্ত। গত ২৮ ফেব্রুয়ারী গভীর রাতেই ভূমি অফিসের দালাল মঈজ উদ্দিনের নেতৃত্বে একদল দুবৃর্ত্তরা পাউবোর জায়গায় হানা দেয়।
এসময় স্থানীয় আফতাব উদ্দিন নামক দখলদারকে জায়গাটি বুঝিয়ে দেন। আফতাব উদ্দিন গভীর রাতেই ওই জায়গায় একটি ঝুপড়ি ঘর নির্মাণ করেন।বর্তমানের চরের ওই জায়গা চলছে মাটি ভরাট কাজ। আফতাব উদ্দিন টইটং ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাইছড়ি কইড়ারপাড়ার বাসিন্দা। আফতাব উদ্দিন জানান, এই জায়গা আমি মঈজ উদ্দিনের কাছ থেকে ৬লক্ষ টাকা দিয়ে ক্রয় করেছি।
সূত্র জানায়,আফতাব উদ্দিন ওই জায়গা জবর দখল নিতে স্থানীয় প্রভাবশালীদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে। আফতাব উদ্দিনের স্ত্রী জানান, আমার ৬লক্ষ টাকা দিয়ে বেড়িবাঁধের বাইরের এ জায়গাটি কিনেছি। টাকা দিয়েছি মঈজ উদ্দিনকে, টইটং এর চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী এসে জায়গা দখল দিয়েছে। আফতাব উদ্দিনের ছেলে ফোরকান জানান,আমার এক ভাই বিদেশ থাকে। আমি ডাম্পার চালক আমাদের ইনকামের টাকা দিয়ে জায়গা কিনেছি। মঈজ উদ্দিনের জায়গা তার নিজের বলছে।
সরেজমিন পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখা গেছে,টইটং ইউনিয়নের দক্ষিণ ও পশ্চিম অংশের পশ্চিম সোনাইছড়ি কইড়ারপাড়া এলাকায় পাউবো ১৫ শতক জমিতে রাতারাতি নির্মিত হয়েছে বসতবাড়ি।
কইড়ারপাড়া এলাকার মৃত আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে আফতাব উদ্দিন জায়গাটি জবরদখল করছিলেন।বিক্রেতা মঈজ উদ্দিনও একই এলাকার বাসিন্দা। এ জায়গার মালিক পানি উন্নয়ন বোর্ড।পাউবো বান্দারবান নিয়ন্ত্রণধীন সম্পত্তি এখন বেহাত হচ্ছে। ওই স্থানে পাউবো বেড়িবাঁধ রয়েছে।বেড়িবাঁধের বাহিরের অংশ প্রবাহমান টইটং নদীর চর দখল করে সেখানে গড়ে উঠেছে আফতাব উদ্দিনের বসতি। ৫০ ফুটের ব্যবধানে সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড নিয়ন্ত্রত একটি সুইচগেইট রয়েছ।
গত ১বছর আগে পাউবোর ওই জায়গা স্লুইচ গেইটটিতে আংশিক সংস্কারকাজ বাস্তবায়ন করে। নয়াকাটা খাল ও প্রবাহমান টইটং নদীর অববাহিকায় ওই স্লুইচ গেইটটির অবস্থা। নদী থেকে ভিতরে অংশ চলাচল খালের মুখে এই ঘরটি তৈরি করা হয়েছে।
গত কয়ক বছর আগে নদীর জেগে উঠা চরে উপকূলীয় বনবিভাগ সবুজ বেষ্টনী সৃজন করে। সৃজন বাগানের বাইন ও কেওড়া গাছসহ লবণ সহিষ্ণু নানান প্রজাতির ম্যানগ্রোভ বাগান আছে। আফতাব উদ্দিন বাড়ি ভিটা তৈরী করতে শতাধিক গাছও কেটে সাবাড় করে। পাউবো মাঠ কর্মকর্তা হুমায়ন কবির বলেন, জায়গাটি আমি চিনে গেছি। সেখানে আমাদের একটি স্লুইচ গেইট রয়েছে আমরা দেড় বছর আগে কিছু কাজও করেছি মৌলভীবাজারের কাছাকাছি এটি অবশ্যই পাউবোর জাগায়।
পাউবোর উপবিভাগীয় রাজস্ব কর্মকর্তা শাহ-আলম মজুমদার বলেন, মানুষ আসলে কি বুঝে।তারা কি প্রতারিত হচ্ছে না,এটি আমাদের জায়গা। আমরা অবশ্যই জবর দখলকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।
এ বিষয়ে টইটং চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সংযোগ না পাওয়া বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। বিক্রেতা মঈজ উদ্দিন বলেন, আমি জায়গাটি আফতাবকে বিক্রি করেছি । চেয়ারম্যান এসে জায়গা বুঝিয়ে দিয়েছে।
এ জায়গা আমার সম্পতি। স্থানীয় সার্ভেয়ার ইসলাম নুর বলেন,তারা আমাকে জায়গাটি পরিমাপের দায়িত্ব দিয়েছিল, আমি চিহ্নিত করেছি। আরএস খতিয়ান থেকে ওই জায়গা পাউবো অধিগ্রহন করে সে বলে দিয়েছে। পাউবোর বান্দবানের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রাশেদুল হক বলেন, অবশ্যই আইনগত ব্যবস্তা নেওয়া হবে।
আমাদের জায়গা জবরদখলে রাখতে দেয়া হবেনা। আমরা বিষয়টি জেনেছি দ্রুত সময়ের মধ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড পাউবোর বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী অরুপ চক্রবর্তী বলেন, তারা কোন ধরণের মানুষ জায়গাটি পাউবোর। তারা কি ভাবে জায়গা বিক্রি করে। আর যারা নিচ্ছে তারা কার জায়গা কার কাছ থেকে নিচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আমি কথা বলেছি অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে, কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা।