![](https://banglaralonews.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
মোঃ তুষার ইমরান, বিশেষ প্রতিনিধি।
দৃষ্টিনন্দন পার্কে যে যার মতো বিভিন্ন রাইডে চড়ছে। আর দশটা শিশুর মতো অভিভাবকের হাত ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এটা–ওটা বায়না ধরছে, পেয়েও যাচ্ছে। আজ মঙ্গলবার লালপুরের গ্রিন ভ্যালি পার্কে এভাবে আনন্দিত সময় কাটায় নাটোরের দিঘাপতিয়া বালিকা শিশুসদনের ৬০ এতিম শিশু।
দিঘাপতিয়া বালিকা শিশুসদনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সকালে শিশুরা নতুন পোশাক পরে প্রস্তুত হয়ে থাকে। আটটায় শিশুসদনের ফটকে পৌঁছে যায় জেলা কালেক্টরেট স্কুলের দুটি বাস। বাসে উঠে তারা অভিভাবক হিসেবে পায় চিকিৎসক আবুল কালাম আজাদ, অধ্যক্ষ আবদুর রাজ্জাক, অবসরপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা মনিমুল হক ও সাবেক কাউন্সিলর সৈয়দ মোস্তাক আলী মুকুলকে। তাঁদের সঙ্গে গল্প করতে করতে শিশুরা পৌঁছে যায় লালপুর গ্রিন ভ্যালি পার্কে। সেখানে তাদের অভ্যর্থনা জানান লালপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা সুলতানা ও পার্কটির পরিচালক সামসুজ্জোহা। পার্কে প্রবেশের পর তাদের নাশতা করান উপজেলা প্রশাসন, ইউএনও শামীমা।
পার্ক কর্তৃপক্ষ বিনা মূল্যে প্রবেশাধিকার দেওয়ার পর শিশুদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় চারটি রাইড। মুহূর্তে এসব শিশু যার যার মতো রাইড উপভোগে মেতে ওঠে। কেউ কেউ নিজের মতো ঘুরতে থাকে। এ সময় তাদের সঙ্গ দেয় বাবা–মাতুল্য অভিভাবকেরা। এভাবে দেখতে দেখতে দুপুর চলে আসে। স্পটেই তাদের জন্য রান্নার আয়োজন চলছিল। সেখানে দুপুরের খাবার শেষে একটু বিশ্রাম নেয় শিশুরা। তারপর আবার ঘোরাঘুরি। এভাবে দিনটা কখন কেটে যায়, তা টেরই পায় না তারা।
শিশুসদন থেকে আসা রিক্তা খাতুন (১১), দোলেনা খাতুন (১৫), সুমি আক্তার (১৬), ফারহানা ইয়াসমিন (১৪) ও জেসমিন আরার (১৫) সঙ্গে কথা হয়। তারা প্রথম আলোকে জানায়, ১৪ বছর ধরে তারা শিশুসদনে থাকছে। এখানে থাকা–খাওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও বাইরে ঘুরতে যাওয়ার সৌভাগ্য তাদের হয়নি।
দোলেনা খাতুন বলে, ‘আমরা আজ মা–বাবার হাত ধরে পার্কে ঘুরেছি। এ আনন্দ কোনো দিন ভুলতে পারব না।’ রিক্তা নাগরদোলার ঘোড়ায় চেপে হাসতে হাসতে বলে, ‘আমি মনে হয় সত্যিই রাজকন্যা হয়ে গেছি।’
বেড়াতে আসা আফরোজা খাতুন বলে, সে সদনের পাশের স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। স্কুলের অন্য ছেলেমেয়েরা বছরের বিভিন্ন সময় ঘুরতে যায়। কিন্তু তার কখনো বাইরে যাওয়া হয়নি। গ্রিন ভ্যালি পার্কে ঘুরে তার এ আক্ষেপ দূর হয়ে গেছে।
সদনের মেয়েদের সঙ্গে আসা মনিমুল হক বলেন, ‘শিশুসদনের এতগুলো মেয়ের ঘোরার ব্যবস্থা করাটা সত্যিই কঠিন ছিল। তবে জেলা প্রশাসকের অকৃত্রিম সহযোগিতায় আমরা ওদের জন্য পারিবারিক পরিবেশে ঘোরার সব রকম ব্যবস্থা করতে পেরেছি।’
জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ‘সদনের মেয়েরা আমার মেয়ের মতোই। নাটোরে যোগ দেওয়ার পর থেকে আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা প্রায়ই ওদের সঙ্গে সময় কাটাই। ওরা আমাকে গ্রিন ভ্যালি পার্কে ঘোরার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিল।
আমি ওদের ইচ্ছা পূরণ করতে পেরে খুশি। এর সঙ্গে লালপুরের ইউএনও, সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা চেয়ারম্যান, পার্ক কর্তৃপক্ষ ও শহরের সাদামনের কিছু মানুষের সহযোগিতা জড়িত আছে।