সোনাগাজী (ফেনী) প্রতিনিধি
ফেনীর সোনাগাজী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী সনদ কুমার ঘোষ কে (ডিজিএম) দ্রুত অপসারণের দাবী তুলেছেন উপজেলার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা, আজ ৩০ জুন বৃহস্পতিবার উপজেলা আইন-শৃংখলা কমিটির সভায় সাম্প্রতিক সময়ে ঘনঘন লোডশেডিং ও পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের খামখেয়ালি ও বিরূপ আচরণের প্রতিবাদে পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের কঠোর সমালোচনা করে দ্রুত ডিজিএম এর অপসারণ দাবী করেন বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানগণ।
সোনাগাজীতে তীব্র লোডশেডিং ও অনিয়মের প্রতিবাদে দীর্ঘদিন সোনাগাজীর সাধারণ মানুষও প্রতিকার চেয়ে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের ও জনপ্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।
জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে এক প্রকার অসহায় অতিষ্ঠ হয়ে পুষে উঠেছেন জনপ্রতিনিধিরা, তারাও সময়মতো বিদ্যুৎ না পেয়ে অফিস-আদালত চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।শুধু জনপ্রতিনিধি নয় বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে সময় মত কাজ করতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
অফিস সময়ে বিদ্যুৎ না থাকায় ডিজিএমকে ফোন করে বিদ্যুৎ চাইতে গিয়ে অনেকে তার আক্রোশের শিকার হয়েছেন, এমনকি উপজেলা এলজিইডি কর্মকর্তা প্রকৌশলী মনির হোসেন অফিসের অতি প্রয়োজনে বিদ্যুৎ চেয়ে তার মন্দ আচারণের শিকার হয়েছেন বলেও জানান।
সোনাগাজী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সাখাওয়াতুল হক ভিটু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ ডিজিএম আসার পর থেকে বিদ্যুতের সমস্যা বেশি দেখা দিচ্ছে! এমনকি তার আচার-আচরণও মারাত্মক খারাপ।
চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন মিলন বলেন, ডিজিএম খামখেয়ালী মতো যখন তখন বিদ্যুৎ নিয়ে সীমাহীন হয়রানি করছেন, তার আচার আচারণও জঘন্য, জনগণ তার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে দ্রুত অপসারণ জরুরী, নচেৎ যেকোনো সময় বিক্ষুব্ধ জনতা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে পারে।
মঙ্গলকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন বাদল বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি শুভংকরের ফাঁকি, বিভিন্ন মিটারে যেখানে ৫০০/৬০০ টাকা বিল আসতো হটাৎ ২০০০০ টাকার ভুতুড়ে বিল, প্রতিকার চাইলে বলেন আগে এ মাসে যে বিল আসছে তা পরিষদ করে দেন পরে মিটার চেকিং হবে! এক বছর আগে তিনি দাবী করেন তার পরিবারও ভুক্তভোগী।
চরদরবেশ ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ভুট্টু বলেন, পরিকল্পিত ভাবে সরকারের বদনাম করা হচ্ছে শতভাগ বিদ্যুতায়িত জেলায় সোনাগাজীর ডিজিএম এর আচার-আচরণ দেখে মনে হচ্ছে তিনি সরকারের চেয়ে শক্তিশালী!
তাৎক্ষণিক সভার সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মঞ্জুরুল হক এ বিষয়ে ব্যখ্যা চাইলে সভায় উপস্থিত এজিএম মোঃ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ডিজিএম এর খারাপ আচরণের ব্যাপারে তিনি অবগত নয়, আর বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিরসনে তারা কাজ করছেন, সোনাগাজীর চরচান্দিয়ায় নতুন একটা উপকেন্দ্র চালু হওয়ায় বিদ্যুৎ এর ভারসাম্য আনতে সময় লাগছে, ভারসাম্য হয়ে গেলে শীঘ্রই সব স্বাভাবিক হবে বলেও তিনি দাবী করেন তিনি।
এসময় সভার প্রধান অতিথি উপজেলা চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন, ডিজিএমকে উপস্থিত হতে যোগাযোগ করতে বললে এজিএম ফোনে যোগাযোগ করলে জুন ক্লোজিং ব্যস্ততা সহ প্রয়োজনীয় কাজে ডিজিএম ফেনীতে অবস্থান করছেন বলে জানান।
অভিযোগ প্রসঙ্গে ডিজিএম সনদ কুমার ঘোষ জানান, গত তিন মাসের বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে জ্বালানি সংকট থেকে সারাদেশে বিদ্যুৎ এর অবস্থা ভালনা, সোনাগাজীতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় মহিপালের পাওয়ার গ্রিট কোম্পানি থেকে, সাম্প্রতিক ফেনী গ্রিট তাদের ট্রান্সফর্মা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে সেখান থেকে বারবার বিদ্যুৎ বন্ধ করছে এবং সময়ে সময়ে আমাদেরকে বন্ধ করার নির্দেশনা দিচ্ছেন, এই সমস্যা শুধু আমাদের নয় পাশবর্তী উপজেলাগুলোতেও বিদ্যমান।
আমরা সোনাগাজীর মানুষের সেবা নিশ্চিত করতে, বিদ্যুৎ এর সরবরাহ বাড়াতে বারইয়ারহাট থেকে স্পেশালি বিদ্যুৎ সংযোগ এনেছি, সাম্প্রতিক চৌদ্দগ্রাম থেকে ৩৩কেবি স্পেশাল লাইন করেছি, দাগনভূঞার তুলাতুলি থেকে স্পেশাল লাইন আনতেছি, উন্নয়ন কাজের কারণে এসময়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাট একটু বেশি হলেও এটি বেশিদিন থাকবেনা, উৎপাদন সংকট না থাকলে জুলাই মাস থেকে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ পাবে সোনাগাজী বাসী।
এসময় তিনি দাবী করেন আমি সনদ কুমার না যেই হোক ডিজিএম এখানে এর চেয়ে আলাদা কিছু করার সুযোগ নেই আমারা সাধ্যের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করছি গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করতে।
প্রকৌশলী মনির হোসেনের সাথে তিনি কোন খারাপ আচরণ করেননি দাবি করে বলেন, সেদিন ইউএনও মহোদয় কে অবগত করে চিঠি দিয়ে মাইকিং করে শাটডাউনের ঘোষণা করা হয়।
ভুতুড়ে বিলের ব্যাপারে ডিজিএম জানান, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এ সংক্রান্ত কোন ঘটনা জানা নেই, এমন ঘটনা ঘটে থাকলে তাৎক্ষণিক জানালে তিনি যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন ।