স্বীকৃতি বিশ্বাস, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়ার জন্য দেশের সকল জনগণের যেমন অবদান রয়েছে তেমনি অবদান রয়েছে সিপাহি জনতার।বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অসামান্য সাহসীকতার অবদান রাখার জন্য যে সাতজন বীরকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয় তাদের মধ্যে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ একজন।
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল জেলার মহিষখোলা গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মোহাম্মদ আমানত শেখ, মাতা জেন্নাতুন্নেসা। অল্প বয়সে বাবা-মাকে হারান ফলে শৈশবেই ডানপিটে হয়ে পড়েন। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ করে উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সপ্তম শ্রেণীর পর আর পড়াশোনা করেননি।
নূর মোহাম্মদ শেখ ১৯৫৯-এর ১৪ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস বা ইপিআর-এ যোগদান করেন।বর্তমানে যা বর্ডার গার্ড অফ বাংলাদেশ বা বিজিবি নামে পরিচিত। দীর্ঘদিন দিনাজপুর সীমান্তে চাকরি করে ১৯৭০ সালের ১০ জুলাই নূর মোহাম্মদকে যশোর সেক্টরে বদলি করা হয়। এরপর তিনি ল্যান্স নায়েক পদে পদোন্নতি পান। ১৯৭১ সালে যশোর অঞ্চল নিয়ে গঠিত ৮নং সেক্টরে স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগদান করেন। যুদ্ধ চলাকালীন যশোরের শার্শা থানার কাশিপুর সীমান্তের বয়রা অঞ্চলে ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদা’র নেতৃত্বে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন।
১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যশোরের গোয়ালহাটি ও ছুটিপুরে পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ন হয়ে গুলিবিদ্ধ হন এবং অসম অবিশ্বাস্য যুদ্ধে তিনি শত্রুপক্ষের এমন ক্ষতিসাধন করেন যে তারা এই মৃত্যুপথযাত্রী বীর যোদ্ধাকে বেয়নেট চার্জ করে চোখ দুটো উপড়ে ফেলে এবং মস্তক বিদীর্ন করে ঘিলু ছড়িয়ে ফেলে। পরে প্রতিরক্ষার সৈনিকরা এসে পাশের একটি ঝাড় থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে যশোরের শার্শা থানার কাশিপুর গ্রামে তাকে সমাহিত করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ নূর মোহম্মদকে ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। আজ বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের ৮৭ তম জন্মবার্ষিকীতে স্বশ্রদ্ধ সম্মান ও কৃতজ্ঞতা জানাই।