বাংলাদেশ ০৫:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :

সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,, সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,,০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০, ০১৭১২-৪৪৬৩০৬,০১৭১১-০০৬২১৪ সম্পাদক

     
ব্রেকিং নিউজ ::
মুন্সীগঞ্জ সদর ইউএনওর চরডুমুরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন সন্ধ্যার মধ্যে উপাচার্য, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসভবন ছাড়ার আল্টিমেটাম কুবি শিক্ষার্থীদের রাবিতে জড়ো হওয়া আন্দোলনকারীদের পুলিশ-বিজিবির ধাওয়া মেহেন্দিগঞ্জে অজ্ঞাতনামা নারীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার। মুন্সীগঞ্জে গায়েবানা জানাযা থেকে ঈমাম ও বিএনপি নেতাকে ধরে নিয়ে গেলো পুলিশ কোটা আন্দোলনের পক্ষে সংহতি জানিয়ে ফেনী ইউনিভার্সিটির বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের বিবৃতি চলমান পরিস্থিতিতে রাবি ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি আপাতত স্থগিত: উপাচার্য বিদেশের পাঠানো টাকা চাইতে গিয়ে বিপাকে প্রবাসী স্বামী রাজশাহীতে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পবিত্র আশুরা পালিত চট্রগ্রামের কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত ওয়াসিমের জানাজায় মানুষের ঢল পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া পৌরসভার রাস্তায় সমবায় সমিতি ভবনের ট্যাংকির ময়লা: জনদুর্ভোগ মুন্সীগঞ্জে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের উপর হামলা, আহত ৫ হরিপুরে, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড এর পক্ষ থেকে কর্মী মিটিং ও গ্রাহক সমাবেশ অনুষ্ঠিত। গৌরীপুরে উদীচী কার্য়ালয়ে হামলা ও ভাংচুর স্ত্রীর যৌতুক মামলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কারাগারে

মৃৎশিল্প মৃত প্রায় কিশোরগঞ্জে

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৫:০০:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ১৭০৮ বার পড়া হয়েছে

মৃৎশিল্প মৃত প্রায় কিশোরগঞ্জে

মাহফুজ রাজা, কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি ;
একসময় নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবহারিক বস্তু হিসেবে মাটির তৈরি থালা, বাসন, হাড়ি, পাতিল, ঘটি, বাটি, খেলনা ইত্যাদি ব্যবহার করলেও আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিপন্ন হতে বসেছে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার তালদশী পালপাড়া গ্রামের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। এ গ্রামের পাল সম্প্রদায়ের প্রধান পেশা ছিল এই মৃৎশিল্প। বর্তমানে এই স্থান দখল করেছে বিভিন্ন প্লাস্টিক, সিরামিক ও সিলভার সামগ্রী। ফলে এ অঞ্চলের মানুষ মৃৎশিল্পের ব্যবহার থেকে অনেকটা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আধুনিক যুগের প্লাষ্টিক সামগ্রীসহ অন্যান্য জিনিস পত্রের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পারায় এই শিল্পে ধস নেমেছে।
সেই সাথে মৃৎশিল্পে জড়িত তালদশী পালপাড়ার কুমার পরিবারগুলোও আর্থিক সংকটসহ নানা অভাব অনটনে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে মৃৎশিল্প থেকে। মৃৎশিল্পীদের আজ বড়ই দুর্দিন। অতি কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত কুমাররা। যদিও এর উপর নির্ভর করে তিনবেলা ডাল-ভাত জোটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের, তবুও জীবন জীবিকার তাগিদে কঠোর পরিশ্রম করে এ গ্রামের ৬-৭টি পরিবার এখনও বাপ-দাদার এ পেশাকে আঁকড়ে ধরে আছেন। তালদশীর এই মৃৎশিল্পীদের বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তারা উঠানে বসে মাটির হাড়ি, পাতিল, ঢাকনা, নৌকা, ব্যাংক, পুতুল, কলসিসহ বিভিন্ন জিনিস তৈরি করছেন। আন-কমন কিছু দেখতে চাইলে মৃৎশিল্পী পারুল রানী পাল তার ঘর থেকে কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি শিল্পকর্ম নিয়ে এলেন। যা দেখে অবাক হওয়ার মতই ছিল। পারুল রানী পাল বলেন, শিল্পমনা হলেই কেবল এর মর্ম বুঝবে। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিল্পকর্মও ছিল। কিন্তু, বিক্রি করতে নিয়ে গেছেন।
তিনি বলেন, অন্যান্য জিনিসের চেয়ে এই কাজে প্রচুর শ্রম ও সময় লাগে কিন্তু বিক্রি হয় কম। তিনি আরও বলেন, পরিশ্রমের তুলনায় তেমন অর্থ আসে না। মাঝেমধ্যে এই পেশা ছেড়ে দিতে মন চায়। কিন্তু কী করব! মৃৎশিল্পী নেপাল চন্দ্র পাল বলেন, মাটির জিনিস তৈরি করতে এঁটেল মাটির প্রয়োজন হয়। কিন্তু আশেপাশের কিছু ইটভাটার মালিকরা এই মাটি বেশি দাম দিয়ে কিনে নেয়। ফলে আমাদেরও বাধ্য হয়ে বেশি দামে কিনতে হয়। তিনি বলেন, ২৫০টাকা মণ লাকড়ি। প্রায় ২০মণ লাকড়ি পোড়াতে হয়। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, জমিজমা নেই। অন্য কোনও কাজও জানিনা। নইলে এ পেশা কবেই ছেড়ে দিতাম। আগে আমাদের সম্প্রদায়ের (পাল) সবাই এই পেশায় ছিল, এখন মাত্র ৬-৭টি পরিবার এ পেশা ধরে রাখছে। লাভ নাই! তিনি আরও বলেন, আমার এক মেয়ে, এক ছেলে। মেয়ে সামনে এসএসসি পরীক্ষা দিবে, ছেলে ৭ম শেণিতে পড়ে।
এ পেশা দিয়ে সংসার চালিয়ে ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ জোগানো বর্তমানে খুবই কষ্টকর। পালপাড়া গ্রামের ৭০বছর বয়সী প্রবীণ মৃৎশিল্পী হেলেন রানী পাল বলেন, এই কাজ করতে শরীরে প্রচুর শক্তি দরকার, কোমরেও জোর থাকতে হয়। এই কাজ করতে করতে আমার কোমর অচল হয়ে গেছে, তাই আর কাজ করতে পারি না। এখন আমার তিন ছেলে আর ছেলের বউ এই কাজ করে। মৃৎশিল্পী চঞ্চলা রানী পাল ও দীপালি রানী পালও একই কথা জানান। একসময় মাটির তৈরি জিনিসের কদর থাকলেও আধুনিক যুগের প্লাষ্টিক সামগ্রী সহ অন্যান্য জিনিস পত্রের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পারায় এই শিল্পে ধস নেমেছে। মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত কুমার পরিবারগুলো আর্থিক সংকটসহ নানা অভাব অনটনে, মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে মৃৎশিল্প থেকে। কুমার পরিবারগুলোর নেই কোন আধুনিক মেশিন ও সরঞ্জাম। অনেকেই এ পেশা ছেড়ে অন্য কাজের দিকে চলে যাচ্ছে। তবে সরকারি বা কোনও দাতা সংস্থার পৃষ্টপোষকতা পেলে মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে চান এখানকার মৃৎশিল্পীরা।
জনপ্রিয় সংবাদ

মুন্সীগঞ্জ সদর ইউএনওর চরডুমুরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন

মৃৎশিল্প মৃত প্রায় কিশোরগঞ্জে

আপডেট সময় ০৫:০০:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২
মাহফুজ রাজা, কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি ;
একসময় নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবহারিক বস্তু হিসেবে মাটির তৈরি থালা, বাসন, হাড়ি, পাতিল, ঘটি, বাটি, খেলনা ইত্যাদি ব্যবহার করলেও আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিপন্ন হতে বসেছে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার তালদশী পালপাড়া গ্রামের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। এ গ্রামের পাল সম্প্রদায়ের প্রধান পেশা ছিল এই মৃৎশিল্প। বর্তমানে এই স্থান দখল করেছে বিভিন্ন প্লাস্টিক, সিরামিক ও সিলভার সামগ্রী। ফলে এ অঞ্চলের মানুষ মৃৎশিল্পের ব্যবহার থেকে অনেকটা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আধুনিক যুগের প্লাষ্টিক সামগ্রীসহ অন্যান্য জিনিস পত্রের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পারায় এই শিল্পে ধস নেমেছে।
সেই সাথে মৃৎশিল্পে জড়িত তালদশী পালপাড়ার কুমার পরিবারগুলোও আর্থিক সংকটসহ নানা অভাব অনটনে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে মৃৎশিল্প থেকে। মৃৎশিল্পীদের আজ বড়ই দুর্দিন। অতি কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত কুমাররা। যদিও এর উপর নির্ভর করে তিনবেলা ডাল-ভাত জোটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের, তবুও জীবন জীবিকার তাগিদে কঠোর পরিশ্রম করে এ গ্রামের ৬-৭টি পরিবার এখনও বাপ-দাদার এ পেশাকে আঁকড়ে ধরে আছেন। তালদশীর এই মৃৎশিল্পীদের বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তারা উঠানে বসে মাটির হাড়ি, পাতিল, ঢাকনা, নৌকা, ব্যাংক, পুতুল, কলসিসহ বিভিন্ন জিনিস তৈরি করছেন। আন-কমন কিছু দেখতে চাইলে মৃৎশিল্পী পারুল রানী পাল তার ঘর থেকে কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি শিল্পকর্ম নিয়ে এলেন। যা দেখে অবাক হওয়ার মতই ছিল। পারুল রানী পাল বলেন, শিল্পমনা হলেই কেবল এর মর্ম বুঝবে। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিল্পকর্মও ছিল। কিন্তু, বিক্রি করতে নিয়ে গেছেন।
তিনি বলেন, অন্যান্য জিনিসের চেয়ে এই কাজে প্রচুর শ্রম ও সময় লাগে কিন্তু বিক্রি হয় কম। তিনি আরও বলেন, পরিশ্রমের তুলনায় তেমন অর্থ আসে না। মাঝেমধ্যে এই পেশা ছেড়ে দিতে মন চায়। কিন্তু কী করব! মৃৎশিল্পী নেপাল চন্দ্র পাল বলেন, মাটির জিনিস তৈরি করতে এঁটেল মাটির প্রয়োজন হয়। কিন্তু আশেপাশের কিছু ইটভাটার মালিকরা এই মাটি বেশি দাম দিয়ে কিনে নেয়। ফলে আমাদেরও বাধ্য হয়ে বেশি দামে কিনতে হয়। তিনি বলেন, ২৫০টাকা মণ লাকড়ি। প্রায় ২০মণ লাকড়ি পোড়াতে হয়। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, জমিজমা নেই। অন্য কোনও কাজও জানিনা। নইলে এ পেশা কবেই ছেড়ে দিতাম। আগে আমাদের সম্প্রদায়ের (পাল) সবাই এই পেশায় ছিল, এখন মাত্র ৬-৭টি পরিবার এ পেশা ধরে রাখছে। লাভ নাই! তিনি আরও বলেন, আমার এক মেয়ে, এক ছেলে। মেয়ে সামনে এসএসসি পরীক্ষা দিবে, ছেলে ৭ম শেণিতে পড়ে।
এ পেশা দিয়ে সংসার চালিয়ে ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ জোগানো বর্তমানে খুবই কষ্টকর। পালপাড়া গ্রামের ৭০বছর বয়সী প্রবীণ মৃৎশিল্পী হেলেন রানী পাল বলেন, এই কাজ করতে শরীরে প্রচুর শক্তি দরকার, কোমরেও জোর থাকতে হয়। এই কাজ করতে করতে আমার কোমর অচল হয়ে গেছে, তাই আর কাজ করতে পারি না। এখন আমার তিন ছেলে আর ছেলের বউ এই কাজ করে। মৃৎশিল্পী চঞ্চলা রানী পাল ও দীপালি রানী পালও একই কথা জানান। একসময় মাটির তৈরি জিনিসের কদর থাকলেও আধুনিক যুগের প্লাষ্টিক সামগ্রী সহ অন্যান্য জিনিস পত্রের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পারায় এই শিল্পে ধস নেমেছে। মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত কুমার পরিবারগুলো আর্থিক সংকটসহ নানা অভাব অনটনে, মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে মৃৎশিল্প থেকে। কুমার পরিবারগুলোর নেই কোন আধুনিক মেশিন ও সরঞ্জাম। অনেকেই এ পেশা ছেড়ে অন্য কাজের দিকে চলে যাচ্ছে। তবে সরকারি বা কোনও দাতা সংস্থার পৃষ্টপোষকতা পেলে মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে চান এখানকার মৃৎশিল্পীরা।