মোস্তফা মিয়া স্টাফ রিপোর্টার রংপুর
রোববার দুপুরে রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন এবং জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে, দেশীয় সিগারেট শিল্প রক্ষায় সংশ্লিষ্ট শ্রমিক কর্মচারী এবং তামাক চাষিরা। স্মারকলিপিতে বলা হয়, আমরা রংপুর বিভাগের তামাক চাষী, সিগারেট উৎপাদন ও বিপননকারী। উন্নত তামাক চাষে আমাদের রংপুর বিভাগ এর ঐতিহ্য দেশসহ বিশ্বে সমাদৃত। সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা ষড়ঋতুর বাংলাদেশে কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতির এই দেশে অন্যতম শস্য “তামাক”। নদী অববাহিকায় আমরা সুদীর্ঘ কাল হতে উন্নত তামাক হতে সিগারেট উৎপাদন করে আসছি, যা আজ আমাদের ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে।
আমরা তামাক চাষী ও শ্রমজীবিরা তামাক শিল্পের উপর ভিত্তি করে আমাদের স্বপ্ন বুনি ও আমাদের দৈনন্দিন জীবন জীবিকা নির্বাহ করি। আমাদের জীবন জীবিকা এ শিল্প ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার – আমার প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো সিগারেট অর্থাৎ ‘তামাক’ শিল্পের বিশাল বাজার বিদ্যমান। সিগারেট শিল্পের এই বৃহৎ বাজারে আমাদের তামাক চাষিরা উন্নত তামাক উৎপাদন করে এই শিল্পে সরবরাহ করে, ফলে এই শিল্পে বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মস্থানের সৃষ্টি হয়। যার ফলে বেশি দামে বিদেশ হতে তামাক আমদানী করতে হয়না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি অবগত আছেন যে, জাতীয় বাজেটের বৃহৎ ও একক খাতে অর্থের যোগান আসে এই তামাক শিল্প থেকে। যার পরিমাণ প্রায় ৩২- ৩৩ হাজার কোটি টাকা। যা রাষ্ট্রের ব্যয় মেটাতে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার শত ব্যস্ততার মাঝেও দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় সরকারের প্রচেষ্টায় ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের বাজেটে তৎকালীন মাননীয় অর্থমন্ত্রী দেশীয় সিগারেট ব্র্যান্ড ও বিদেশী সিগারেট ব্র্যান্ডের সাথে সমমূল্যে প্রতিযোগিতা করে বাজারে বিক্রি করা যাবে না বুঝতে পেরে নিম্নস্লাব এর সিগারেটের জন্য দেশীয় এবং দেশের বাইরে চলে বা চলতো এমন নামীয় সিগারেট ব্র্যান্ড এর জন্য দুইটি পৃথক মূল্য ও কর হার নির্ধারণ করে ছিলেন দেশীয় মালিকানাধীন কোম্পানি গুলোকে সুরক্ষা দেয়ার জন্যই এটা করা হয়েছিল। বাজেট ২০১৭-১৮ অনুযায়ী এনবিআর নিম্নরূপ SRO জারি করেঃ (ক) সাধারণ আদেশ নং – ০৭/মূসক/২০১৭, তারিখ – ০১ জুন, ২০১৭। (খ) বিশেষ আদেশ নং – ০৬/ মূসক/২০১৭, তারিখ – ০১ জুলাই, ২০১৭।
(গ) প্রজ্ঞাপন নং ০৮.০১.০০০০.০৬৮. ১৬.০০১.১৭১৪- মূসক/২০১৭, তারিখ- ০৩ জুন,২০১৭। (ঘ) সাধারণ আদেশ নং – ১৫/মূসক/২০১৭, তারিখ – ০১ জুলাই, ২০১৭।
এছাড়াও ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় মহান জাতীয় সংসদে ঘোষিত নীতিমালায় বলা হয়েছে যে, (১) দেশে ব্যবসারত বিদেশী তামাক কোম্পানির আন্তর্জাতিক ও উন্নতমানের সিগারেট, শুধুমাত্র মধ্যম মূল্যস্তরের এবং উচ্চ মূল্যস্তরই উৎপাদন ও বিক্রয় করা যাবে (২) নিম্ন মূল্যে স্তরে দেশীয় শিল্পের দেশীয় সিগারেট ব্র্যান্ড উৎপাদন ও বিক্রয় করবে অর্থাৎ এই স্লাব শুধুমাত্র দেশীয় শিল্পের দেশীয় সিগারেট ব্র্যান্ড এর জন্য থাকছে।
কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য ও অদৃশ্য কারনে সময় উপযোগী ও বাস্তব সম্মত উপরোক্ত প্রস্তবনা বাস্তবায়নের জন্য অদ্যবধি কার্যকরী কোন প্রকার পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। যার ফলে দেশীয় শিল্প এবং দেশীয় ব্র্যান্ড আজ সংকটাপন্ন অর্থনৈতিক দিক থেকে যা অসনিসংকেত।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আজ দেশের তামাক শিল্পে শত্রু পরিলক্ষিত! তারা ঐতিহ্যবাহী তামাক শিল্পকে ধ্বংসের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। তারা বিভিন্ন সময় বিদেশিদের হয়ে বিভিন্ন অযৌক্তিক তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে বিভ্রান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারায় লিপ্ত। মূলত দেশের অর্থনীতিতে তাদের কোন অংশগ্রহন নেই। তারা চায় দেশীয় স্বয়ংসম্পূর্ণ সিগারেট শিল্প ধ্বংস করে এ শিল্পকে আমদানি নির্ভর শিল্পে পরিণত করে বিদেশী সিগারেট শিল্পের বাজার সৃষ্টি করা।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ফিলিপ মরিস ইন্টারন্যাশনাল ইনকর্পোরেশন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনাল প্রভৃতি বিদেশি কোম্পানি, তাদের ব্যবসা এদেশে দিন দিন বৃদ্ধি করতে পারলেও দেশীয় সিগারেট কোম্পানি গুলো আজ নিজ দেশেই প্রতিবন্ধকতা ও বিড়ম্বনার শিকার। ফলে আমাদের উৎপাদিত ফসল তামাক একদিকে ন্যায্যমূল্য হারাচ্ছে অন্যদিকে উচ্চ মূল্যে আমদানির দিকে ঝুঁকছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দেশের তামাক শিল্পের এই ক্রান্তিকালে আপনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি আমরা দেশীয় সিগারেট উৎপাদন ও বিপননকারী শ্রমিক কর্মচারীবৃন্দ ও এই শিল্পের প্রান “তামাক চাষীরা দেশীয় এই শিল্পকে রক্ষার্থে আপনি “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন ৭(ক) ও ৭(খ)” দিয়েছিলেন যা এই শিল্পকে রক্ষার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য কারণে আপনার অনুশাসন বাস্তবায়নে সিগারেট শিল্প সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষ গড়িমসি করছে। স্মারকলিপি ও মানববন্ধন থেকে।