বাংলাদেশ ০২:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ জুলাই ২০২৪, ৭ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :

সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,, সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,,০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০, ০১৭১২-৪৪৬৩০৬,০১৭১১-০০৬২১৪ সম্পাদক

     
ব্রেকিং নিউজ ::
মুন্সীগঞ্জ সদর ইউএনওর চরডুমুরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন সন্ধ্যার মধ্যে উপাচার্য, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসভবন ছাড়ার আল্টিমেটাম কুবি শিক্ষার্থীদের রাবিতে জড়ো হওয়া আন্দোলনকারীদের পুলিশ-বিজিবির ধাওয়া মেহেন্দিগঞ্জে অজ্ঞাতনামা নারীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার। মুন্সীগঞ্জে গায়েবানা জানাযা থেকে ঈমাম ও বিএনপি নেতাকে ধরে নিয়ে গেলো পুলিশ কোটা আন্দোলনের পক্ষে সংহতি জানিয়ে ফেনী ইউনিভার্সিটির বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের বিবৃতি চলমান পরিস্থিতিতে রাবি ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি আপাতত স্থগিত: উপাচার্য বিদেশের পাঠানো টাকা চাইতে গিয়ে বিপাকে প্রবাসী স্বামী রাজশাহীতে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পবিত্র আশুরা পালিত চট্রগ্রামের কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত ওয়াসিমের জানাজায় মানুষের ঢল পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া পৌরসভার রাস্তায় সমবায় সমিতি ভবনের ট্যাংকির ময়লা: জনদুর্ভোগ মুন্সীগঞ্জে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের উপর হামলা, আহত ৫ হরিপুরে, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড এর পক্ষ থেকে কর্মী মিটিং ও গ্রাহক সমাবেশ অনুষ্ঠিত। গৌরীপুরে উদীচী কার্য়ালয়ে হামলা ও ভাংচুর স্ত্রীর যৌতুক মামলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কারাগারে

সেদিন রাতে খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো। হঠাৎ করে জোরে বিদ্যুৎ

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১০:২৮:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ মার্চ ২০২২
  • ১৭৪৬ বার পড়া হয়েছে

সেদিন রাতে খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো। হঠাৎ করে জোরে বিদ্যুৎ

 

 

 

অপ্রাপ্তি মেহেদী হাসান শাওন

সেদিন রাতে খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো। হঠাৎ করে জোরে বিদ্যুৎ চমকানোর শব্দ শুনেই নিলীমা কথা মনে পড়ে গেলো। কারণ বৃষ্টিময় একটি রাতে আমরা এক ছাতার নিচে হেটেছিলাম অনেকটা পথ। হাটতে-হাটতে হঠাৎ জোরে বিদ্যুৎ চমকানোর শব্দ শোনার সাথেই নিলীমা আমার হাত শক্ত করে ধরে থাকলো। আমার হাত ধরাতেই সে যেনো ভরসা খুজে পেলো। নিজেকে আরও দায়িত্ববান ভাবতে শুরু করলাম। ওর এই ভরসা কখনো নষ্ট হতে দিবোনা।  নিলীমার সাথে এটিই আমার সবচেয়ে সুন্দর স্মৃতি। বলছি নিলীমা নামের একটি মেয়ের কথা। যাকে আমি খুব ভালোবাসি। মেয়েটি ছিলো খুব চঞ্চল প্রকৃতির। সেই ২০০৭ সাল, যখন ওর সাথে পরিচয় হয় আমার৷ একসাথে পড়াশুনা করেছি৷ প্রথম দেখাতেই ওকে মনের অজান্তে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। সে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলো, অবশ্যই আমার থেকেও মেধাবী। পড়াশোনা নিয়ে ওর সাথে সবসময়ই কথা বলতাম। সেও আমার সাথে কথা বলতে খুব স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতো৷ ইতোমধ্যেই আমাদের মধ্যে বেশ ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে৷ নিলীমা আমার কাছে তার সব কথা শেয়ার করতো। কোনো এক রবিবার আমার বন্ধু সাগর ও নিলীমাক কে সাথে নিয়ে মুভি দেখতে গেলাম। তখনই সাগরের সাথে নিলীমার পরিচয় করিয়ে দেই।

 

সাগর আমার গার্লফ্রেন্ডকে দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলো। সাগর হচ্ছে আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। আমরা একই রুমে থাকতাম। দির্ঘ ৫ বছর আমার আর সাগরের মধ্যে বন্ধুত্ব। সব কাজ ওর সাথে করতাম। একসাথে রবিবার মুভি দেখতে যেতাম, সারাদিন ঘুরে বেড়াতাম। আমার বন্ধু আমার সম্পর্কে সব কিছু জানে। কারণ আমি তাকে সবকিছুই বলতাম। নিলীমাকে নাকি আমার গার্লফ্রেন্ড হিসেবে সাগরের পছন্দ হয়নি৷ কেমন লাগে বলুন তো, বেস্ট ফ্রেন্ড যদি আপনার গার্লফ্রেন্ডকে পছন্দ না করে। কারণ সে মনে করে নিলীমা আমাকে ধোকা দেবে৷ আমি নিলীমাকে তখনও বলতে পারিনি যে আমি ওকে কতটা ভালোবাসি। যদিও আমার বন্ধু আমাকে সবসময় নিলীমার থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিতো৷ ওর চলাফেরা, কথাবার্তা কোনোটাই নাকি সাগরের  ভালো লাগেনা। তবে নিলীমার সামনে এরকম কিছু প্রকাশ করতো না, স্বাভাবিক আচরণ করতো।

 

একদিন রাতে হঠাৎ নিলীমা আমাকে ফোন করলো। ফোন রিসিভ করার সাথেই সে কান্নায় ভেঙে পড়লো। তার কান্নার আওয়াজ শুনে আমিও অস্তির হয়ে গেলাম৷ সে কান্না করতে করতে আমাকে বলছে, “আবির, আমার বাবা রোড এক্সিডেন্ট করেছে। জরুরিভাবে রক্ত দিতে হবে।” সৌভাগ্যজনকভাবে ওর বাবার রক্তের গ্রুপের সাথে আমার রক্তের গ্রুপ মিলে যায়। আমার রক্তের গ্রুপ ছিলো ‘এ’ নেগেটিভ। কোথাও রক্ত পাওয়া যাচ্ছিলো না। আমি হাসপাতালের ঠিকানা নিয়ে দ্রুত সেখানে পৌছে গেলাম। ডাক্তারের অনুমতি পাওয়ার পর তাড়াতাড়ি রক্ত দিলাম। তারপর নিলীমা তার পরিবারের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিলো। ওর উপকার করতে পেরেছি ভেবেই তখন আমি খুব আনন্দিত ছিলাম। সেদিনের ঘটনার পর থেকে বুঝতে পারলাম মেয়েটি আমার প্রতি ক্রমেই আকৃষ্ট হচ্ছে। সবসময় আমার খোজ-খবর নিচ্ছে।

 

বিষয়গুলো আমার ভালো লাগছে। আমিতো আবার সাগরকে সবকিছু না বলে থাকতে পারিনা। সে সব শুনে বললো, “তুই নিলীমার বাবাকে রক্ত দিয়েছিস তাই তোর সাথে মিষ্টিমুখে কথা বলছে। ওসব মেয়েদের  বিশ্বাস করা ঠিক নয়।” এই কথা শুনে আমার মন খারাপ হয়ে যাইহোক, নিলীমাকে আমি প্রপোজ করবো ভাবছি৷ কিন্তু মনে সাহস পাচ্ছিলাম না যদি সে মন খারাপ করে? আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়? নানারকম চিন্তাভাবনায় কিছুদিন অতিবাহিত হলো। বেশিদিন মনের মধ্যে কথা চেপে রাখতে পারলাম না। সাগরকে বিস্তারিত বললাম। সে আমার কথা শুনে একটু রাগান্বিত হলো। সে বললো, “নিলীমাকে কে প্রপোজ করিসনা। তুই ওর থেকে ভালো ও সুন্দর মেয়ে পাবি।” প্রিয় বন্ধুর মুখে এসব কথা শুনে আমি নিরুৎসাহিত হয়ে যেতে লাগলাম। তবুও আমার প্রতি নিলীমার কোমল আচরণের স্মৃতিগুলো আমার বারে বারে মনে পড়ছিলো। শেষ পর্যন্ত আমি ওকে কে প্রোপোজ করার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং সাগর সেই বিষটি জানেনা৷ প্রথমবারের মতো আমার বন্ধুকে এত বড় একটি কাজ না জানিয়েই করতে যাচ্ছি।

 

সাগর আবার একগুয়েমির মানুষ। যদি হুট করে কিছু একটা করে বসে তখন কি হবে? মনে মনে খুব ভয় পাচ্ছিলাম, আবার নিজেই নিজেকে সাহস ও সান্ত্বনা দিচ্ছিলাম৷ বিকালবেলা একটি পার্কে নিলীমকে আমার সাথে দেখা করতে বললাম। সেই দিনটি ছিলো ২০০৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর, যেদিন আমি ওকে প্রপোজ করেছিলাম। দিনটি সারাজীবন আমার কাছে স্বরণীয় হয়ে থাকবে। পকেটে একটি আংটি রেখেছিলাম। যদি সেও আমাকে ভালোবেসে থাকে তাহলে সেই আংটি ওর হাতে পরিয়ে দেবো বলে ঠিক করেছিলাম। কিন্তু ওর সামনে গিয়ে যখন দাড়ালাম তখন ভয়ে আমার হার্টবিট বেড়ে যেতে লাগলো৷ আমি নিলীমার হাত ধরেই আংটি পড়িয়ে দিলাম এবং চোখ বন্ধ করে বলে ফেললাম, ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’। কথাটি শোনার সাথেই সে আমাকে গালে একটি থাপ্পর বসিয়ে দিলো! আমি আর মাথা উঁচু করার সাহস পেলাম না। কিন্তু পরক্ষণেই সে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে আর কেদে কেদে বলছে, ‘আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি’। তুমি একটা ভীতু ছেলে।

 

এতদিন বলোনি কেনো? আমি তোমার মুখে এই কথাটি শোনার অপেক্ষায় ছিলাম।” ওর মুখে এসব কথা শুনে আমিও কেদে ফেললাম। আমার মনে অনন্দের ঝড় বয়ে যেতে লাগলো। তারপর থেকে সাগরকে না জানিয়েই আমরা একসাথে ঘুরতে যেতাম, ঘুড়ে বেড়াতাম৷ ওর কাছে এসব বিষয় গোপন রাখার কারণে সবকিছু ঠিকঠাক চললেও মন খারাপ ছিলো। মনে হচ্ছিলো আমি অন্যায় করছি। বেশিদিন আমাদের সম্পর্ক গোপন রাখতে পারলাম না। তাই ওকে সব ঘটনা বলে দিলাম। সাগর শুনেই কেদে ফেললো আর বললো, “আমি কি তোর বেস্ট ফ্রেন্ড নই? তুই আমার কাছেও গোপন করতে পারলি কেমনে?” আমিও মনে মনে অনুতপ্ত হলাম এবং তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলাম। সে আবার খুবই আবেগপ্রবণ ছেলে। আমরা দুইজন এতই ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলাম যে, কোনো কথা গোপন রাখতাম না। ওর মনে অনেক কষ্ট কারণ তার বাবা এবং বড় ভাই অবৈধ ড্রাগ সাপ্লাই করে বিভিন্ন দেশে। যদিও সে তার পরিবারে অনেকে আদরের। কিন্তু সে তার বাবা এবং বড় ভাইয়ের এসব অবৈধ ব্যাবসা মোটেই পছন্দ করতো না৷ অতি গোপন এসব কথা সাগর মাঝে মাঝে আমার সাথে শেয়ার করতো আর দুঃখ প্রকাশ করতো। কিন্তু কিছুদিন থেকেই সাগর আমাকে কিছু বলছে না৷ সবসময় মন খারাপ করে উদাসীন হয়ে বসে থাকে। কিছু জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেয়না। ভালো থাকার নাটক করে।এভাবেই কেটে গেলো অনেকটা দিন। একদিন নিলীমা আমাকে তার বাড়িতে যেতে বললো। তার বাবা নাকি আমাকে দেখতে চেয়েছেন। আমি শুনে কিছুটা ঘাবড়ে গেলাম এবং সাগরকে বললাম আমার সাথে যেতে। কিন্তু সে বললো, “আমি আমার বাড়িতে যাচ্ছি  কিছুদিন পরে ফিরে আসবো।

 

” আমি ওকে বিদায় জানালাম। এরপর নিলীমার বাড়িতে গেলাম, ওর বাবার সাথে অনেকক্ষণ গল্প করলাম। আমি তাকে রক্ত দান করেছিলাম তাই উনি আমাকে ধন্যবাদ জানালেন। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ হলো। নিলীমার বাবা অনেক খুশি হলেন। এরপর থেকে আমি নিয়মিতই ওদের বাড়িতে যেতে থাকি। ওর পরিবারের সবার সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠলো। এতোদিনে ডেভিড ওর বাড়ি থেকে ফিরে এসেছে। সেদিন ছিলো রবিবার। এসেই আমাকে বলছে, “চল, তোর গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে একটা মুভি দেখে আসি।” ওর চোখেমুখে খুশি দেখে আমার ভালো লাগলো। আমিও রাজি হয়ে গেলাম। নিলীমাকে ফোন করে আসতে বললাম। তিনজন থিয়েটারে গেলাম মুভি দেখতে। আমি আর নিলীমা একসাথে বসলাম। সাগর পাচ মিনিট পর আমাদের তিনজনের জন্য তিনটি কোল্ড ড্রিংকস নিয়ে এলো। ড্রিংকসের মুখ খোলার খুলেছি কিন্তু খেতে পারলাম না কারণ সাগরের ফোন হঠাৎ বেজে উঠলো। ফোন পেয়ে ওকে অনেক চিন্তিত আর বিমর্ষ দেখা গেলো। সে তার আসন থেকে উঠে দাড়ালো এবং তড়িঘড়ি করে চলে যেতে লাগলো।

 

নিলীমাকে বসিয়ে রেখেই আমি সাগরের পিছু নিলাম আর ওকে জিজ্ঞেস করতে লাগলাম কি হয়েছে? ওর পিছু যেতে কোনো এক ব্যাক্তির সাথে ধাক্কা লেগে আমার হাতের কোল্ড ড্রিংকস পড়ে গেলো, খেতে পারলাম না। থিয়েটারের বাইরে এসে ওকে ধরে ফেললাম। তারপর জিজ্ঞেস করলাম সে কেনো এইরকম দ্রুত বেরিয়ে এলো। উত্তরে সে বললো, “আমার ভাইকে কারা যেনো বাসায় এসে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে গেছে। অবস্থা খুবই আশংকাজনক। আমি আমার ভাইয়ের কাছে যাচ্ছি।” এই বলে সে চলে গেলো। আমি বিধ্বস্ত মন নিয়ে নিলীমার কাছে চলে এলাম এবং তাকে ঘটনাটি বিস্তারিত বললাম। আমি সাগরের ভাইকে একবার দেখেছিলাম৷ তার মুখটা বারবার মনে পড়তে লাগলো। দুজনে বিমর্ষ মন নিয়ে মুভি দেখলাম। তারপর নিলীমাকে তার বাসায় রেখে আসলাম। পরদিন বিকালবেলা নিলীমা আমাকে ফোন দিয়ে বললো ওর নাকি খুব বমি হচ্ছে এবং মাথা ব্যাথা করছে। যে মেয়েটার কোনো খারাপ অভ্যাস নেই এবং খুব বেশি রোগে আক্রান্ত হয়না সে হঠাৎ করে কেনো অসুস্থ হলো তা নিয়ে চিন্তা করতে লাগলাম৷ আমি সময় নষ্ট না করে ওকে দেখতে গেলাম। অবস্থা খারাপ দেখে ওর পরিবারকে হাসপাতালে নিতে বললাম। আমার কথামতো ওকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো।

 

সেখানে ওর চিকিৎসা চলতে থাকলো। অনেক রাত হয়ে গেলে আমি বাসায় ফিরে আসলাম। পরেরদিন সকালে ওর বাবা আমাকে ফোন করে খুব জোড়ে কান্না করছে। অতিরিক্ত কান্নার কারণে কথা বলতে পারছে না। শুধু বললো, “আমাদের বসায় এসো।” আমি খুব ঘাবড়ে গেলাম এবং দ্রুত ওদের বাসায় গেলাম। বাসায় ঢুকেই দেখি ওর পরিবারের সবাই খুব কান্না করছে। পাশেই নিলীমাকে কে শোয়ানো রাখা আছে। ওকে কে দেখে আমি খুব ভয় পেয়ে গেলাম। দেখে মনে হচ্ছে ঘুমাচ্ছে। কিন্তু বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে সে আর পৃথিবীতে নেই! আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। আমার হুশ ফিরে এলো এবং আমিও কান্না করতে লাগলাম। নিলীমার বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম, “কিভাবে এসব হলো?” জবাবে উনি বললেন, “ডাক্তার বলেছে ইন্টারনাল ব্লিডিং হওয়ার কারণে ওর মৃত্যু হয়েছে, কিডনি বিকল হয়ে গিয়েছিলো।” ওর বাবার মুখে এসব শুনে আমি কিছুতেই এরকম মৃত্যু মেনে নিতে পারছিলাম না। ওর দাফন সম্পন্ন হলো। শোকে, দুঃখে আমি বিপর্যস্ত হয়ে গেলাম। ওর স্মৃতি গুলো শুধু মনে পড়ে আর মুখটা ভেসে ওঠে। এদিকে সাগরের কোনো খোজ নেই।

 

ওর ফোনটাও বন্ধ। এভাবে কেটে গেলো আরও চার-পাঁচ দিন। হঠাৎ একদিন পত্রিকায় দেখতে পেলাম ওর বড় ভাইয়ের ছবি ছাপানো হয়েছে। আমি আগ্রহ নিয়ে খবরটি পড়তে লাগলাম। নিউজে ওর ভাইয়ের মৃত্যুর খবর ছাপানো হয়েছে। ওর ভাই একজন অবৈধ ড্রাগ সাপ্লাইয়ার। তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী পক্ষ বাসায় ঢুকে ছুড়িকাঘাতে হত্যা করেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পুলিশ শফিকের (সাগরের বড় ভাই) বাড়িতে ইনভেস্টিগেশন চালানোর সময় অনেক প্রকার অবৈধ ড্রাগের সন্ধান পেয়েছে৷ এছাড়াও ‘রাইসিন’ নামক বিষাক্ত পদার্থের সন্ধান পাওয়া গেছে৷ রাইসিন এমন একটি বিষাক্ত পদার্থ যা দেহের মধ্যে কোনোভাবে প্রবেশ করলে মাত্রা অনুযায়ী আক্রান্তের মৃত্যু হতে পারে। দেহে প্রবেশের পর মাথা ব্যাথা বা বমি হয়। তারপর শরীরের বিভিন্ন অংশ বিকল হতে থাকে। এক পর্যায়ে মাথা, কিডনি বা লিভারে রক্তক্ষরণ হওয়া শুরু করে এবং ৩৬ থেকে ৭২ ঘন্টার মধ্যে রোগী মৃত্যুবরণ করে। আমি এই নিউজটি পড়ে থমকে গেলাম। নিলীমার ডেথ সার্টিফিকেটে তো এই ধরনের লক্ষণ গুলোর কথাই বলা হয়েছিলো। আমি পাগলের মতো নিলীমার বাড়িতে ছুটে গেলাম এবং ওর বাবাকে সবকিছু বললাম। সবকিছু শুনে ওর বাবা মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি স্বাভাবিক হলে আমরা ব্যাপারটি পুলিশকে জানানোর সিদ্ধান্ত নিলাম।

 

সাগরের ভাইয়ের হত্যাকারীদের ধরতে যেই পুলিশ অফিসার তদন্ত চালাচ্ছেন আমরা সেই অফিসারের সঙ্গে সাক্ষাত করলাম। পুলিশ সমস্ত ঘটনা মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। তিনি ধারণা করলেন নিলীমাকে রাইসিন প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে৷ যাতে মনে হয় ন্যাচারাল ডেথ। কিন্তু কিভাবে? আমি ওর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়ার কারণে পুলিশ অফিসার আমাকে অগণিত প্রশ্ন করতে লাগলেন। নিলীমা অসুস্থ হওয়ার আগের দিন আমরা মুভি দেখতে গিয়েছিলাম সাগরসহ। এই ঘটনাটিও আমি পুলিশ অফিসারকে জানালাম। তখন তিনি সাগর সম্পর্কে জানতে চাইলেন। আমি ওর সম্পর্কে সবকিছু বললাম। মুভি দেখার দিন আমরা কিছু খেয়েছিলাম কিনা তা পুলিশ অফিসার জানতে চাইলো। আমি বললাম, “সাগর আমাদের জন্য কোল্ড ড্রিংকস নিয়ে এসেছিলো। কিন্তু আমার হাত থেকে ড্রিংকসটি পড়ে যায় এবং আমি খেতে পারিনি। নিলীমা তার হাতে থাকা কোল্ড ড্রিংকসটি খেয়েছিলো। পুলিশ অফিসার আবার প্রশ্ন করলেন, “সাগর কোল্ড ড্রিংকস কি আপনার সামনে নিয়েছিলো?” আমি বললাম না, পাচ মিনিট পর সে কোল্ড ড্রিংকস নিয়ে এসেছিলো।

 

অফিসার সবকিছু শুনে সাগরের ঠিকানাসহ সম্পুর্ণ তথ্য নিয়ে নিলেন। আমি ওর ছবি আমার ফোন থেকে দিয়ে দিলাম। তিনি আমাদের যেতে বললেন এবং পরে দরকার হলে আবার ডেকে নিবেন বলে দিলেন। ঠিক সাতদিন পর ঐ পুলিশ অফিসার আমাদের থানায় ডাকলেন। আমরা গিয়ে দেখলাম সাগর কারাগারে নিস্তব্ধ হয়ে বসে আছে। ওকে দেখেই আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। কেনো আমার বন্ধুকে কারাগারে নেয়া হয়েছে আমি পুলিশের কাছে জানতে চাইলাম। ইতোমধ্যেই সাগর পুলিশকে জবানবন্দি দিয়ে ফেলেছে। তবু্ও পুলিশ অফিসার আমাকে ওর মুখে সবকিছু শুনতে বললেন। আমি আস্তে আস্তে ওর দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম। দেহের সমস্ত শক্তি যেনো শেষ হয়ে আসছিলো। আমি ওর কাছে যাওয়ার সাথেই সে বলে উঠলো, “আমি নিলীমাকে হত্যা করেছি। প্রথম যেদিন ওকে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলি সেদিনি ওকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। তুই যাতে ওর জীবনে না আসতে পারিস তাই তোকে বলতাম নিলীমা ভালো মেয়ে নয়।

 

তুই যাতে ওকে না ভালোবাসিস, ওকে না প্রপোজ করিস তাই বলতাম নিলীমা কে তোর গার্লফ্রেন্ড হিসেবে আমার পছন্দ হয়নি। ওর মুখে এসব কথা শুনছিলাম আর আমার চোখ দিয়ে পানি ঝরে পড়ছিলো। সে আরও বলতে থাকলো, “তোরা একসাথে প্রতিদিন কোথায় যাচ্ছিস, কি করছিস প্রতিটি বিষয়ে আমি খোজ রাখতাম। লুকিয়ে লুকিয়ে তোদের পিছু নিতাম। যেদিন তোরা পার্কে একে অপরকে প্রপোজ করলি সেদিন আমি কিছুতেই নিজেকে ঠিক রাখতে পারছিলাম না। তুই নিয়মিত নিলীমার বাড়িতে যাতায়াত করতে থাকিস আর আমার মনে হিংসা জন্মাতে থাকে। তাই তোদের দুজনকে একসাথেই হত্যা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কিভাবে করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। আমার বড় ভাইকে আমি সবকিছু জানাই। সে আমাকে রাইসিন প্রয়োগ করারা বুদ্ধি দেয়। সুযোগমতো তোদের মুভি দেখার নাম করে একসাথে থিয়েটারে নিয়ে যাই৷ দুটি কোল্ড ড্রিংকসে রাইসিন মিশিয়ে তোদের খেতে দেই। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে আমার ভাইকে তখন কারা যেনো আক্রমণ করে।

 

আমি ফোন পেয়ে চলে যাওয়ার সময় তুই ও আমার পিছু নিলি। ড্রিংকসটা তুই খেতে পারিসনি। তুই বেচে গেলি আর নিলীমা খাওয়ার পর মারা গেলো। আমাকে ক্ষমা করে দিস বন্ধু! I’m sorry.” আমি ওর মুখে এসব কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। ওকে কি বলবো ভাষা খুজে পাচ্ছিলাম না। উন্মাদের মতো আচরণ করতে লাগলাম। আর আমার মনে হতে লাগলো কেনো আমিও কোল্ড ড্রিংকস খেলাম না। আমিও নিলীমার অনন্তকাল যাত্রার সংগী হতাম! সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। ওর বাবা সাগরের নামে হত্যা মামলা করেছে। এখন সে কারাগারে নিঃসংগ জীবন অতিবাহিত করছে৷ হয়তো তারও নিলীমার কথা মনে পড়ে। হয়তো সেও আমার মতোই ওকে কে ভালোবাসে। হয়তো সে অজান্তেই চোখের পানি ফেলে অনুতপ্ত হয়। আমি ওকে ক্ষমা করে দিয়েছি। কারণ ভালোবাসা কি জিনিস তা আমি বুঝি। পৃথিবীতে হতভাগ্য মানুষদের মধ্যে হয়তো আমি আর সাগর রয়েছি, যাদের মধ্যে একজন প্রেমিকার ভালোবাসা পেয়েও ধরে রাখতে পারলোনা আবার আরেকজন ভালোবেসেও ভালোবাসা পেলোনা।

 

 

 

 

 

 

জনপ্রিয় সংবাদ

মুন্সীগঞ্জ সদর ইউএনওর চরডুমুরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন

সেদিন রাতে খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো। হঠাৎ করে জোরে বিদ্যুৎ

আপডেট সময় ১০:২৮:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ মার্চ ২০২২

 

 

 

অপ্রাপ্তি মেহেদী হাসান শাওন

সেদিন রাতে খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো। হঠাৎ করে জোরে বিদ্যুৎ চমকানোর শব্দ শুনেই নিলীমা কথা মনে পড়ে গেলো। কারণ বৃষ্টিময় একটি রাতে আমরা এক ছাতার নিচে হেটেছিলাম অনেকটা পথ। হাটতে-হাটতে হঠাৎ জোরে বিদ্যুৎ চমকানোর শব্দ শোনার সাথেই নিলীমা আমার হাত শক্ত করে ধরে থাকলো। আমার হাত ধরাতেই সে যেনো ভরসা খুজে পেলো। নিজেকে আরও দায়িত্ববান ভাবতে শুরু করলাম। ওর এই ভরসা কখনো নষ্ট হতে দিবোনা।  নিলীমার সাথে এটিই আমার সবচেয়ে সুন্দর স্মৃতি। বলছি নিলীমা নামের একটি মেয়ের কথা। যাকে আমি খুব ভালোবাসি। মেয়েটি ছিলো খুব চঞ্চল প্রকৃতির। সেই ২০০৭ সাল, যখন ওর সাথে পরিচয় হয় আমার৷ একসাথে পড়াশুনা করেছি৷ প্রথম দেখাতেই ওকে মনের অজান্তে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। সে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলো, অবশ্যই আমার থেকেও মেধাবী। পড়াশোনা নিয়ে ওর সাথে সবসময়ই কথা বলতাম। সেও আমার সাথে কথা বলতে খুব স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতো৷ ইতোমধ্যেই আমাদের মধ্যে বেশ ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে৷ নিলীমা আমার কাছে তার সব কথা শেয়ার করতো। কোনো এক রবিবার আমার বন্ধু সাগর ও নিলীমাক কে সাথে নিয়ে মুভি দেখতে গেলাম। তখনই সাগরের সাথে নিলীমার পরিচয় করিয়ে দেই।

 

সাগর আমার গার্লফ্রেন্ডকে দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলো। সাগর হচ্ছে আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। আমরা একই রুমে থাকতাম। দির্ঘ ৫ বছর আমার আর সাগরের মধ্যে বন্ধুত্ব। সব কাজ ওর সাথে করতাম। একসাথে রবিবার মুভি দেখতে যেতাম, সারাদিন ঘুরে বেড়াতাম। আমার বন্ধু আমার সম্পর্কে সব কিছু জানে। কারণ আমি তাকে সবকিছুই বলতাম। নিলীমাকে নাকি আমার গার্লফ্রেন্ড হিসেবে সাগরের পছন্দ হয়নি৷ কেমন লাগে বলুন তো, বেস্ট ফ্রেন্ড যদি আপনার গার্লফ্রেন্ডকে পছন্দ না করে। কারণ সে মনে করে নিলীমা আমাকে ধোকা দেবে৷ আমি নিলীমাকে তখনও বলতে পারিনি যে আমি ওকে কতটা ভালোবাসি। যদিও আমার বন্ধু আমাকে সবসময় নিলীমার থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিতো৷ ওর চলাফেরা, কথাবার্তা কোনোটাই নাকি সাগরের  ভালো লাগেনা। তবে নিলীমার সামনে এরকম কিছু প্রকাশ করতো না, স্বাভাবিক আচরণ করতো।

 

একদিন রাতে হঠাৎ নিলীমা আমাকে ফোন করলো। ফোন রিসিভ করার সাথেই সে কান্নায় ভেঙে পড়লো। তার কান্নার আওয়াজ শুনে আমিও অস্তির হয়ে গেলাম৷ সে কান্না করতে করতে আমাকে বলছে, “আবির, আমার বাবা রোড এক্সিডেন্ট করেছে। জরুরিভাবে রক্ত দিতে হবে।” সৌভাগ্যজনকভাবে ওর বাবার রক্তের গ্রুপের সাথে আমার রক্তের গ্রুপ মিলে যায়। আমার রক্তের গ্রুপ ছিলো ‘এ’ নেগেটিভ। কোথাও রক্ত পাওয়া যাচ্ছিলো না। আমি হাসপাতালের ঠিকানা নিয়ে দ্রুত সেখানে পৌছে গেলাম। ডাক্তারের অনুমতি পাওয়ার পর তাড়াতাড়ি রক্ত দিলাম। তারপর নিলীমা তার পরিবারের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিলো। ওর উপকার করতে পেরেছি ভেবেই তখন আমি খুব আনন্দিত ছিলাম। সেদিনের ঘটনার পর থেকে বুঝতে পারলাম মেয়েটি আমার প্রতি ক্রমেই আকৃষ্ট হচ্ছে। সবসময় আমার খোজ-খবর নিচ্ছে।

 

বিষয়গুলো আমার ভালো লাগছে। আমিতো আবার সাগরকে সবকিছু না বলে থাকতে পারিনা। সে সব শুনে বললো, “তুই নিলীমার বাবাকে রক্ত দিয়েছিস তাই তোর সাথে মিষ্টিমুখে কথা বলছে। ওসব মেয়েদের  বিশ্বাস করা ঠিক নয়।” এই কথা শুনে আমার মন খারাপ হয়ে যাইহোক, নিলীমাকে আমি প্রপোজ করবো ভাবছি৷ কিন্তু মনে সাহস পাচ্ছিলাম না যদি সে মন খারাপ করে? আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়? নানারকম চিন্তাভাবনায় কিছুদিন অতিবাহিত হলো। বেশিদিন মনের মধ্যে কথা চেপে রাখতে পারলাম না। সাগরকে বিস্তারিত বললাম। সে আমার কথা শুনে একটু রাগান্বিত হলো। সে বললো, “নিলীমাকে কে প্রপোজ করিসনা। তুই ওর থেকে ভালো ও সুন্দর মেয়ে পাবি।” প্রিয় বন্ধুর মুখে এসব কথা শুনে আমি নিরুৎসাহিত হয়ে যেতে লাগলাম। তবুও আমার প্রতি নিলীমার কোমল আচরণের স্মৃতিগুলো আমার বারে বারে মনে পড়ছিলো। শেষ পর্যন্ত আমি ওকে কে প্রোপোজ করার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং সাগর সেই বিষটি জানেনা৷ প্রথমবারের মতো আমার বন্ধুকে এত বড় একটি কাজ না জানিয়েই করতে যাচ্ছি।

 

সাগর আবার একগুয়েমির মানুষ। যদি হুট করে কিছু একটা করে বসে তখন কি হবে? মনে মনে খুব ভয় পাচ্ছিলাম, আবার নিজেই নিজেকে সাহস ও সান্ত্বনা দিচ্ছিলাম৷ বিকালবেলা একটি পার্কে নিলীমকে আমার সাথে দেখা করতে বললাম। সেই দিনটি ছিলো ২০০৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর, যেদিন আমি ওকে প্রপোজ করেছিলাম। দিনটি সারাজীবন আমার কাছে স্বরণীয় হয়ে থাকবে। পকেটে একটি আংটি রেখেছিলাম। যদি সেও আমাকে ভালোবেসে থাকে তাহলে সেই আংটি ওর হাতে পরিয়ে দেবো বলে ঠিক করেছিলাম। কিন্তু ওর সামনে গিয়ে যখন দাড়ালাম তখন ভয়ে আমার হার্টবিট বেড়ে যেতে লাগলো৷ আমি নিলীমার হাত ধরেই আংটি পড়িয়ে দিলাম এবং চোখ বন্ধ করে বলে ফেললাম, ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’। কথাটি শোনার সাথেই সে আমাকে গালে একটি থাপ্পর বসিয়ে দিলো! আমি আর মাথা উঁচু করার সাহস পেলাম না। কিন্তু পরক্ষণেই সে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে আর কেদে কেদে বলছে, ‘আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি’। তুমি একটা ভীতু ছেলে।

 

এতদিন বলোনি কেনো? আমি তোমার মুখে এই কথাটি শোনার অপেক্ষায় ছিলাম।” ওর মুখে এসব কথা শুনে আমিও কেদে ফেললাম। আমার মনে অনন্দের ঝড় বয়ে যেতে লাগলো। তারপর থেকে সাগরকে না জানিয়েই আমরা একসাথে ঘুরতে যেতাম, ঘুড়ে বেড়াতাম৷ ওর কাছে এসব বিষয় গোপন রাখার কারণে সবকিছু ঠিকঠাক চললেও মন খারাপ ছিলো। মনে হচ্ছিলো আমি অন্যায় করছি। বেশিদিন আমাদের সম্পর্ক গোপন রাখতে পারলাম না। তাই ওকে সব ঘটনা বলে দিলাম। সাগর শুনেই কেদে ফেললো আর বললো, “আমি কি তোর বেস্ট ফ্রেন্ড নই? তুই আমার কাছেও গোপন করতে পারলি কেমনে?” আমিও মনে মনে অনুতপ্ত হলাম এবং তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলাম। সে আবার খুবই আবেগপ্রবণ ছেলে। আমরা দুইজন এতই ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলাম যে, কোনো কথা গোপন রাখতাম না। ওর মনে অনেক কষ্ট কারণ তার বাবা এবং বড় ভাই অবৈধ ড্রাগ সাপ্লাই করে বিভিন্ন দেশে। যদিও সে তার পরিবারে অনেকে আদরের। কিন্তু সে তার বাবা এবং বড় ভাইয়ের এসব অবৈধ ব্যাবসা মোটেই পছন্দ করতো না৷ অতি গোপন এসব কথা সাগর মাঝে মাঝে আমার সাথে শেয়ার করতো আর দুঃখ প্রকাশ করতো। কিন্তু কিছুদিন থেকেই সাগর আমাকে কিছু বলছে না৷ সবসময় মন খারাপ করে উদাসীন হয়ে বসে থাকে। কিছু জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেয়না। ভালো থাকার নাটক করে।এভাবেই কেটে গেলো অনেকটা দিন। একদিন নিলীমা আমাকে তার বাড়িতে যেতে বললো। তার বাবা নাকি আমাকে দেখতে চেয়েছেন। আমি শুনে কিছুটা ঘাবড়ে গেলাম এবং সাগরকে বললাম আমার সাথে যেতে। কিন্তু সে বললো, “আমি আমার বাড়িতে যাচ্ছি  কিছুদিন পরে ফিরে আসবো।

 

” আমি ওকে বিদায় জানালাম। এরপর নিলীমার বাড়িতে গেলাম, ওর বাবার সাথে অনেকক্ষণ গল্প করলাম। আমি তাকে রক্ত দান করেছিলাম তাই উনি আমাকে ধন্যবাদ জানালেন। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ হলো। নিলীমার বাবা অনেক খুশি হলেন। এরপর থেকে আমি নিয়মিতই ওদের বাড়িতে যেতে থাকি। ওর পরিবারের সবার সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠলো। এতোদিনে ডেভিড ওর বাড়ি থেকে ফিরে এসেছে। সেদিন ছিলো রবিবার। এসেই আমাকে বলছে, “চল, তোর গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে একটা মুভি দেখে আসি।” ওর চোখেমুখে খুশি দেখে আমার ভালো লাগলো। আমিও রাজি হয়ে গেলাম। নিলীমাকে ফোন করে আসতে বললাম। তিনজন থিয়েটারে গেলাম মুভি দেখতে। আমি আর নিলীমা একসাথে বসলাম। সাগর পাচ মিনিট পর আমাদের তিনজনের জন্য তিনটি কোল্ড ড্রিংকস নিয়ে এলো। ড্রিংকসের মুখ খোলার খুলেছি কিন্তু খেতে পারলাম না কারণ সাগরের ফোন হঠাৎ বেজে উঠলো। ফোন পেয়ে ওকে অনেক চিন্তিত আর বিমর্ষ দেখা গেলো। সে তার আসন থেকে উঠে দাড়ালো এবং তড়িঘড়ি করে চলে যেতে লাগলো।

 

নিলীমাকে বসিয়ে রেখেই আমি সাগরের পিছু নিলাম আর ওকে জিজ্ঞেস করতে লাগলাম কি হয়েছে? ওর পিছু যেতে কোনো এক ব্যাক্তির সাথে ধাক্কা লেগে আমার হাতের কোল্ড ড্রিংকস পড়ে গেলো, খেতে পারলাম না। থিয়েটারের বাইরে এসে ওকে ধরে ফেললাম। তারপর জিজ্ঞেস করলাম সে কেনো এইরকম দ্রুত বেরিয়ে এলো। উত্তরে সে বললো, “আমার ভাইকে কারা যেনো বাসায় এসে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে গেছে। অবস্থা খুবই আশংকাজনক। আমি আমার ভাইয়ের কাছে যাচ্ছি।” এই বলে সে চলে গেলো। আমি বিধ্বস্ত মন নিয়ে নিলীমার কাছে চলে এলাম এবং তাকে ঘটনাটি বিস্তারিত বললাম। আমি সাগরের ভাইকে একবার দেখেছিলাম৷ তার মুখটা বারবার মনে পড়তে লাগলো। দুজনে বিমর্ষ মন নিয়ে মুভি দেখলাম। তারপর নিলীমাকে তার বাসায় রেখে আসলাম। পরদিন বিকালবেলা নিলীমা আমাকে ফোন দিয়ে বললো ওর নাকি খুব বমি হচ্ছে এবং মাথা ব্যাথা করছে। যে মেয়েটার কোনো খারাপ অভ্যাস নেই এবং খুব বেশি রোগে আক্রান্ত হয়না সে হঠাৎ করে কেনো অসুস্থ হলো তা নিয়ে চিন্তা করতে লাগলাম৷ আমি সময় নষ্ট না করে ওকে দেখতে গেলাম। অবস্থা খারাপ দেখে ওর পরিবারকে হাসপাতালে নিতে বললাম। আমার কথামতো ওকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো।

 

সেখানে ওর চিকিৎসা চলতে থাকলো। অনেক রাত হয়ে গেলে আমি বাসায় ফিরে আসলাম। পরেরদিন সকালে ওর বাবা আমাকে ফোন করে খুব জোড়ে কান্না করছে। অতিরিক্ত কান্নার কারণে কথা বলতে পারছে না। শুধু বললো, “আমাদের বসায় এসো।” আমি খুব ঘাবড়ে গেলাম এবং দ্রুত ওদের বাসায় গেলাম। বাসায় ঢুকেই দেখি ওর পরিবারের সবাই খুব কান্না করছে। পাশেই নিলীমাকে কে শোয়ানো রাখা আছে। ওকে কে দেখে আমি খুব ভয় পেয়ে গেলাম। দেখে মনে হচ্ছে ঘুমাচ্ছে। কিন্তু বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে সে আর পৃথিবীতে নেই! আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। আমার হুশ ফিরে এলো এবং আমিও কান্না করতে লাগলাম। নিলীমার বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম, “কিভাবে এসব হলো?” জবাবে উনি বললেন, “ডাক্তার বলেছে ইন্টারনাল ব্লিডিং হওয়ার কারণে ওর মৃত্যু হয়েছে, কিডনি বিকল হয়ে গিয়েছিলো।” ওর বাবার মুখে এসব শুনে আমি কিছুতেই এরকম মৃত্যু মেনে নিতে পারছিলাম না। ওর দাফন সম্পন্ন হলো। শোকে, দুঃখে আমি বিপর্যস্ত হয়ে গেলাম। ওর স্মৃতি গুলো শুধু মনে পড়ে আর মুখটা ভেসে ওঠে। এদিকে সাগরের কোনো খোজ নেই।

 

ওর ফোনটাও বন্ধ। এভাবে কেটে গেলো আরও চার-পাঁচ দিন। হঠাৎ একদিন পত্রিকায় দেখতে পেলাম ওর বড় ভাইয়ের ছবি ছাপানো হয়েছে। আমি আগ্রহ নিয়ে খবরটি পড়তে লাগলাম। নিউজে ওর ভাইয়ের মৃত্যুর খবর ছাপানো হয়েছে। ওর ভাই একজন অবৈধ ড্রাগ সাপ্লাইয়ার। তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী পক্ষ বাসায় ঢুকে ছুড়িকাঘাতে হত্যা করেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পুলিশ শফিকের (সাগরের বড় ভাই) বাড়িতে ইনভেস্টিগেশন চালানোর সময় অনেক প্রকার অবৈধ ড্রাগের সন্ধান পেয়েছে৷ এছাড়াও ‘রাইসিন’ নামক বিষাক্ত পদার্থের সন্ধান পাওয়া গেছে৷ রাইসিন এমন একটি বিষাক্ত পদার্থ যা দেহের মধ্যে কোনোভাবে প্রবেশ করলে মাত্রা অনুযায়ী আক্রান্তের মৃত্যু হতে পারে। দেহে প্রবেশের পর মাথা ব্যাথা বা বমি হয়। তারপর শরীরের বিভিন্ন অংশ বিকল হতে থাকে। এক পর্যায়ে মাথা, কিডনি বা লিভারে রক্তক্ষরণ হওয়া শুরু করে এবং ৩৬ থেকে ৭২ ঘন্টার মধ্যে রোগী মৃত্যুবরণ করে। আমি এই নিউজটি পড়ে থমকে গেলাম। নিলীমার ডেথ সার্টিফিকেটে তো এই ধরনের লক্ষণ গুলোর কথাই বলা হয়েছিলো। আমি পাগলের মতো নিলীমার বাড়িতে ছুটে গেলাম এবং ওর বাবাকে সবকিছু বললাম। সবকিছু শুনে ওর বাবা মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি স্বাভাবিক হলে আমরা ব্যাপারটি পুলিশকে জানানোর সিদ্ধান্ত নিলাম।

 

সাগরের ভাইয়ের হত্যাকারীদের ধরতে যেই পুলিশ অফিসার তদন্ত চালাচ্ছেন আমরা সেই অফিসারের সঙ্গে সাক্ষাত করলাম। পুলিশ সমস্ত ঘটনা মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। তিনি ধারণা করলেন নিলীমাকে রাইসিন প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে৷ যাতে মনে হয় ন্যাচারাল ডেথ। কিন্তু কিভাবে? আমি ওর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়ার কারণে পুলিশ অফিসার আমাকে অগণিত প্রশ্ন করতে লাগলেন। নিলীমা অসুস্থ হওয়ার আগের দিন আমরা মুভি দেখতে গিয়েছিলাম সাগরসহ। এই ঘটনাটিও আমি পুলিশ অফিসারকে জানালাম। তখন তিনি সাগর সম্পর্কে জানতে চাইলেন। আমি ওর সম্পর্কে সবকিছু বললাম। মুভি দেখার দিন আমরা কিছু খেয়েছিলাম কিনা তা পুলিশ অফিসার জানতে চাইলো। আমি বললাম, “সাগর আমাদের জন্য কোল্ড ড্রিংকস নিয়ে এসেছিলো। কিন্তু আমার হাত থেকে ড্রিংকসটি পড়ে যায় এবং আমি খেতে পারিনি। নিলীমা তার হাতে থাকা কোল্ড ড্রিংকসটি খেয়েছিলো। পুলিশ অফিসার আবার প্রশ্ন করলেন, “সাগর কোল্ড ড্রিংকস কি আপনার সামনে নিয়েছিলো?” আমি বললাম না, পাচ মিনিট পর সে কোল্ড ড্রিংকস নিয়ে এসেছিলো।

 

অফিসার সবকিছু শুনে সাগরের ঠিকানাসহ সম্পুর্ণ তথ্য নিয়ে নিলেন। আমি ওর ছবি আমার ফোন থেকে দিয়ে দিলাম। তিনি আমাদের যেতে বললেন এবং পরে দরকার হলে আবার ডেকে নিবেন বলে দিলেন। ঠিক সাতদিন পর ঐ পুলিশ অফিসার আমাদের থানায় ডাকলেন। আমরা গিয়ে দেখলাম সাগর কারাগারে নিস্তব্ধ হয়ে বসে আছে। ওকে দেখেই আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। কেনো আমার বন্ধুকে কারাগারে নেয়া হয়েছে আমি পুলিশের কাছে জানতে চাইলাম। ইতোমধ্যেই সাগর পুলিশকে জবানবন্দি দিয়ে ফেলেছে। তবু্ও পুলিশ অফিসার আমাকে ওর মুখে সবকিছু শুনতে বললেন। আমি আস্তে আস্তে ওর দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম। দেহের সমস্ত শক্তি যেনো শেষ হয়ে আসছিলো। আমি ওর কাছে যাওয়ার সাথেই সে বলে উঠলো, “আমি নিলীমাকে হত্যা করেছি। প্রথম যেদিন ওকে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলি সেদিনি ওকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। তুই যাতে ওর জীবনে না আসতে পারিস তাই তোকে বলতাম নিলীমা ভালো মেয়ে নয়।

 

তুই যাতে ওকে না ভালোবাসিস, ওকে না প্রপোজ করিস তাই বলতাম নিলীমা কে তোর গার্লফ্রেন্ড হিসেবে আমার পছন্দ হয়নি। ওর মুখে এসব কথা শুনছিলাম আর আমার চোখ দিয়ে পানি ঝরে পড়ছিলো। সে আরও বলতে থাকলো, “তোরা একসাথে প্রতিদিন কোথায় যাচ্ছিস, কি করছিস প্রতিটি বিষয়ে আমি খোজ রাখতাম। লুকিয়ে লুকিয়ে তোদের পিছু নিতাম। যেদিন তোরা পার্কে একে অপরকে প্রপোজ করলি সেদিন আমি কিছুতেই নিজেকে ঠিক রাখতে পারছিলাম না। তুই নিয়মিত নিলীমার বাড়িতে যাতায়াত করতে থাকিস আর আমার মনে হিংসা জন্মাতে থাকে। তাই তোদের দুজনকে একসাথেই হত্যা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কিভাবে করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। আমার বড় ভাইকে আমি সবকিছু জানাই। সে আমাকে রাইসিন প্রয়োগ করারা বুদ্ধি দেয়। সুযোগমতো তোদের মুভি দেখার নাম করে একসাথে থিয়েটারে নিয়ে যাই৷ দুটি কোল্ড ড্রিংকসে রাইসিন মিশিয়ে তোদের খেতে দেই। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে আমার ভাইকে তখন কারা যেনো আক্রমণ করে।

 

আমি ফোন পেয়ে চলে যাওয়ার সময় তুই ও আমার পিছু নিলি। ড্রিংকসটা তুই খেতে পারিসনি। তুই বেচে গেলি আর নিলীমা খাওয়ার পর মারা গেলো। আমাকে ক্ষমা করে দিস বন্ধু! I’m sorry.” আমি ওর মুখে এসব কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। ওকে কি বলবো ভাষা খুজে পাচ্ছিলাম না। উন্মাদের মতো আচরণ করতে লাগলাম। আর আমার মনে হতে লাগলো কেনো আমিও কোল্ড ড্রিংকস খেলাম না। আমিও নিলীমার অনন্তকাল যাত্রার সংগী হতাম! সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। ওর বাবা সাগরের নামে হত্যা মামলা করেছে। এখন সে কারাগারে নিঃসংগ জীবন অতিবাহিত করছে৷ হয়তো তারও নিলীমার কথা মনে পড়ে। হয়তো সেও আমার মতোই ওকে কে ভালোবাসে। হয়তো সে অজান্তেই চোখের পানি ফেলে অনুতপ্ত হয়। আমি ওকে ক্ষমা করে দিয়েছি। কারণ ভালোবাসা কি জিনিস তা আমি বুঝি। পৃথিবীতে হতভাগ্য মানুষদের মধ্যে হয়তো আমি আর সাগর রয়েছি, যাদের মধ্যে একজন প্রেমিকার ভালোবাসা পেয়েও ধরে রাখতে পারলোনা আবার আরেকজন ভালোবেসেও ভালোবাসা পেলোনা।