বাংলাদেশ ০২:৪৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :

সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,, সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,,০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০, ০১৭১২-৪৪৬৩০৬,০১৭১১-০০৬২১৪ সম্পাদক

     
ব্রেকিং নিউজ ::
পটুয়াখালীতে ১৬ বছরেও সেনাপল্লীর প্লট বরাদ্দ বুঝে পায়ইনি ৪৬৭ জন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা। ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো অপশক্তি যড়যন্ত্র করে সফল হতে পারবে না- এমপি হিরো নরসিংদীতে গুলি করে ৬০ লাখ টাকা ছিনতাই হওয়ার ঘটনায় টাকাসহ আটক-৩ পাথরঘাটায় ৩ দিন ধরে মাদরাসা ছাত্র নিখোঁজ প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য বিভাগের ন্যায় শিক্ষা বিভাগে কর্মরত শিক্ষক ও কর্মচারীদের ছুটি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার মধ্যে সমতা থাকা বাঞ্ছনীয় কুবিতে প্রশাসনিক পদ থেকে পদত্যাগ করলো তিন শিক্ষক হত্যা মামলার ১২ আসামিকে গ্রেপ্তার করল র‌্যাব। সুরমা টাওয়ার থেকে এক যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার! শাহ পরান এলাকায় একজন মুয়াজ্জিনের আত্মহত্যা গলাচিপায় আবার সম্ভাবনাময় সু-স্বাদু মুগডাল যাচ্ছে জাপানে ভেজাল খাদ্যদ্রব্য এবং অনুমোদনহীন নকল বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি উৎপাদন, মজুদ ও বিক্রি করায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা ও কারাদন্ড প্রদান। মুন্সীগঞ্জে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে দিনব্যাপী কর্মশালা গৃহবধূ হত্যাকাণ্ডের প্রধান পলাতক আসামী মিনার হোসেনকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। ধনবাড়ীতে বেসরকারি সংস্থা নিজেরা করি এর উদ্যোগে নারীবাদী কর্মশালা অনুষ্ঠিত। মুন্সীগঞ্জে সিগারেট বাকী না দেওয়ায় দোকানীকে হত্যা

পি‌রোজপু‌রের মঠবাড়িয়া মা‌ঝের চর ম‌্যান‌গ্রোভ সম্ভাবনাময় ভাসমান পর্যটন কেন্দ্রে বৈষ‌ম্যের শিকার জে‌লে গোষ্ঠী

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৯:৪১:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪
  • ১৬০১ বার পড়া হয়েছে

পি‌রোজপু‌রের মঠবাড়িয়া মা‌ঝের চর ম‌্যান‌গ্রোভ সম্ভাবনাময় ভাসমান পর্যটন কেন্দ্রে বৈষ‌ম্যের শিকার জে‌লে গোষ্ঠী

 

 

মোঃ মনির আকন, মঠবাড়িয়া (পি‌রোজপুর) প্রতি‌নি‌ধি : 

দ‌ক্ষিনাঞ্চ‌লের ভ্রমন পিপাসুদের অন‌্যতম সু‌বিধা‌বি‌হিন  ‌চিত্ত বি‌নোদন কেন্দ্র “মা‌ঝের চর সম্ভাবনাময় ভাসমান পর্যটন ও বি‌নোদন কেন্দ্র”

পি‌রোজপু‌রের মঠবা‌ড়িয়া উপ‌জেলার বেত‌মোর রাজপাড়া ইউ‌নিয়‌নের ভূ-খন্ড থে‌কে বি‌চ্ছিন্ন দ্বীপ মাঝের চর। স্হানীয়দের ধারনা সুন্দরবন ঘেঁষা বলেশ্বর নদের মধ্যবর্তী স্হা‌নে চর সৃ‌ষ্টি হ‌য়ে‌ছে ব‌লেই মানু‌ষের মূ‌খে মূ‌খে মা‌ঝের চর না‌মে খ‌্যা‌তি পে‌য়েছে। ৪০ এর দশ‌কে জে‌গে ওঠা এ চ‌রের জ‌মির প‌রিমান প্রায় ৮৪০ একর।

এক সময় এখা‌নে বড় বড় কেওড়া ও ছৈলা গা‌ছে ভরপুর আর নানা জা‌তের পা‌খি, পা‌তিশৃগাল, সাপ, শু‌কোর এর দেখা মিলত। স্হানীয়রা গরু ম‌হিষ ছে‌ড়ে দিত বছরা‌ন্তে কিন্তু ১৯৬৬ সাল‌ থে‌কে পর্যায়ক্রমে সরকারী ব‌স্দোব‌স্তে ভূ‌মিহীন মানুষ বস‌তি শুরু কর‌লে আ‌স্তে আ‌স্তে সব বি‌লিন হওয়ার প‌থে। সরকারী বনায়‌নের পাশাপা‌শি র‌য়ে‌ছে সা‌রে ছয় হাজার ফলবান না‌রি‌কেল গাছ র‌ক্ষনা‌বেক্ষ‌নে আ‌ছে বন‌বিভা‌গের অ‌ফিস। পি‌রোজপুর, বা‌গেরহাট, বরগুনা, ঝালকাঠী সহ দ‌ক্ষিনাঞ্চ‌লের জেলাগু‌লোর ভ্রমন‌ পিপাসুদের অ‌তি চেনা দ্বীপ ব‌লেশ্বর ন‌দের মা‌ঝের চর, যেখা‌নে সারা বছর দেশী বি‌দেশী  হাজার হাজার পর্যটক ভীড় জমান।                                                               

প্রায় ৮৪ বছ‌রের পুরা‌নো প‌রি‌চিত থাকা সত্বেও পর্যটক‌ উপ‌যোগী নেই ‌কোন ব‌্যবস্হা। প্লাবন থে‌কে রক্ষার জন‌্য চার‌দি‌কে নেই পর্যাপ্ত বনরক্ষা বাঁধ। সরকারী ব‌্যবস্হাপনায় বস‌তি শুরু হ‌লে হাজার হাজার বৃক্ষ নিধন ক‌রে ছোট ছোট কিছু রাস্তা নির্মান করা হ‌লেও এখন ভেং‌গে গি‌য়ে‌ছে। চার দি‌কে জলরা‌শির নৃ‌ত্যে নয়না‌ভিরাম মা‌ঝেরচর দ্বিপ পর্যটক আকর্ষনের মায়া ঢে‌লে দি‌য়ে‌ছে।

সকাল সন্ধার আ‌লো খেলা আর নোনাজ‌লের জল‌কেলী, রুপালী ই‌লিশ শিকার ব‌নের সৌন্দর্য বা‌ড়ি‌য়ে দিয়ে‌ছে। অন‌তিদু‌রে দেখা মে‌লে বি‌শ্বের স‌র্বোচ্চ ম‌্যান‌গ্রোভ সুন্দরব‌নের। সম্ভাবনাময় দ্বিপ‌টি ভাসমান পর্যটন কেন্দ্র হি‌সে‌বে বি‌শ্বের কা‌ছে পৌছা‌তে পার‌লে পর্যটক আকর্ষন যেমন বে‌ড়ে যেত, তেম‌নি সরকা‌রের রাজস্ব আয় বৃ‌দ্ধি‌ পেত।

বাস্তবতা জান‌তে গি‌য়ে দেখা গে‌ছে, অল্প অসম্পূর্ন বেরীবাঁধ চ‌রের জীবন বি‌ষি‌য়ে তু‌লে‌ছে। চরের কিনা‌রে ভাঙ্গন দেখা দি‌য়ে‌ছে যে কার‌নে জে‌লের জমি ও ব‌নের আয়তন ক‌মে যা‌চ্ছে‌। ব‌নের চারপা‌শে মজবুত বেরীবাঁধ নির্মান খুবই জরুরী হ‌য়ে প‌রে‌ছে।

এখা‌নে যারা বস‌তি গে‌ড়ে‌ছেন সক‌লেই ‌পেশায় জে‌লে। মাছ শিকা‌রের পাশাপা‌শি সামান‌্য কৃ‌ষি কাজও ক‌রেন। নদীজ‌লের ভয়ংকর খেলা তুচ্ছ ক‌রে জীবন বা‌জি রে‌খে জীবন যু‌দ্ধে‌ জী‌বিকার তা‌গি‌দে নদীর জীবন ‌বে‌ছে নি‌য়ে‌ছেন। নদীই যেন তা‌দের প্রান। দুঃখ আর ক‌ষ্টের যাতাক‌লে দে‌শের নাগ‌রিক হ‌য়েও পা‌চ্ছে‌ না রাষ্ট্রীয় সু‌বিধা। সু‌বিধা শুধু চ‌রের চারপা‌শ ও নদী‌তে মৎস‌্য শিকার। সারা‌দি‌নের প‌রিশ্রমের ফসল নগন‌্য প‌রিমা‌নের যে মাছ ‌শিকার ক‌রে তা বি‌ক্রি করার  হাট বাজার না থাকায় প্রাপ‌্য থে‌কে ব‌ঞ্চিত হ‌চ্ছে‌।

প্রায় ৩০০ ভূ‌মিহীন প‌রিবা‌রের বস‌তি মা‌ঝের চ‌রের বা‌সিন্দা‌দের আতঙ্ক আর নিরাপত্তাহীনতা যেন নিত‌্যসঙ্গী। প্রাকৃ‌তিক বিপর্যয় সিডর, আয়লা, কাল‌বৈশাখী, ঘূ‌র্নিঝ‌ড়, প্লাবন এর সা‌থে প্রতি‌নিয়ত যুদ্ধ ক‌রে সহায় সম্ভলহীন জে‌লে গোষ্ঠী  মান‌বেতর জীবন নির্বাহ কর‌ছে।                       

বিশুদ্ধ পা‌নি, চি‌কিৎসা, শিক্ষা, নিরাপত্তা ব‌ঞ্চিত জে‌লেপল্লীর বা‌সিন্দারা নুন‌্যতম অ‌ধিকার থে‌কে ব‌ঞ্চিত হচ্ছে‌। এখা‌নে নেই কোন স্বাস্হ‌্য কেন্দ্র,অ‌গ্নি নির্বাপক ব‌্যবস্হা। এক‌টি প্রাথ‌মিক বিদ‌্যালয় যেন এ চ‌রের স‌র্বোচ্চ শিক্ষালয়। প্রাকৃ‌তিক বিপর্যয় বা প্লাব‌নে ‌নিরাপত্তার ঠাই ছোট দু`‌টো সাই‌ক্লোন সেল্টার।

আধু‌নিক জগতের ম‌ধ্যে আ‌দিম যুগ এ যেন এক ভিন্ন জগৎ বা দেশ! রী‌তিমত আশ্চর্য না হ‌য়ে কোন উপায় নেই। জে‌লেপল্ল‌ীর কদা‌চিৎ ২/১ জনের স্বাক্ষরজ্ঞান থাক‌লেও অ‌ধিকাংশ স্বাক্ষর জ্ঞানহীন। জে‌লে‌দের সন্তান ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত কোন রকম চলার পর মাধ‌্যমিক বিদ‌্যালয়, ক‌লেজ না থাকায় পড়ালেখা আর আগায় না।

জে‌লেপল্লী বাসীর র‌য়ে‌ছে স্বাস্হ‌্য স‌চেতনতার অভাব। আধু‌নিক যুগজীবন পরামর্শ দেয়ার মত কোন লোকও নেই। তাদের ধারনা জে‌লেজীবন পাল্টা‌নোর কোন সু‌যোগ এ জীব‌নে সম্ভব নয়। ঋ‌নের ভা‌রে জর্জরিত জে‌লের ছে‌লে জে‌লেই থে‌কে যা‌চ্ছে‌। নিজ‌দে‌শে পরাধীন নাগ‌রিক সু‌বিধা ব‌ঞ্চিত চ‌রের জে‌লে গোষ্ঠী।

ভূ-খন্ড থে‌কে বি‌চ্ছিন্ন ‌বেত‌মো‌রের সাংরাইল থে‌কে প্রায় এক কি‌লো‌মিটার নদী ‌নৌকা বা ট্রলা‌রে পাড়াপার হ‌য়ে মা‌ঝেরচ‌র যে‌তে হয়।

চ‌রের বা‌সিন্দা শুলতান চ‌কিদার (৮০) জানান, সরকার ১৯৬৬ -১৯৯০ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে দেড় থে‌কে তিন একর জ‌মি ভূ‌মিহীন জে‌লে‌দের ম‌ধ্যে ৯৯ বছ‌রের জন‌্য ২৮৮ একর জ‌মি ব‌ন্দে‌াবস্ত দেয় এবং ১৯৭৬ সা‌লে ৫৪৩ একর জ‌মি বন‌বিভাগ‌কে হস্তান্তর ক‌রে।

মা‌ঝেরচ‌র জে‌লেপল্লীর বা‌সিন্দা মোঃ হাসান (৩০) ব‌লেন, দুঃখ ক‌ষ্টে দিন যা‌চ্ছে‌। নদী‌তে মাছ ধ‌রে সংসার চ‌লে না। এক হাজার লোক নিরাপত্তা হীনতায় আ‌ছি, দুঃখ কষ্ট দেখার কেউ নেই।

চ‌রের বা‌সিন্দা জে‌লে মোঃ হা‌নিফ ফ‌কির (৬২) আ‌ক্ষেপ ক‌রে জানান, তার স্ত্রী হা‌সিনা বেগম (৫৬) গভীর রা‌তে ব্রেন স্ট্রোক কর‌লে তাৎক্ষ‌নিক কোন চি‌কিৎসা দি‌তে পা‌রেন‌নি। চ‌রের জে‌লেগোষ্ঠী বাঁচা‌তে তি‌নি বেরীবাঁধ নির্মা‌নের দাবী ক‌রেন।

মা‌ঝেরচর মস‌জি‌দের ইমাম মোঃ আজাদুল ইসলাম (৩০) ব‌লেন, চ‌রের অ‌ধিকাংশ মানুষ জে‌লে। যাতায়াত ব‌্যবস্হা নেই। যে কোন সময় প্লাব‌নে মস‌জিদ ত‌লি‌য়ে যায় নামাজ আদায় করা যায় না। তি‌নি  চ‌রের চার দি‌কে বেরীবাঁধ ‌তৈরীর দাবী জানান।

মা‌ঝেরচর ভ্রম‌নে আসা পশু‌রিয়ার কামরুল ইসলাম ব‌লেন, মা‌ঝেরচর প‌রি‌চিত জায়গা বাচ্চা‌দের নি‌য়ে ঘুড়‌তে এ‌সে‌ছি। তি‌নি এখা‌নে পর্যটন কেন্দ্র তৈরীর জন‌্য সরকা‌রের কা‌ছে দাবী জানান।

বেত‌মোর রাজপাড়া ইউ‌পি চেয়ারম‌্যান মোঃ দে‌লোয়ার হো‌সেন মূ‌ঠো‌ফো‌নে ব‌লেন, “মাঝের চ‌রে প্রায় ১১০০ লোকের বাস সক‌লে জে‌লে, ৩০০ প‌রিবারের ম‌ধ্যে  ৪৫০ ভোটার, ১৩০ জন জে‌লেকার্ড সু‌বিধা পায়। ভূ‌মিহীনদের বাই‌রে বড় অং‌কের জ‌মি প্রভাবশালীরা ভা‌গি‌য়ে নি‌য়ে‌ছে। এখা‌নে প‌রি‌বেশ গড়‌লে পর্যটন কেন্দ্র করা যায়”।

সহকারী ক‌মিশনার (ভূ‌মি) সৈকত রায়হান ব‌লেন, চ‌রের বাঁধ সংষ্কার করা হচ্ছে‌, পর্যায়ক্রমে বাকী বাঁধ নির্মান করা হ‌বে। এখা‌নে ভাসমান পর্যটন কেন্দ্রের প‌রি‌বেশ তৈরী কর‌লে পর্যটন কেন্দ্র হওয়া সম্ভব।

 

 

 

আপলোডকারীর তথ্য

Banglar Alo News

hello
জনপ্রিয় সংবাদ

পটুয়াখালীতে ১৬ বছরেও সেনাপল্লীর প্লট বরাদ্দ বুঝে পায়ইনি ৪৬৭ জন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা।

পি‌রোজপু‌রের মঠবাড়িয়া মা‌ঝের চর ম‌্যান‌গ্রোভ সম্ভাবনাময় ভাসমান পর্যটন কেন্দ্রে বৈষ‌ম্যের শিকার জে‌লে গোষ্ঠী

আপডেট সময় ০৯:৪১:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪

 

 

মোঃ মনির আকন, মঠবাড়িয়া (পি‌রোজপুর) প্রতি‌নি‌ধি : 

দ‌ক্ষিনাঞ্চ‌লের ভ্রমন পিপাসুদের অন‌্যতম সু‌বিধা‌বি‌হিন  ‌চিত্ত বি‌নোদন কেন্দ্র “মা‌ঝের চর সম্ভাবনাময় ভাসমান পর্যটন ও বি‌নোদন কেন্দ্র”

পি‌রোজপু‌রের মঠবা‌ড়িয়া উপ‌জেলার বেত‌মোর রাজপাড়া ইউ‌নিয়‌নের ভূ-খন্ড থে‌কে বি‌চ্ছিন্ন দ্বীপ মাঝের চর। স্হানীয়দের ধারনা সুন্দরবন ঘেঁষা বলেশ্বর নদের মধ্যবর্তী স্হা‌নে চর সৃ‌ষ্টি হ‌য়ে‌ছে ব‌লেই মানু‌ষের মূ‌খে মূ‌খে মা‌ঝের চর না‌মে খ‌্যা‌তি পে‌য়েছে। ৪০ এর দশ‌কে জে‌গে ওঠা এ চ‌রের জ‌মির প‌রিমান প্রায় ৮৪০ একর।

এক সময় এখা‌নে বড় বড় কেওড়া ও ছৈলা গা‌ছে ভরপুর আর নানা জা‌তের পা‌খি, পা‌তিশৃগাল, সাপ, শু‌কোর এর দেখা মিলত। স্হানীয়রা গরু ম‌হিষ ছে‌ড়ে দিত বছরা‌ন্তে কিন্তু ১৯৬৬ সাল‌ থে‌কে পর্যায়ক্রমে সরকারী ব‌স্দোব‌স্তে ভূ‌মিহীন মানুষ বস‌তি শুরু কর‌লে আ‌স্তে আ‌স্তে সব বি‌লিন হওয়ার প‌থে। সরকারী বনায়‌নের পাশাপা‌শি র‌য়ে‌ছে সা‌রে ছয় হাজার ফলবান না‌রি‌কেল গাছ র‌ক্ষনা‌বেক্ষ‌নে আ‌ছে বন‌বিভা‌গের অ‌ফিস। পি‌রোজপুর, বা‌গেরহাট, বরগুনা, ঝালকাঠী সহ দ‌ক্ষিনাঞ্চ‌লের জেলাগু‌লোর ভ্রমন‌ পিপাসুদের অ‌তি চেনা দ্বীপ ব‌লেশ্বর ন‌দের মা‌ঝের চর, যেখা‌নে সারা বছর দেশী বি‌দেশী  হাজার হাজার পর্যটক ভীড় জমান।                                                               

প্রায় ৮৪ বছ‌রের পুরা‌নো প‌রি‌চিত থাকা সত্বেও পর্যটক‌ উপ‌যোগী নেই ‌কোন ব‌্যবস্হা। প্লাবন থে‌কে রক্ষার জন‌্য চার‌দি‌কে নেই পর্যাপ্ত বনরক্ষা বাঁধ। সরকারী ব‌্যবস্হাপনায় বস‌তি শুরু হ‌লে হাজার হাজার বৃক্ষ নিধন ক‌রে ছোট ছোট কিছু রাস্তা নির্মান করা হ‌লেও এখন ভেং‌গে গি‌য়ে‌ছে। চার দি‌কে জলরা‌শির নৃ‌ত্যে নয়না‌ভিরাম মা‌ঝেরচর দ্বিপ পর্যটক আকর্ষনের মায়া ঢে‌লে দি‌য়ে‌ছে।

সকাল সন্ধার আ‌লো খেলা আর নোনাজ‌লের জল‌কেলী, রুপালী ই‌লিশ শিকার ব‌নের সৌন্দর্য বা‌ড়ি‌য়ে দিয়ে‌ছে। অন‌তিদু‌রে দেখা মে‌লে বি‌শ্বের স‌র্বোচ্চ ম‌্যান‌গ্রোভ সুন্দরব‌নের। সম্ভাবনাময় দ্বিপ‌টি ভাসমান পর্যটন কেন্দ্র হি‌সে‌বে বি‌শ্বের কা‌ছে পৌছা‌তে পার‌লে পর্যটক আকর্ষন যেমন বে‌ড়ে যেত, তেম‌নি সরকা‌রের রাজস্ব আয় বৃ‌দ্ধি‌ পেত।

বাস্তবতা জান‌তে গি‌য়ে দেখা গে‌ছে, অল্প অসম্পূর্ন বেরীবাঁধ চ‌রের জীবন বি‌ষি‌য়ে তু‌লে‌ছে। চরের কিনা‌রে ভাঙ্গন দেখা দি‌য়ে‌ছে যে কার‌নে জে‌লের জমি ও ব‌নের আয়তন ক‌মে যা‌চ্ছে‌। ব‌নের চারপা‌শে মজবুত বেরীবাঁধ নির্মান খুবই জরুরী হ‌য়ে প‌রে‌ছে।

এখা‌নে যারা বস‌তি গে‌ড়ে‌ছেন সক‌লেই ‌পেশায় জে‌লে। মাছ শিকা‌রের পাশাপা‌শি সামান‌্য কৃ‌ষি কাজও ক‌রেন। নদীজ‌লের ভয়ংকর খেলা তুচ্ছ ক‌রে জীবন বা‌জি রে‌খে জীবন যু‌দ্ধে‌ জী‌বিকার তা‌গি‌দে নদীর জীবন ‌বে‌ছে নি‌য়ে‌ছেন। নদীই যেন তা‌দের প্রান। দুঃখ আর ক‌ষ্টের যাতাক‌লে দে‌শের নাগ‌রিক হ‌য়েও পা‌চ্ছে‌ না রাষ্ট্রীয় সু‌বিধা। সু‌বিধা শুধু চ‌রের চারপা‌শ ও নদী‌তে মৎস‌্য শিকার। সারা‌দি‌নের প‌রিশ্রমের ফসল নগন‌্য প‌রিমা‌নের যে মাছ ‌শিকার ক‌রে তা বি‌ক্রি করার  হাট বাজার না থাকায় প্রাপ‌্য থে‌কে ব‌ঞ্চিত হ‌চ্ছে‌।

প্রায় ৩০০ ভূ‌মিহীন প‌রিবা‌রের বস‌তি মা‌ঝের চ‌রের বা‌সিন্দা‌দের আতঙ্ক আর নিরাপত্তাহীনতা যেন নিত‌্যসঙ্গী। প্রাকৃ‌তিক বিপর্যয় সিডর, আয়লা, কাল‌বৈশাখী, ঘূ‌র্নিঝ‌ড়, প্লাবন এর সা‌থে প্রতি‌নিয়ত যুদ্ধ ক‌রে সহায় সম্ভলহীন জে‌লে গোষ্ঠী  মান‌বেতর জীবন নির্বাহ কর‌ছে।                       

বিশুদ্ধ পা‌নি, চি‌কিৎসা, শিক্ষা, নিরাপত্তা ব‌ঞ্চিত জে‌লেপল্লীর বা‌সিন্দারা নুন‌্যতম অ‌ধিকার থে‌কে ব‌ঞ্চিত হচ্ছে‌। এখা‌নে নেই কোন স্বাস্হ‌্য কেন্দ্র,অ‌গ্নি নির্বাপক ব‌্যবস্হা। এক‌টি প্রাথ‌মিক বিদ‌্যালয় যেন এ চ‌রের স‌র্বোচ্চ শিক্ষালয়। প্রাকৃ‌তিক বিপর্যয় বা প্লাব‌নে ‌নিরাপত্তার ঠাই ছোট দু`‌টো সাই‌ক্লোন সেল্টার।

আধু‌নিক জগতের ম‌ধ্যে আ‌দিম যুগ এ যেন এক ভিন্ন জগৎ বা দেশ! রী‌তিমত আশ্চর্য না হ‌য়ে কোন উপায় নেই। জে‌লেপল্ল‌ীর কদা‌চিৎ ২/১ জনের স্বাক্ষরজ্ঞান থাক‌লেও অ‌ধিকাংশ স্বাক্ষর জ্ঞানহীন। জে‌লে‌দের সন্তান ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত কোন রকম চলার পর মাধ‌্যমিক বিদ‌্যালয়, ক‌লেজ না থাকায় পড়ালেখা আর আগায় না।

জে‌লেপল্লী বাসীর র‌য়ে‌ছে স্বাস্হ‌্য স‌চেতনতার অভাব। আধু‌নিক যুগজীবন পরামর্শ দেয়ার মত কোন লোকও নেই। তাদের ধারনা জে‌লেজীবন পাল্টা‌নোর কোন সু‌যোগ এ জীব‌নে সম্ভব নয়। ঋ‌নের ভা‌রে জর্জরিত জে‌লের ছে‌লে জে‌লেই থে‌কে যা‌চ্ছে‌। নিজ‌দে‌শে পরাধীন নাগ‌রিক সু‌বিধা ব‌ঞ্চিত চ‌রের জে‌লে গোষ্ঠী।

ভূ-খন্ড থে‌কে বি‌চ্ছিন্ন ‌বেত‌মো‌রের সাংরাইল থে‌কে প্রায় এক কি‌লো‌মিটার নদী ‌নৌকা বা ট্রলা‌রে পাড়াপার হ‌য়ে মা‌ঝেরচ‌র যে‌তে হয়।

চ‌রের বা‌সিন্দা শুলতান চ‌কিদার (৮০) জানান, সরকার ১৯৬৬ -১৯৯০ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে দেড় থে‌কে তিন একর জ‌মি ভূ‌মিহীন জে‌লে‌দের ম‌ধ্যে ৯৯ বছ‌রের জন‌্য ২৮৮ একর জ‌মি ব‌ন্দে‌াবস্ত দেয় এবং ১৯৭৬ সা‌লে ৫৪৩ একর জ‌মি বন‌বিভাগ‌কে হস্তান্তর ক‌রে।

মা‌ঝেরচ‌র জে‌লেপল্লীর বা‌সিন্দা মোঃ হাসান (৩০) ব‌লেন, দুঃখ ক‌ষ্টে দিন যা‌চ্ছে‌। নদী‌তে মাছ ধ‌রে সংসার চ‌লে না। এক হাজার লোক নিরাপত্তা হীনতায় আ‌ছি, দুঃখ কষ্ট দেখার কেউ নেই।

চ‌রের বা‌সিন্দা জে‌লে মোঃ হা‌নিফ ফ‌কির (৬২) আ‌ক্ষেপ ক‌রে জানান, তার স্ত্রী হা‌সিনা বেগম (৫৬) গভীর রা‌তে ব্রেন স্ট্রোক কর‌লে তাৎক্ষ‌নিক কোন চি‌কিৎসা দি‌তে পা‌রেন‌নি। চ‌রের জে‌লেগোষ্ঠী বাঁচা‌তে তি‌নি বেরীবাঁধ নির্মা‌নের দাবী ক‌রেন।

মা‌ঝেরচর মস‌জি‌দের ইমাম মোঃ আজাদুল ইসলাম (৩০) ব‌লেন, চ‌রের অ‌ধিকাংশ মানুষ জে‌লে। যাতায়াত ব‌্যবস্হা নেই। যে কোন সময় প্লাব‌নে মস‌জিদ ত‌লি‌য়ে যায় নামাজ আদায় করা যায় না। তি‌নি  চ‌রের চার দি‌কে বেরীবাঁধ ‌তৈরীর দাবী জানান।

মা‌ঝেরচর ভ্রম‌নে আসা পশু‌রিয়ার কামরুল ইসলাম ব‌লেন, মা‌ঝেরচর প‌রি‌চিত জায়গা বাচ্চা‌দের নি‌য়ে ঘুড়‌তে এ‌সে‌ছি। তি‌নি এখা‌নে পর্যটন কেন্দ্র তৈরীর জন‌্য সরকা‌রের কা‌ছে দাবী জানান।

বেত‌মোর রাজপাড়া ইউ‌পি চেয়ারম‌্যান মোঃ দে‌লোয়ার হো‌সেন মূ‌ঠো‌ফো‌নে ব‌লেন, “মাঝের চ‌রে প্রায় ১১০০ লোকের বাস সক‌লে জে‌লে, ৩০০ প‌রিবারের ম‌ধ্যে  ৪৫০ ভোটার, ১৩০ জন জে‌লেকার্ড সু‌বিধা পায়। ভূ‌মিহীনদের বাই‌রে বড় অং‌কের জ‌মি প্রভাবশালীরা ভা‌গি‌য়ে নি‌য়ে‌ছে। এখা‌নে প‌রি‌বেশ গড়‌লে পর্যটন কেন্দ্র করা যায়”।

সহকারী ক‌মিশনার (ভূ‌মি) সৈকত রায়হান ব‌লেন, চ‌রের বাঁধ সংষ্কার করা হচ্ছে‌, পর্যায়ক্রমে বাকী বাঁধ নির্মান করা হ‌বে। এখা‌নে ভাসমান পর্যটন কেন্দ্রের প‌রি‌বেশ তৈরী কর‌লে পর্যটন কেন্দ্র হওয়া সম্ভব।