মোস্তফা মিয়া পীরগন্জ রংপুর প্রতিনিধি ঃ
গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলার ধাপেরহাট ইউনিয়নের খামারপাড়া গ্রামের দরিদ্র অটোচালক বুদা মিয়ার ছেলে পিন্টু মিয়া (৩৩) প্রায় দীর্ঘদিন যাবত শিকল বন্দী জীবন যাপন করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, দরিদ্র অটোচালক বুদা মিয়ার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। বড় ছেলে অনেক আগেই মারা যায়। দুই মেয়ের মধ্যে এক মেয়ের বিবাহ দিয়েছেন। এখন বুদা মিয়ার সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে। বর্তমানে একমাত্র ছেলে পিন্টু মিয়া প্রায় অনেক বছর যাবত মাথার সমস্যায় ভুগছেন। এদিকে তার পায়ে শিকল পরিয়ে দেয়া হয় প্রায় দুই বছর। বুদা মিয়ার চার সদস্যের সংসারে একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম হল তার একটা অটোভ্যান। বুদা মিয়া ও তার স্ত্রী জানায় দীর্ঘদিন ধরে ছেলের এমন অবস্থায় চিকিৎসা করতে গিয়ে সব শেষ। মাঝখানে কিছুদিন আগে চিকিৎসায় মোটামুটি ভালোও হয়েছিল কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে পরবর্তীতে আর চিকিৎসা করতে না পারায় আবারও মাথার সমস্যা বেড়ে যায়। সারাদিন অটোভ্যান চালিয়ে সংসারের খাবার যোগাড় করাই অনেক কষ্টকর হয়ে পড়েছে তার মধ্যে আবার পিন্টুর চিকিৎসা। স্বল্প আয়ে ছেলের চিকিৎসার খরচ জোগাড় করাটা অনেক কষ্টসাধ্য। বুদা মিয়া বলেন, তবুও কষ্ট করে হলেও যতদুর পারছি ছেলের চিকিৎসার জন্য টাকা জোগাড়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এক প্রশ্নের জবাবে পিন্টু মিয়ার বাবা বুদা মিয়া জানায় মাঝে মধ্যে উল্টা পাল্টা করে আর বেপরোয়া চলাফেরা করে, বিভিন্ন সময় জিনিস পত্র নষ্ট করে ও হঠাৎ যখন সমস্যা বেশি বেড়ে যায় তখন তার চেহারায় ভয়ংকর রুপ ধারণ করে। এ জন্য তার পায়ে লোহার শিকল পরিয়ে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করেছি।
কিছু কিছু সময় পিন্টু মিয়া ভালো আচরণও করে এবং স্বাভাবিক কথাবার্তাও বলে। পিন্টু মিয়াকে প্রশ্ন করতে গেলে সে স্বাভাবিক ভাবেই বলে আমি মেট্রিক্স পাশ করেছি এবং কলেজে ভর্তি হয়ে কয়েকদিন ক্লাশও করেছি। তারপর আর ক্লাশ করতে পারিনাই। পিন্টু মিয়া আরও বলেন আমি কিছুদিন বাংলালিংক কোম্পানিতে চাকরি করি ডিলারের আন্ডারে। সেখানে কিছু দিন চাকরির পর আমার সমস্যা দেখা দেয়, তখন থেকে আমার মাথার সমস্যা ভাল হচ্ছেনা।
মানষিক রোগী পিন্টু মিয়ার মা বাবা কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, সমাজের বিত্তবান শ্রেণির মানুষ যদি আমার ছেলের চিকিৎসায় সহযোগিতা করতো তাহলে হয়তো তাকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হতো। পিন্টুর চিকিৎসায় এ যাবত অনেক টাকা খরচ করেছি কিন্তু আর্থিক সংকটের কারনে তার চিকিৎসা চালাতে পারছি না। একটি অটোভ্যান চালিয়ে দিনে আর কয় টাকা ইনকাম করা যায়, তা দিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর, তার উপর আবার পিন্টুর চিকিৎসার খরচ জোগাড় করাটা আমার জন্য অনেকটাই হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই কেউ যদি আমার ছেলের চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসতো তাহলে হয়তো আমার ছেলেটা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারতো।
তাঃ৮/৪/২২ইং