নিরেন দাস,জয়পুরহাট জেলা, প্রতিনিধিঃ-
জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে অন্য ব্যক্তির সনদ ও বিএমডিসি’র নিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করে বিভিন্ন রোগের এমবিবিএস মাসুদ রানা নামে এক ভুয়া চিকিৎসক’কে আটকের পর জরিমানা করে মুচলেকার মাধ্যমে ছেড়ে দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন ক্ষেতলাল উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সক্লুসিভ ম্যাজিস্ট্রেট ইশতিয়াক আহমেদ।
গত বুধবার(০৬ এপ্রিল)সন্ধায় ক্ষেতলাল পৌর সদরের আল-শেফা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করেন। আটককৃত ভুয়া চিকিৎসক মাসুদ রানা সৈয়দপুর উপজেলার হাতিখানা গ্রামের শেখ আব্দুল হান্নান এর ছেলে। এর আগেও এই ভুয়া চিকিৎসক পাবনা এবং হবিগঞ্জেও আটক হয়েছিলেন।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে আটককৃত ভুয়া চিকিৎসক মাসুদ রানা বলেন,২০১১ সাল থেকে দেশের বিভিন্ন ক্লিনিকে লক্ষাধিক টাকা বেতনে কর্মরত থেকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছিলেন। তিনি ঢাকার ডা: মাসুদ করিম এর নাম বিএমডিসির নিবন্ধন নং-৩৩৩৬০ বর্তমানে ও সনদ ব্যবহার করে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
ক্ষেতলাল আল-শেফা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মাসুদ করিমের নাম ব্যবহার করে রোগী দেখতেন ভুয়া চিকিৎসক মাসুদ রানা। তিনি রোগীর ব্যবস্থাপত্রে এমবিবিএস (ঢাকা) ছাড়াও পিজিটি(মেডিসিন ও সার্জারি),ডিএমইউ (ঢাকা) ডিগ্রি ব্যবহার করতেন। চিকিৎসকদের সনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সনদ নম্বরও উল্লেখ করেছেন।
ডায়াবেটিস, মা ও,গাইনি, হাঁপানি, নাক-কান-গলা (অপারেশন ব্যতীত),বাত-ব্যথা, হার্ট, চর্ম ও যৌন রোগের রোগী দেখতেন। আল-শেফা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তিনি সকাল ৯ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত রোগী দেখতেন এমনকি তিনি নিজেকে একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হিসেবেও পরিচয় দিতেন বলেও তিনি স্বীকার করেন।
এই ভুয়া চিকিৎসকের বিরুদ্ধে একজন রোগী দেওয়া তথ্য দিলে তার দেয়া তথ্য মতে ভুয়া চিকিৎসক মাসুদ রানাকে বুধবার সন্ধায় পুলিশ তাকে আটক করে।পরে রাত সাড়ে ৯ টায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় জেল না দিয়ে তাকে ৪০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করেন এবং মুচলেকার মাধ্যমে তাকে ছেড়ে দিয়েছেন ক্ষেতলাল উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সক্লুসিভ ম্যাজিস্ট্রেট ইশতিয়াক আহমেদ।
এবিষয়ে ক্ষেতলাল থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) রওশন ইয়াজদানী জানান,মাসুদ করিম নিজেকে এমবিবিএস(মেডিসিন বিশেষজ্ঞ)চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে ক্ষেতলাল পৌর সদরে আল-শেফা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী দেখতেন।তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসলে বুধবার সন্ধায় তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ভুয়া এমবিবিএস চিকিৎসক বলে তিনি স্বীকার করেন।পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে তার জরিমানা করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রতিবেদক তার মুঠোফোন থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের পরিচারক ক্ষেতলাল উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সক্লুসিভ ম্যাজিস্ট্রেট ইশতিয়াক আহমেদ এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, মাসুদ রানা কোন এমবিবিএস চিকিৎসক নন তিনি একজন পল্লী চিকিৎসক।
কিন্তু সে চিকিৎসক দাবি করে আল-শেফা নামে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী দেখছিলেন।পুলিশ তাকে আটক করলে রাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিকার আইনে তার ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের কোথাও রোগী দেখবেন না বলে মুচলেকা দিলে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। জেল না দিয়ে শুধু জরিমানা আর মুচলেকা লিখে ছেড়ে দিলেন প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথম বারের মতো তাকে ক্ষমার দেখা হয়েছে।