প্রেস বিজ্ঞপ্তি
হত্যা মামলাসহ ১৫ টি মামলার আসামী নারায়ণগঞ্জ এর শীর্ষ সন্ত্রাসী রিয়াজ বাহিনীর মূলহোতা রিয়াজুল ইসলাম@ শুটার রিয়াজ ও তার ০৪ সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব; উদ্ধার করা হয় বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন, গুলি, দেশিয় অস্ত্র ও ইয়াবা।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সব সময় বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করে আসছে। র্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে এ পর্যন্ত জঙ্গি, মাদক ব্যবসায়ী, জালনোট ব্যবসায়ী, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ, মানবপাচারকারী, প্রতারক, বিভিন্ন মামলার আসামী, অপহরণকারী, শীর্ষ সন্ত্রাসী এবং অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
বিভিন্ন সময়ে অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায় যে, শীর্ষ সন্ত্রাসী, পেশাদার খুনী ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী শুটার রিয়াজের নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ, সোনারগাঁও ও তার আশপাশ এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করছে। গত ২৯ মার্চ ২০২২ তারিখে রূপগঞ্জ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্য দিবালোকে সশ্রস্ত্র হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় একজন গুলিবিদ্ধ হয় ও আরও ২০ জন আহত হয়। ঐ সময়ে এলাকায় ব্যাপক ভাংচুর করা হয়। গত ১৫ মার্চ ২০২২ খ্রিঃ তারিখে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকায় পূর্ব শত্রæতার জের ধরে শফিক ও শামীম মল্লিক নামে দুই ব্যক্তিকে তাদের বাসার সামনে অতর্কিতভাবে এলোপাতাড়ি গুলি করে। গত ২৩ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকায় পূর্ব শত্রæতার জের ধরে বিদ্যুৎ এর বাড়িতে এসে বিদ্যুৎকে লক্ষ করে এলোপাতাড়ি গুলি করে। উক্ত গুলি পাশের বাড়ির একটি নিস্পাপ মেয়ের চোখে লেগে তার একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তীতে উক্ত ঘটনায় একটি মামলা রুজ্জু হলে মামলার বাদী ও সাক্ষীদেরও হত্যার উদ্দেশ্যে দেশিয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে মারাত্মকভাবে জখম করে ও গুলি করে। গত ০৭ নভেম্বর ২০২১ তারিখে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গোলাগুলির ঘটনায় একজন নিহত হয়। উক্ত ঘটনাগুলো পর্যালোচনায় দেখা যায় বর্ণিত ঘটনাগুলো এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, অবৈধ জমি দখলকে কেন্দ্র করে রিয়াজ বাহিনীর প্রধান শুটার রিয়াজ এর নেতৃত্বে সংঘটিত হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে র্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁও এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে পেশাদার খুনী ও অবৈধ অস্ত্রধারী শীর্ষ সন্ত্রাসী (১) রিয়াজুল ইসলাম @ শুটার রিয়াজ (২২), পিতা-মোঃ আব্দুল লতিফ মিয়া, থানা-রূপগঞ্জ, জেলা-নারায়ণগঞ্জ, ও তার সহযোগী (২) মোঃ জাহিদুল ইসলাম @ কালা ভাগিনা (২৩), পিতা-মৃত জাকির হোসেন, থানা-রূপগঞ্জ, জেলা-নারায়ণগঞ্জ, (৩) মারুফ হোসেন মুন্না (২৩), পিতা-মৃত জাহাঙ্গীর আলম, থানা-সোনারগাঁও, জেলা-নারায়ণগঞ্জ, (৪) মোঃ সেলিম (২৩), পিতা-মৃত ইয়ার হোসেন, থানা-সোনারগাঁও, জেলা-নারায়ণগঞ্জ এবং (৫) মোঃ মাহবুব মিয়া (২৩), পিতা-মোঃ ফিরোজ মিয়া, থানা-রূপগঞ্জ, জেলা-নারায়ণগঞ্জ’দেরকে গ্রেফতার করে। উক্ত অভিযানে উদ্ধার করা হয় ০৩টি বিদেশি পিস্তল, ০৩টি ম্যাগাজিন, ১২ রাউন্ড গুলি, ০৫টি ধারালো দেশিয় অস্ত্র, ০১টি মোটর সাইকেল এবং ৬০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।
গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ধৃত আসামীরা নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ, সোনারগাঁও ও তার আশপাশ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাÐ পরিচালনা করার কাজে উদ্ধারকৃত অবৈধ অস্ত্রসমূহ ব্যবহার করে আসছিল। তাদের সন্ত্রাসী দলের সংখ্যা ১০-১৫ জন। গ্রেফতারকৃত রিয়াজ এর নেতৃত্বে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করার জন্য তার বাহিনী অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিত। এছাড়াও রিয়াজের নেতৃত্বে এই সন্ত্রাসী দলের সদস্যরা বিভিন্ন গ্রæপে বিভক্ত হয়ে বর্ণিত এলাকা সমূহে জমি দখল, চাঁদাবাজি, মার্কেট ও বাসস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি, অপহরণ ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনা করত। তারপরও কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে ত্রাস সৃষ্টির জন্য হামলা, আক্রমণ ও আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার করে ভয়ভীতি প্রদর্শন করত। এলাকায় ভয়ে রিয়াজ বাহিনীর বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পেত না। রিয়াজের নেতৃত্বে তার সন্ত্রাসী দল এলাকার বালু ভরাট ও মাটি কাটার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে ও ট্রাক প্রতি নির্ধারিত হারে তার দল চাঁদা নিয়ে থাকে।
গ্রেফতারকৃত রিয়াজুল ইসলাম @ শুটার রিয়াজ সোনারগাঁও এর একটি বিদ্যালয় হতে অষ্টম শ্রেণীতে অধ্যায়নকালে ২০১৬ সালে তার বড় ভাইয়ের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হয়। রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁও এলাকায় চাঁদাবাজি, ভূমি দখল ও ভাড়ায় মারামারি করতে গিয়ে স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে অপরাধ জগতের লোকজনের সাথে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে উক্ত ব্যক্তির সাথে মনোমালিন্য হলে সে নিজেই একটি সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলে এবং তার সহযোগীদেরকে অবৈধ অস্ত্র সরবরাহ শুরু করে। সে তার সহযোগীদের নিয়ে সোনারগাঁও এলাকায় সশস্ত্র মহড়া দিত এবং অস্ত্র ঠেকিয়ে বালু ও মাটি ভর্তি ট্রাক হতে চাঁদা আদায় করত। নারায়ণগঞ্জ এলাকায় অবৈধভাবে জমি দখলের জন্য সে ভাড়ায় তার দল নিয়ে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করত। তাছাড়াও সে উঠতি বয়সের ছেলেদের নিকট অস্ত্র সরবরাহ করার মাধ্যমে তাদেরকে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে সম্পৃক্ত করত। রিয়াজের বড় ভাই মোহাম্মদ আলীও এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত। কিছুদিন পূর্বে রিয়াজ বাহিনীর নেতৃত্বে বর্ণিত হামলার পর হতে সে আত্মগোপনে রয়েছে। গ্রেফতারকৃত রিয়াজের বিরুদ্ধে হত্যা, মারামারি, বিস্ফোরক ও অস্ত্র আইনে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানায় ১৫ টি মামলা ও বেশ কয়েকটি জিডি রয়েছে। সে বিভিন্ন মেয়াদে একাধিকবার কারাবরণ করেছে।
গ্রেফতারকৃত মোঃ জাহিদুল ইসলাম@ কালা ভাগিনা, রিয়াজ বাহিনীর প্রধান সহযোগী। সে রূপগঞ্জ এর একটি কলেজ হতে এইচএসসি পাশ করে। ইতোপূর্বে সে সবজির ব্যবসা করত। ২০১৯ সালে রিয়াজের সাথে পরিচয় হলে রিয়াজ তাকে তার সশস্ত্র বাহিনীতে যুক্ত করে। সে রিয়াজের সহযোগী হিসেবে কাজ করত। রিয়াজ বাহিনীর অবৈধ অস্ত্র সে বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট হেফাজতে রাখত। তার বিরুদ্ধে হত্যা, মারামারি ও বিস্ফোরক আইনে রুপগঞ্জ থানায় ০৬টি মামলা রয়েছে। সে বিভিন্ন মেয়াদে একাধিকবার কারাবরণ করেছে।
গ্রেফতারকৃত মারুফ হোসেন মুন্না রিয়াজের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। সে সোনারগাঁও এর একটি বিদ্যালয় হতে অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত পড়ালেখা করে। সে সোনারগাঁও এলাকায় মাটি কাটার ব্যবসা করত। মাটির ব্যবসা করতে গিয়ে ২০২১ সালে সে রিয়াজ বাহিনীতে যোগ দেয়। মাদক সংগ্রহ, সরবরাহ ও অস্ত্র সরবরাহের কাজে সে রিয়াজকে সহযোগীতা করত। তার নামে রূপগঞ্জ থানায় ০২টি মাদক মামলা রয়েছে। সে বিভিন্ন মেয়াদে একাধিকবার কারাবরণ করে।
গ্রেফতারকৃত মোঃ মাহবুব মিয়া রূপগঞ্জের একটি কলেজ থেকে ডিগ্রী ৩য় বর্ষ পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। সে রূপগঞ্জ এলাকায় ইট বালুর ব্যবসা করে। ব্যবসায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য সে রিয়াজ বাহিনীতে যোগ দেয়। সে রিয়াজের সহযোগী হিসেবে বিভিন্ন অবৈধ কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে থাকে।
গ্রেফতারকৃত মোঃ সেলিম সোনারগাঁও এর একটি বিদ্যালয় হতে এসএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। ২০১৬ সালে সে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে গমন করে এবং মসজিদে কার্পেট বিছানোর কাজ করত। কিছুদিন পূর্বে সে দেশে ফিরে এসে রিয়াজ বাহিনীতে যোগ দেয়ার মাধ্যমে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে যুক্ত হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
বীণা রানী দাস, পিপিএম, পিপিএম (সেবা)
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার
স্টাফ অফিসার (অপস্ ও ইন্ট শাখা)
পক্ষে পরিচালক