টিপ কেলেঙ্কারির হোতা লতা সমাদ্দার কি সবচে বড় অপরাধি নয়? গর্ভবতী স্ত্রীর কোলে থাকা অনাগত সন্তানের বাবা পুলিশ সদস্য নাজমুল কি তবে মাজলুম নয়?
ঘটনার পিছনের ঘটনা : গর্ভবতি স্ত্রীকে চেক আপের উদ্দ্যশ্যে বাসা থেকে স্ত্রীকে নিয়ে বের হয়ে একজন বিশেষজ্ঞ গাইনি ডাক্তারের কাছে স্ত্রী কে পাঠিয়ে স্ত্রীর ফিরে আসার অপেক্ষায় পুলিশ কনষ্টেবল নাজমুল সাহেব, অসুস্থ স্ত্রী হেঁটে স্বামীর কাছাকাছি চলে আসছেন, এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে এক নারী ছুটে আসার পথে গর্ভবতি মহিলার পায়ে (হয়তো বে খেয়ালেই) পাড়া বসিয়ে দেন আর ওমনি নাজমুল সাহেবের স্ত্রী ব্যাথায় চিৎকার দিয়ে উঠলে নাজমুল সাহেব কাছাকাছি যান, দুই জন মহিলা তখন বাদানুবাদে জড়িয়ে যায়, এর মধ্যে নাজমুল সাহেবের সাথেও পাড়া দেওয়া নারী লতা সমদ্দারের কিছু কথা কাটাকাটি হলে, টিপ পরা সেই নারী নাজমুলের স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন “বোরকা একটা পরে হাটে, পাশের দিকে দেখেনা ” নাজমুল সাহেব ” অনেক কথার মধ্যে ” নিজে পাড়া দিয়ে সরি তো বললইনা, বোরকা পরা নিয়ে কথা বলে, আপনি টিপ পরেছেন কেন? আর ইনাকে বোরকার জন্য কথা শোনাচ্ছেন। এ ধরনের কথা বলেন, যা ইভটিজিং এর পর্যায়ে পড়ে না, কারন স্ত্রীকে সাথে নিয়ে অন্য কোন মহিলাকে ইভটিজিং করে না।
নাট্যকলার ছাত্রী অধ্যক্ষ লতা সমদ্দার ইউনিফর্ম পরা পুলিশ ও তার গর্ভবতি স্ত্রী তাকে কোন আইনি ঝামেলায় ফেলতে পারে, এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আগেই টিপ বিষয়টি নিয়ে তার ফেসবুকে একটা আবেগি ষ্টাটাস দিয়ে সেখানে নাট্যমঞ্চের তার বন্ধুদের ট্যাগ করে দেয়, সবচেয়ে চালাকি করে ঐ মহিলা পুলিশ সদস্যের সাথে যে তার গর্ভবতি স্ত্রী সাথে ছিল। সে যে প্রথমে তার পায়ে পাড়া দিয়ে একজন গর্ভবতী মহিলাকে মানবতা না দেখিয়ে, সরি না বলে বরং তার বোরকা পরা নিয়ে উল্টা গালি দেয়, সেটা বেমালুম চেপে যায়।
বাকিটা টিপের ইতিহাস… যে লোকটি বাটনওয়ালা মোবাইল ইউজ করে, টিভি দেখেনা, সে তার গর্ভবতি স্ত্রী কে নিয়ে অন্য কাউকে ইভটিজিং করতে পারে বলে কতোজনে বিশ্বাস করবে, আমাদের জানা নেই…..
বিঃদ্রঃ সবচেয়ে লেটেষ্ট নাজমুলের স্ত্রীর পায়ে পাড়া দেওয়ার ভিকটিম উল্টো অভিযোগ করলো তার পায়ে হোন্ডা উঠিয়ে দিয়েছে, যা ছিল সর্বৈব মিথ্যা….ঘটনার আসল রহস্য উদঘাটন করে দোষী ব্যক্তির শাস্তি দাবি করছি। বলা কর্তব্য যে, টিপকাণ্ডে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের গর্ভবতী স্ত্রীর বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হলো কেন ?
১.
টিপকাণ্ডে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য নাজমুল তারেকের গর্ভবর্তী স্ত্রী বাইকের পেছনে বসে ছিলেন, সিসিটিভির ফুটেজে যা স্পষ্ট। কিন্তু সেই গর্ভবতী নারীর বিষয়টি কেন এড়িয়ে যাওয়া হলো ? অভিযোগকারী লতা সমাদ্দার থানায় যে অভিযোগ করেছেন, সেখানে কোথাও উল্লেখ করেননি, পুলিশ সদস্যের গর্ভবতী স্ত্রীর কথা। অথচ পুলিশ সদস্য ও লতা সমাদ্দারের বাকবিতণ্ডার সূচনাই হয় পুলিশ সদস্যের গর্ভবর্তী স্ত্রীর পায়ের সাথে ধাক্কা লাগাকে কেন্দ্র করে।
২.
লতা সমাদ্দার তার অভিযোগে মটর সাইকেলের নম্বর উল্লেখ করলেন , পুলিশ সদস্যের মুখে দাড়ির কথা উল্লেখ করলেন, বয়সের বিষয়টি উল্লেখ করলেন, চিকন না মোটা সেটাও উল্লেখ করলেন, কিন্তু পেছনে বসা গর্ভবতী নারীর কথা কেন উল্লেখ করলেন না ? এতে কি তার অভিযোগ দুর্বল হয়ে যেতো? এটা অবশ্যই একটি বোঝার বিষয়।
৩.
আমাদের ধারণা লতা সমাদ্দার ভেবেছিলেন, যদি পেছনে বসা গর্ভবর্তী নারীর কথা উল্লেখ করা হয়, তবে ইস্যুটা সেভাবে জমানো যাবে না, বরং গর্ভবর্তী নারীর দিকে সবার সেন্টিমেন্ট ঝুঁকে পড়বে। তাই তিনি সেটা না করে মোড় ঘুড়িয়ে দিলেন টিপ বনাম দাড়ির দিকে। অর্থাৎ একদিকে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক ইস্যু, যেখানে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘ্রাণ আছে। আরেকটা দিক হলো- নারীর পোষাকের প্রতি মৌলবাদীদের (দাড়িওয়ালাদের) সহিংসতা। পাশাপাশি দীনদার পুলিশদেরকে শায়েস্তা করার একটা সুবর্ণ সুযোগ।
৪.
লতা সমাদ্দার যেহেতু মিডিয়া ও থিয়েটার স্টাডি বিভাগের শিক্ষিকা, সেহেতু তার সাথে অবশ্যই অনেক মঞ্চ বা পর্দা অভিনেতাদের সাথে যোগাযোগ আছে। তিনি সেই অভিনেতা-অভিনেত্রীর সিন্ডিকেট ব্যবহার তার ইস্যুটা ভাইরাল করেছেন। প্রথমে এক বহুল আলোচিত অভিনেত্রীকে দিয়ে সংসদে আলোচনা করিয়েছেন, অতঃপর অভিনেতা-অভিনেত্রী সবাইকে টিপ পরিয়ে নিজের পক্ষে আন্দোলনে নামিয়েছেন।
কথা হচ্ছে, তিনি সিন্ডিকেট শক্তি ব্যবহার করে এতগুলো মানুষকে আন্দোলনে নামালেন, কিন্তু নিজের মূল অভিযোগের ক্ষেত্রে পিউরিটি রক্ষা করলেন না, একটি হইচই ফেলে দেওয়া ইস্যু তৈরিতে অসততার আশ্রয় নিলেন, এটা কেমন অবস্থান হলো ?
৫.
আমরা লক্ষ্য করেছি, বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু মুসলিমদের মনের ভেতর যতটুকু না সাম্প্রদায়িকতা আছে, তার থেকে ঢের লুকিয়ে আছে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ভেতরে। হিন্দুরা তাদের সংখ্যালঘু ট্রাম্পকার্ড ব্যবহার করে কিভাবে মুসলমানদের সুযোগ বুঝে ল্যাং মারবে শুধু সেই তালে থাকে। গ্রাম অঞ্চলে অনেক হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে দেখেছি পুলিশের কাছে অভিযোগ দিয়েছে, প্রতিবেশী মুসলমানরা নাকি তাদের মন্দির ভেঙ্গেছে। এই কথা শুনে পুলিশ ঐ মুসলমানকে গ্রেফতার করে জেলে ভরেছে। কিন্তু পরে ঘটনা তদন্ত দেখা যায় ভিন্ন, দ্বন্দ্বটা আসলে জমি-জমা কেন্দ্রিক। হিন্দু নিজেই নিজের মন্দির ভেঙ্গে মুসলমানকে ফাঁসিয়ে জেলে ভরেছে জমির উপর কর্তৃত্ব নিতে। সাম্প্রদায়িক ইস্যু সাজিয়েছে শুধু মুসলমানকে ফাঁসাতে, অন্য কারণ নয়। ঠিক একইভাবে, লতা সমাদ্দার শহুরে শিক্ষিত শ্রেণীর হতে পারেন, একজন কলেজ শিক্ষিকা হতে পারেন, কিন্তু মনের ভেতর লুকিয়ে থাকা বিষবাষ্প তার যায়নি। অমানবিকতা তা মনের গভীরে ঘুমায়, এ ঘটনাই তার প্রমাণ।
সংগৃহীত