মোঃ রনি মল্লিক বরগুনা জেলা প্রতিনিধিঃ
বরগুনার আমতলী-তালতলী ৪০ কিলোমিটার সড়কের একাংশের কাজ শুরু করলেও সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে সড়কে চলাচলকারী পথচারী এবং দু’পাশে বসবাসকারী বাসিন্দারা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারের খামখেয়ালিপনা ও কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ দ্রুত কাজ সম্পন্নকরণের কথা জানিয়েছেন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ বরগুনা জেলা কার্যালয়ের তথ্যমতে, গত বছরের অক্টোবরে মাসে বার্ষিক জিওবি মেইনটেন্যান্স প্রকল্পের আওতায় ৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩টি প্যাকেজে আমতলী উপজেলার মানিকঝুড়ি বাজার থেকে তালতলী উপজেলার কচুপাত্রা বাজার পর্যন্ত ৮ হাজার ৪০০ মিটার সড়ক পুনর্নির্মাণ এবং একই সড়কের আমতলীর আড়পাঙ্গাশিয়া নদীতে আইবিআরপি প্রকল্পের আওতায় ৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৭ দশমিক ৩ মিটার প্রস্থের একটি গার্ডার সেতু নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়। পরবর্তী বিধিমোতাবেক সড়ক পুনর্নির্মাণের কার্যাদেশ পায় ফয়সাল এন্টারপ্রাইজ এবং গার্ডার সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ পায় টিএন অ্যান্ড এএসআই (জেভি) নামের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
কার্যাদেশ পাওয়ার পর জানুয়ারি মাসের শুরুতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বরগুনা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ ছগির মিয়া সড়কটি পুনর্নির্মাণকাজ শুরু করেন। শুরুতে সড়কের আমতলী উপজেলার মানিকঝুড়ি বাজার থেকে কচুপাত্রা বাজার পর্যন্ত প্রায় নয় কিলোমিটার সড়ক লাঙল দিয়ে খুঁড়ে ফেলে রেখেছে। এতে মানিকঝুড়ি বাজারের একাংশ, আড়পাঙ্গাশিয়া বাজার ও তারিকাটা এমপির বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ধুলাবালুতে একাকার হয়ে যাচ্ছে। সড়কের দু’পাশে বসবাসরত বাসিন্দাদের বসতবাড়িতে বসবাস অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া ওই সড়কে চলাচলরত মাহিন্দ্রা অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে চলাচলরত যাত্রীরা ধুলাবালিতে একাকার হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন।
মানিকঝুড়ি বাজারের ব্যবসায়ী জুয়েল মোল্লা বলেন, দোকানের সামনে কাপড় টানিয়েও ধুলাবালি থেকে দোকানঘর রক্ষা করা যাচ্ছে না। সড়কের খোয়ার সৃষ্ট ধুলায় জনজীবন অসহনীয় হয়ে উঠেছে।
তালতলী উপজেলা সদরের বাসিন্দা জামাল উদ্দিন বলেন,ভোগান্তির চরম অবস্থায় থাকা আমতলী-তালতলী আঞ্চলিক সড়কটি পুনর্নির্মাণ ও সেতু নির্মাণ দুই উপজেলাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি ছিল। কিন্তু ঠিকাদারের খামখেয়ালিপনায় সড়কটি পুনর্নির্মাণের জন্য খুঁড়ে ফেলে রাখায় এখন ওই সড়ক দিয়ে চলাচলে মানুষদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আব্দুল মুনয়েম সাদ বলেন, ক্ষতিকর উপাদান ও রোগজীবাণু মিশ্রিত ধুলাবালি মানবদেহে প্রবেশ করলে অ্যালার্জি,শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ সৃষ্টি করে থাকে। মারাত্মক বায়ুদূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকি।
আমতলী উপজেলার আড়পাংগাশিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহেলী পারভীন মালা বলেন, ‘সড়কটি খুঁড়ে ফেলে কাজ বন্ধ রাখায় জনদুর্ভোগে পড়েছে দুই উপজেলার প্রায় আড়াই লাখ মানুষ। ঠিকাদারকে দ্রুত সড়কটির কাজ শুরু ও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য আমি কর্তৃপক্ষকে কয়েকবার জানিয়েছি।’
আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সড়ক ও গার্ডার সেতু নির্মাণকাজ দরপত্র অনুসারে শুরু করে অজ্ঞাত কারণে ঠিকাদার ওই কাজ বন্ধ করে রেখেছেন। ঠিকাদারকে দ্রুত কাজ শুরু করতে ও নির্দিষ্ট সময়ে সম্পন্ন করার জন্য তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
সড়ক ও সেতু নির্মাণের ঠিকাদার মোঃ সগির হোসেন বলেন, ‘নির্মাণসামগ্রী নিয়ে কিছু জটিলতার কারণে রাস্তার কাজ শুরু করতে পারিনি। তবে দ্রুত কাজ শুরু করব এবং কার্যাদেশের সময়সীমার মধ্যে সড়ক ও সেতুর নির্মাণকাজ কাজ সম্পন্ন করা হবে।’
বরগুনা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী সুপ্রিয় মুখার্জি বলেন, আমি বরগুনায় সম্প্রতি যোগদান করেছি। আমি ওই সড়ক ও সেতুর বিষয় জেনে দ্রুত ঠিকাদারকে কাজ শুরু করার জন্য তাগিদ দেব এবং কার্যকর ব্যবস্থা নেব।