রাহাদ সুমন, বিশেষ প্রতিনিধি
শিক্ষিকার কপালে টিপ পড়া নিয়ে পুলিশ কনস্টেবলের আপত্তিকর মন্তব্য নিয়ে যখন দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ও আলোড়ন চলছে ঠিক সেই সময় বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ শাহ আলম মিঞা কপালে টিপ পড়াদের পতিতাদের সঙ্গে তুলনা করে এবং কুকুরের কপালে টিপ দেওয়ার ছবি পোষ্ট করে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন।
৪ এপ্রিল সোমবার সন্ধ্যায় তিনি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে কপালে টিপ দেওয়া কুকুরের ছবি সহ একটি আপত্তিকর পোষ্ট দেন। ২০০১ সালে কুকুরের মাথায় টুপি পড়িয়ে রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসেছিল বানারীপাড়ার এ বিএনপি নেতার কুকুরের কপালে টিপ দেওয়া ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোষ্ট দেওয়ার ঘটনা অতীতের সেই
ষড়যন্ত্রের কথা সবাইকে নতুন করে মনে করিয়ে দেয়।
কপালে টিপ পড়া নারীদের পতিতা ও কুকুরের সঙ্গে তুলনা করে বিএনপি নেতা শাহ আলম মিঞা কি দেশে সাম্প্রদায়িকতাকে উচকে দিতে চাচ্ছেন সচেতনমহলে এ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তারা অসাম্প্রদায়িক সৌহার্দের বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতাকে উচকে দেওয়ার চেষ্টাকারী এ বিএনপি নেতাকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। নিচে বিএনপি নেতা শাহ আলম মিঞার ফেসবুক আইডিতে দেওয়া পোষ্টটি হুবহু তুলে ধরা হল।
কপালে টিপ হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর যুগে পতিতা সনাক্তের চিহ্ন হিসাবে প্রচলন হয়, এই যুগের চরিত্রহীনারাও সেই চিহ্ন বহন করছে।
হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামকে আগুনে পুড়িয়ে মারার জন্য নমরুদ একটি ১৮ মাইলের বিশাল অগ্নিকুণ্ড নির্মাণ করে। সেটি এত বড় ও ভয়াবহ উত্তপ্ত ছিল যে, কোনো মানুষের পক্ষে হযরত ইব্রাহীম (আ.) কে সেখানে নিয়ে নিক্ষেপ করা সম্ভব হল না।অবশেষে একটি চরক বানানো হল যার মাধ্যমে হযরত ইব্রাহীম (আ.) কে ছুড়ে আগুনে নিক্ষেপ করা যায়। কিন্তু মহান আল্লাহ তাআলার নির্দেশে রহমতের ফেরেশতারা চরকের একপাশে ভর করে থাকায় চরক ঘুরানো যাচ্ছিল না।
তখন শয়তান নমরুদকে কুবুদ্ধি দিল কিছু পতিতা (নগ্ন) মেয়ে এনে চরকের সামনে বসিয়ে দিতে, কারণ এ অবস্থায় ফেরেশতারা থাকতে পারবে না। তাই করা হল এবং ফেরেশতারা চলে গেল, হযরত ইব্রাহীম (আ.) কে আগুনে নিক্ষেপ করতে তারা সক্ষম হলেন। পরবর্তীতে ওই মেয়েগুলোকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দান করা হল এবং তাদের মাথায় তীলক পরানো হল। যেটা এখন আমাদের কাছে টিপ নামে পরিচিত।
যেসব মুসলিম নারীরা টিপ পরে, তারা এই ঘটনা জানেনা। জেনেও যদি কেউ পরে তাহলে সেটা তার দুর্ভাগ্য। হিন্দুরা টিপ পরে, এটা তাদের ধর্মীয় সংস্কৃতির অংশ।
পতিতার পরিচয় বোঝানোর জন্য যে টিপ ব্যবহার করা হতো, তা আজ আমাদের উপমহাদেশে মুসলমানদের মধ্যেও ফ্যাশনে রূপান্তরিত হয়েছে !
ওহে মুসলিম মা-বোনেরা! এই সত্য কথাটা জানার পরও কি আপনি আপনাদের কপালে টিপ পরবেন ? সুতরাং এই অবমাননাকর চিহ্নটি মুসলিম মা বোনরা এড়িয়ে চলুন।
সূত্র : তাফসীরে মা-রেফুল কোরআন, হযরত ইব্রাহিম (আ.) মূলগ্রন্থ। তাবারী, তারীখ, ১খ, ১২৩-১২৪; ছালাবী আদি গ্রন্থ, কাসাসুল আম্বিয়া, পৃষ্ঠাঃ ৮১, আদি ইসলামী ইতিহাস, ইবনে কাসীর।