হবিগঞ্জ জেলা স্টাফ রিপোর্টারঃ॥
আন্তঃজেলা গাড়ি চোরের গডফাদারসহ বিভিন্ন অপকর্মের হোতা আটক ‘চশমা তারেক’ এর কাছ থেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।
সে তার সহযোগীদের নামও প্রকাশ করেছে বলে জানা গেছে। তার অন্যতম সহযোগি আষেড়া ফান্দ্রাইল গ্রামের শিশু মিয়ার পুত্র কুখ্যাত চোর রিপন মিয়াকে খুঁজছে পুলিশ। তারেক আটকের পর থেকেই সে সটকে পড়েছে। স্থানীয়রা জানায় রিপন এক সময় রাস্তায় রাস্তায় বোতলসহ ভাঙ্গারি কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। চশমা তারেকের সাথে চোরাই গাড়ির ব্যবসা করে কোটি টাকার মালিক হয়েছে।
গতকাল শনিবার দিনভর ঢাকার মিন্টুরোডের ডিবি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে এমন তথ্য জানিয়েছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, আজ রবিবার তাকে কোর্টে পাঠিয়ে রিমান্ডে আবেদন করা হবে। রিমান্ডে মাধ্যমে আরও তথ্য উদঘাটন করা হবে। কিন্তু পুলিশের কাছে দেয়া তথ্য যাচাই বাছাই করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এর আগে হবিগঞ্জ থেকে চশমা তারেকে আটক করে ঢাকা ডিবি পুলিশ। এ সময় ৩টি চোরাই প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন ভূয়া কাগজপত্র জব্দ করা হয়। সে হবিগঞ্জ শহরের শ্যামলী এলাকার রহমান আলীর পুত্র। তার পুরো নাম তারেকুল ইসলাম অলি (৩৫)। তবে সকলের কাছে সে চশমা তারেক নামে পরিচিত। নবীগঞ্জ উপজেলায় তার বাড়ি। যদিও তেমন একটা লেখাপড়া করেনি সে। অষ্টম শ্রেণি পাস করে সে হবিগঞ্জ শহরে আসে। কয়েক বছর আগেও যার নুন আনতে পান্তা ফুরাতো সে আজ কোটি টাকার মালিক।
স্থানীয়রা জানান, কতিপয় অসাধু আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ছত্রছায়ায় থেকেই সে অবৈধ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে।
গত শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে ঢাকা মিন্টু রোড এলাকার ডিবি পুলিশের সিনিয়র এএসপি আশরাফুল ইসলাম নেতৃত্বে একদল পুলিশ হবিগঞ্জ সদর পুলিশকে নিয়ে সাড়াশি অভিযান চালিয়ে উমেদনগর এলাকার এক বাসা থেকে তাকে আটক করেন।
এ সময় আরও কয়েকজন পালিয়ে যায়। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী (ঢাকা মেট্রো-গ-১৩-৩৩৭২) একটি সাদা রংয়ের প্রাইভেটকার কাশেম নামের জনৈক ব্যক্তির নিকট থেকে জব্দ করা হয়। এ ছাড়াও আরও দুইটি কালো ও লাল প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়। তবে এগুলো কোনোটিরই বৈধকাগজপত্র নেই। যদিও হবিগঞ্জ কোর্টের ম্যাজিস্ট্রেটের স্বাক্ষরিত নিলামের কিছু ডকুমেন্ট দেখানো হয়েছে, সেগুলোও ভূয়া। ইতোপূর্বেও হবিগঞ্জ শহরে অভিযান চালিয়ে ৪/৫টি দামি প্রাইভেটকারসহ গাড়ি চোর সিন্ডিকেটের সদস্য ছাত্রলীগ নেতা উজ্জল পাঠানসহ দুই জনকে আটক করে কারাগারে প্রেরণ করে।
ওই সময় তারেক আত্মগোপনে চলে যায়। কিন্তু কিছুদিন পর আবারও সে হবিগঞ্জ শহরে এসে পুনরায় চোরাই গাড়ির ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। এই চক্রের সাথে হবিগঞ্জ চীফ জুডিসিয়াল কোর্টের এক কর্মচারীও জড়িত বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, গত ২১ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাফরুল থানার বিআরটিএ অফিসের সামনে থেকে একজন সংসদ সদস্যের কন্যার একটি দামি প্রাইভেটকার চুরি হয়। এ ঘটনায় ভিকটিমের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কাফরুল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। পরে এ বিষয়ে মিরপুর বিভাগের (গোয়েন্দা) পুলিশ সংঘবদ্ধ অপরাধ কাউন্টার টেরোরিজিম, গাড়ী চুরি প্রতিরোধ ও উদ্ধার টিম মামলাটি তদন্ত শুরু করে। তদন্তকালে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে হবিগঞ্জে প্রায় ২০ টি চোরাই গাড়ি রয়েছে ও অভিযুক্তদের শনাক্ত করে।
জানা যায়, ‘চশমা তারেক’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর খাতায় চোরাকারবারি হিসেবে তালিকাভূক্ত। হবিগঞ্জ শহরের তিনকোনা পুকুরপাড় এলাকায় তার রয়েছে একটি চমশার দোকান। যে কারণে সে শহরে ‘চশমা তারেক’ নামে পরিচিত। মূলত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোঁখ ফাঁকি দিতে চশমা ব্যবসার আড়ালে সে গড়ে তুলেছে চোরাকারবারির বিশাল সিন্ডিকেট। দেশের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে তার একাধিক প্রশিক্ষিত গাড়ি চোর চক্র। এসব চক্রের মাধ্যমে গাড়ি চুরি ও বেচা-কেনা করে থাকে সে। এছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তের চোরাই পথে চা-পাতা, গাড়ির টায়ার ও মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন দ্রব্য অবৈধ ভাবে আমদানি-রপ্তানি করে আসছিল। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় রয়েছে একাধিক মামলা।
এ বিষয়ে অভিযান দলের প্রধান আশরাফুল ইসলাম জানান, হবিগঞ্জ জেলায় একটি গাড়ি চোর চক্রের শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। এ চক্রের হোতা তারেক। তাকে আটক করা হয়েছে এবং এ চক্রের সাথে আর কারা কারা জড়িত রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে রহস্য উদঘাটন করা হবে। এ ছাড়া হবিগঞ্জে আরও ১০/১৫টি চোরাই গাড়ি রয়েছে। এগুলোও উদ্ধার করা হবে।