রিপোর্টঃ মোঃ ওবায়েদুর রহমান সাইদ শরীয়তপুর প্রতিনিধি।
শরীয়তপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ ভাসানচর গ্রামের দরিদ্র কৃষক আ. মান্নান সরদারের ছেলে দীন ইসলাম (২১)। দরিদ্রতার জন্য তেমন লেখাপড়া করতে পারেননি। পরিবারের আর্থিক অভাব দূর করতে স্বপ্ন দেখছেন বিদেশে যাওয়ার। আর বিদেশ যেতে হলে সর্বপ্রথম যে জিনিসটির দরকার হয় তা হলো পাসপোর্ট। শরীয়তপুর জেলা পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট করতে গিয়ে প্রথমেই হয়রানির শিকার হন দীন ইসলাম।
গত মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) দোকান থেকে অনলাইনে ফরম পূরণ করে ব্যাংকের মাধ্যমে ফি জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে জমা নেওয়ার জন্য জেলা পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ান দীন ইসলাম। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে কাউন্টারে গিয়ে ফরম জমা দিলে দায়িত্বে থাকা সালেহ আহমেদ দীন ইসলামের ফরম ফিরিয়ে দেন। পরের দিন বুধবার আবারও পাসপোর্ট অফিসের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে কাউন্টারে ফরম জমা দিলে আবারও তাকে ফিরিয়ে দেন সালেহ আহমেদ। পরে পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক (এডি) সাদ্দাম হোসেনের কাছে গেলে তিনিও দীন ইসলামকে ফিরিয়ে দেন।
নিরুপায় হয়ে দীন ইসলাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) সাইফুল ইসলামের কাছে গেলে তিনি দীন ইসলামের কাগজপত্র দেখে পাসপোর্ট অফিসের এডি সাদ্দাম হোসেনকে কল করে এ বিষয়ে কথা বলেন। পরে এনডিসি সাইফুল ইসলাম দীন ইসলামকে পাসপোর্ট অফিসের এডি সাদ্দাম হোসেনের সাথে দেখা করতে বলেন। এনডিসি সাইফুল ইসলামের কথামতো দীন ইসলাম এডি সাদ্দাম হোসেনের সাথে পূর্নরায় দেখা করলে তার ফরম জমা নেওয়া হয়। অবশেষে এনডিসি সাইফুল ইসলামের হস্তক্ষেপে হয়রানী থেকে রক্ষা পায় দীন ইসলাম।
দীন ইসলাম বলেন, আমি গত মঙ্গলবার পসপোর্ট করার জন্য অফিসে যাই। দোকান থেকে অনলাইনে ফরম পূরণ করে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা জমা দিয়ে চালান ফরম, অনলাইন ফরম সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে পাসপোর্ট অফিসের কাউন্টারে জমা দিলে ফরমে কোন ভুল না থাকা সত্ত্বেও কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা সালেহ আহমেদ ফরম জমা না নিয়ে আমাকে ফিরিয়ে দেন। পরের দিন বুধবার আমি আবারও দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ফরম জমা দিলে কাউন্টারের সালেহ আহমেদ আবারও আমার ফরম ফিরিয়ে দিয়ে দালালের মাধ্যমে যেতে বলেন।
পরে আমি পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক সাদ্দাম হোসেনের কাছে গেলে তিনিও আমাকে ফিরিয়ে দেন। পরে আমি নিরুপায় হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এনডিসি সাইফুল ইসলাম স্যারের কাছে গিয়ে বললে তিনি আমার কাগজপত্র দেখে পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক সাদ্দাম হোসেনকে কল করেন এবং আমাকে তার সাথে দেখা করতে বলেন।
এনডিসি স্যারের কথামতো আমি সহকারী পরিচালক সাদ্দাম হোসেনের সাথে দেখা করলে আমার ফরম জমা নেওয়া হয়। এনডিসি সাইফুল ইসলাম বলেন, গত বুধবার দীন ইসলাম নামে একটি ছেলে আমার কাছে এসে অভিযোগ করে বলেন, পাসপোর্ট অফিসে নাকি তার ফরম জমা নিচ্ছে না। তাকে নাকি হয়রানি করা হচ্ছে। তখন আমি তার কাগজপত্র দেখে পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক সাদ্দাম হোসেনকে কল করে ছেলেটির বিষয়ে কথা বলি এবং আমি ছেলেটিকে তার কাছে পাঠিয়ে দেই।
পরে কি হয়ছে আমার জানা নেই।ফরম জমা না নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে পাসপোর্ট অফিসের কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা সালেহ আহমেদ বলেন, এডি স্যারের নির্দেশ। তিনি যেভাবে নির্দেশ দেন আমরা অফিসের সবাই সেভাবেই কাজ করি। তার নির্দেশের বাইরে আমরা কিছু করতে পারি না।রবিবার দুপুরে জেলা পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে সহকারী পরিচালক (এডি) সাদ্দাম হোসেনের কাছে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি কোন কথা বলতে রাজি হননি।এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসান বরাবরের মতো অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান।