
গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :
ময়মনসিংহের গৌরীপুরে শিল্প-কারখানা, খাবারের দোকান, স-মিল, রাইসমিল, ইটভাটাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে লাইসেন্স নবায়নের নামে ভয়ভীতি প্রদর্শন, ভুয়া ফায়ার এক্সটিং (অগ্নিনির্বাপক বোতলজাতীয় গ্যাস) বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে মর্ডাণ ডায়াগনেস্টিক সেন্টারে পুরাতন ফায়ার এক্সটিং পরিবর্তনের নামে গ্যাসবিহীন মেয়াদউর্ত্তীণ বোতল প্রদান করায় বিক্ষুব্দ দোকানীরা সোহরাব হোসেন নামে ফায়ার সার্ভিসের প্রক্সি অফিসারকে আটক করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন গৌরীপুর ফায়ার সার্ভিসের লিডার হাসানুজ্জামান শাহীন।
তিনি জানান, সোহরাব হোসেন ফায়ার সার্ভিসের কোনো কর্মকর্তা নন। তিনি এ বিভাগের কেউ নয়। শিল্প-কারখানা পরিদর্শন, লাইসেন্স নবায়ন ও নতুন লাইসেন্স প্রদান, ফায়ার এক্সটিং বিক্রি সম্পূর্ণভাবে অবৈধ। প্রক্সি অফিসার সোহরাব হোসেন উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের গাঁওরামগোপালপুর গ্রামের মৃত রুস্তম আলীর পুত্র।
তিনি জানান, ময়মনসিংহ সদর, ঈশ্বরগঞ্জ ও গৌরীপুর ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স বিভাগের ইন্সপেক্টর মো. মিজানুর রহমানের হয়ে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। তবে তিনি এ বিভাগের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী নন। তার আদেশেই তিনি বিভিন্ন দোকানের লাইসেন্স সংক্রান্ত কার্যক্রম ও ফায়ার এক্সটিং বিক্রির কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
ফায়ার এক্সটিং বিক্রির দোকান থেকে এসব অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ক্রয় করে মর্ডান ডায়াগনেস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপক মো. রমজান আলী জানান, তিনি এ ডায়াগনেস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স নবায়ন করে দেন। গত ৩মাস আগে এই সোহরাব হোসেন ৬শ টাকার ভাউচার দিয়ে ফায়ার এক্সটিং বোতলে গ্যাস ও পাউডার দেন। তবে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের লিডার হাসানুজ্জামান শাহীন পরীক্ষা করে দেখেন, এ বোতলে অগ্নিনির্বাপকের কোনো পাউডার নেই। দোকানদারের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, গৌরীপুর তাল্লু স্পিনিং মিলসেও সম্প্রতি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সোহরাব হোসেনের দেয়া ফায়ার এক্সটিং দিয়ে আগুন নিভানোর বারবার চেস্টা করেও শ্রমিকরা ব্যর্থ হয়েছে। সেখানেও ফায়ার এক্সটিংয়ে গ্যাস ছিলো না।
শহরের অধিকাংশ খাবারের দোকান ও ইটভাটা মালিক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, সোহরাব হোসেন নিজেকে ফায়ার সার্ভিসের লোক হিসাবে পরিচয় দেন। লাইসেন্স পরিদর্শনের সময় তিনি বড় কর্মকর্তার দাপট দেখান। প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে সিলগালা ও জেল-জরিমানারও হুমকি দেন।
এ তিন উপজেলার (ময়মনসিংহ সদর, ঈশ্বরগঞ্জ ও গৌরীপুর) ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইন্সপেক্টর মো. মিজানুর রহমান জানান, আমি ৩দিন ধরে অসুস্থ। জ্বরে আক্রন্ত। তাই ফায়ার এক্সটিং দিয়ে সোহরাব হোসেনকে পাঠানো হয়েছে। জরুরী প্রয়োজনে আমি যেতে না পারলে, তাকে পাঠানো হয়।
এ প্রসঙ্গে ময়মনসিংহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক পূর্ণ চন্দ্র মুৎসুদ্দী পিএফএম জানান, ফায়ার সার্ভিসের পরিচয়ে অন্য কেউ লাইসেন্স পরির্দশন, নবায়ন বা প্রদানের সুযোগ নেই। তিনি আরও জানান, তবে এখন পর্যন্ত শিল্পকারখানা-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা সরাসরি ফায়ার সার্ভিসে যোগাযোগ করে না। একটি তৃতীয় দালালচক্রের মাধ্যমেই আসে, এটাই চলছে।
এ প্রসঙ্গে, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেটনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্ণেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।