
সিনিয়র রিপোর্টার- চট্টগ্রাম:
* প্রথমে ফ্ল্যাট কেনার প্রলোভন।
* পরে আওয়ামী লীগ ওয়ার্ড সভাপতি ট্যাগ দিয়ে ভয় দেখানো।
* বিনা মামলা ও ওয়ারেন্ট ছাড়াই হাতকড়া পরিয়ে উঠিয়ে নিয়ে গেল হালিশহর পুলিশ।
* ২ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি হালিশহর থানা পুলিশ কর্মকর্তা এএসআই রাকিবের।
* ঊর্ধ্বতর কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করতে হবে, অন্যথায় ব্যবসা করা যাবে না।
* চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় মব সৃষ্টির পাঁয়তারা।
* ডিসি অফিসের কথা বলে ভুক্তভোগী কে পুলিশের তিন পিকাপ এ করে উঠিয়ে নিয়ে গেল হালিশহর থানায়।
* সুবিধা করতে না পারায় মধ্যরাতে ছেড়ে দিল ভুক্তভোগী কে।
এমনই এক ঘটনা ঘটে গত ০৯/০৯/২০২৫ তারিখ রোজ বৃহস্পতিবার আনুমানিক রাত সাড়ে ৭ টা থেকে ৮ঃ০০ ঘটিকায়, শ্যামলী আবাসিক এলাকা হালিশহর সিএমপি চট্টগ্রামে। ভুক্তভোগী মোঃ তহিদুল করিম খন্দকার (বাবু)। তিনি একজন ডেভলপার ব্যবসায়ী। তাহার নিজের একটি ডেভলপার কোম্পানী রয়েছে। যার নাম রাব্বি এন্টারপ্রাইজ। তিনি উক্ত প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদে রয়েছেন। ঘটনাস্থল: ৭৬/ক, শ্যামলী আ/এ আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম। উক্ত প্রতিষ্ঠানে ঘটনার সৃষ্টি। সাংবাদিকদের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছে বাবু।
ভুক্তভোগী বাবু বলেন, গত ০৯/০৯/২০২৫ তারিখ রোজ বৃহস্পতিবার সাড়ে সাতটার দিকে হালিশহর থানা পুলিশের তিনটি পিকআপ আমার প্রজেক্ট এর সামনে এসে দাঁড়ায়। এএসআই রাকিব সিভিল পোশাকে আমার অফিস কক্ষে আসে। কথার একপর্যায়ে তিনি আমার কাছে জানতে চায় আপনার এখানে ফ্ল্যাট কত স্কয়ার ফিট এবং কত টাকা হলে একটি ফ্ল্যাট নেওয়া যাবে।
হঠাৎ রাকিব সাহেব আমার টেবিলের উপর পুলিশের ওয়ারলেস রাখেন। হঠাৎ তার বচনভঙ্গি পরিবর্তন হয়ে যায়। তিনি আমাকে প্রশ্ন করেন বাবু ভাই আওয়ামী লীগ সভাপতি তাই না? আপনি তো এখনো ব্যবসা করছেন? এইখানে ব্যবসা করতে হলে আমাদেরকে দুই লক্ষ টাকা চাঁদা দিতে হবে। আমার সিনিয়রদের ম্যানেজ করতে হবে। আমি প্রশ্ন করলে আপনার সিনিয়র কে।
তিনি উত্তরে বলেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। এই কথা শুনে আমি বলি আপনি তো আমাকে মিথ্যা ট্যাগ দিয়ে ফাঁসাতে চাচ্ছেন। আমার পক্ষে কোন প্রকার টাকা /চাঁদা দেওয়া সম্ভব না। এই কথা শুনে রাকিব সাহেব চিল্লা চিলি করতে থাকে। আশেপাশ থেকে মানুষ জড়ো হতে থাকে। আমি রাকিব সাহেব কে বলি আমি কেমন মানুষ আশেপাশে খোঁজখবর নেন। তিনি কারো কথা না শুনে আমার নামে মামলা বা ওয়ারেন্ট ছাড়াই হাতকড়া পরিয়ে সকলের সামনে থেকে আমাকে নিয়ে যায়।
উপস্থিত এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা শ্যামলী জামে মসজিদের উপদেষ্টা প্রফেসর মোহাম্মদ আবুল বাশার বলেন, আমার জানামতে বাবুকে কখনো রাজনীতির দলাদলি এবং হানাহানি করতে দেখিনি। তাকে যতটুকু দেখেছি গরিব মানুষের উপকারে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছে, তার সাধ্যের মধ্যে। এমন ভালো মানুষকে যদি কথা নাই বার্তা নাই বিনা মামলা বা ওয়ারেন্ট ছাড়াই তুলে নিয়ে যাওয়া হয় এতে আমিও আমাকে নিরাপদ মনে করছি না। এই ঘটনায় তিনি তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেন এবং পুলিশ প্রশাসনের কাছে এমন কর্মকাণ্ডের জন্য উক্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কামনা করেন।
আরেক স্থানীয় বাসিন্দা আহসান হাবীব বলেন- উক্ত ঘটনার কিছুক্ষণ পর আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। আমি দেখলাম কিছু পুলিশ বাবুকে নিয়ে টানাটানি করছে। আমি পুলিশকে প্রশ্ন করলাম আপনি বাবুকে হাত করা পরিয়েছেন কেন? তার নামে কি মামলা বা ওয়ারেন্ট আছে? তিনি উচ্চস্বরে বলে উপরের নির্দেশ! তিনি এলাকার কোন সন্ত্রাসীও না যতটুকু জানি তিনি একজন ভালো ব্যবসায়ী। সরকারকে ট্যাক্স দিয়ে ব্যবসা করে। আমার কথা শুনে পুলিশের এএসআই রাকিব বলেন উপরে নির্দেশ আছে বলে তাকে নিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু কোন কাগজ দেখাতে পারেননি।
রাকিব আরো বলেন, আমি বড়পুলে নিয়ে যাচ্ছি ডিসি অফিসে। কিন্তু ডিসি অফিসের কথা বলে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ঐদিন রাত ১২.৩০ টায় পুলিশের ২টি পিকআপ এসে বাবুকে এলাকায় দিয়ে যায়। পুলিশের এমন আচরণে ক্ষিপ্ত এলাকাবাসী। হালিশহর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোহাম্মদ জাকির হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই বিষয়ে কিছুই জানেন না।
তিনি বলেন, আমি ছুটিতে আছি। আমি এই বিষয়ে কোন কিছু জানি না। উক্ত জোনের উপ-সহকারী পুলিশ কমিশনার কাজী বিধান মোহাম্মদ আবিদ এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই বিষয়ে শুনেছি কিন্তু কি বিষয়ে আনা হয়েছে তা জানিনা। তিনি ওই সময় থানায় ছিলাম। দ্বিতীয় তলায় অন্য মামলার বিষয় নিয়ে তদন্ত করছিলাম। এই বিষয়ে শুনেছি একজনকে নিয়ে আসা হয়েছে। কোন বিষয়ে, কেন আমি কিছু জানি না। তাহলে কোন সিনিয়র এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশে।
ভুক্তভোগী বাবু সংবাদ কর্মীদের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, এবং এই ঘটনা তদন্ত করে এএসআই রাকিবের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জোর দাবি জানান, এবং তিনি এটাও বলেন, আমি আইনের প্রতি শতভাগ শ্রদ্ধাশীল।