
নিজস্ব প্রতিবেদক
তেতুলিয়া এলজিইডি প্রকৌশলী ইদ্রিস আলী খানের বিরুদ্ধে ঘুষ দূর্নীতি ও সরকারি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করে শত কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ, রয়েছে একাধিক আলিশান ডুপ্লেক্স বাড়ি গাড়ি মোটরসাইকেল সহ বিপুল পরিমাণ সম্পদ।
স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম আর দুর্নীতি হয়েছিল এবং এই দুর্নীতির মুখ্য ভূমিকায় ছিল এলজিইডির অধিকাংশ প্রকৌশলীরা, তাদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দুর্নীতি ঠিকাদার কমিশন বাণিজ্য ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগের পাহাড় জমা হলো তা কখনো কার্যকর হতো না কারণ অধিকাংশ দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীরা স্বৈরাচার ফ্যাসিবাদের প্রভাব খাটিয়ে সবকিছু অদৃশ্য করে দিতেন, ২০২৪ সালের ৫ ই আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন হলেও ফ্যাসিবাদের দোসররা রয়ে গেছে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সমর্থক তেতুলিয়া উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী ইদ্রিস আলী খান ঘুষ দুর্নীতি ও নানা অনিয়ম করে আজ শত কোটি টাকার মালিক এবং বরাবরই তিনি থাকেন ধরাছোঁয়ার বাহিরে।
মোঃ ইদ্রিস আলী খান পাবনা সদরের হেমায়েতপুরের দরিদ্র কৃষক আকবর আলী খানের পুত্র, সামান্য একটু কৃষিজমি ছাড়া পিতার তেমন কোন জমি জমা ছিল না অর্থসংকটের ভেতরেই জীবন অতিবাহিত হয়েছে ইদ্রিস আলী খানের, তবে এলজিইডি প্রকৌশলী হওয়ার পরে পরিবারে ফিরে আসতে শুরু করে আর্থিক স্বচ্ছলতা। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে হয়ে ওঠেন ব্যাপক প্রভাবশালী সাবেক সংসদ সদস্য পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার গোলাম ফারুক প্রিন্সের ছত্রছায়ায়।
অভিযোগ আছে, ইদ্রিস আলী খান পাবনায় এলজিডি প্রকৌশলী থাকা অবস্থায় বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে ফেলেন, বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কাজের সম্পূর্ণ অর্থ আত্মসাৎ করে ফেলেন ও সড়কের নিম্নমান সামগ্রী দিয়ে নির্মাণের জন্য স্থানীয়রা তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে কিন্তু স্থানীয় সংসদ সদস্য খন্দকার গোলাম ফারুক প্রিন্সের প্রভাবে সবকিছু ধামাচাপা পড়ে যায় এবং তাকে সেখান থেকে বদলি করা হয় তেতুলিয়ায়, ৫ ই আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পতনের পর ভোল পাল্টিয়ে ফেলেন নিজেকে প্রচার করেন বিএনপিপন্থী প্রকৌশলী হিসেবে এবং অবৈধ অর্থের প্রভাবে নিজের সকল কুকর্ম অদৃশ্য করে ফেলেন।
তেঁতুলিয়ার প্রকৌশলী হিসেবে যোগদানের পর পরই এখানেও শুরু করে দেন নানা অনিয়ম দুর্নীতি তবে বরাবর এখানে তিনি থেকে যান ধরাছোঁয়ার বাহিরে, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে তেতুলিয়ায় সড়ক নির্মাণের ১৫ দিনের ভিতর দেবে যায়, তখন এই অনিয়মের সংবাদ গত মে মাসে প্রতিটা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরে বুড়াবুড়ি বাজার থেকে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত ১ হাজার ৫৬৫ মিটার সড়ক উন্নয়নের জন্য ১ কোটি ৮৪ লাখ ৬৪ হাজার ১৭৯ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল, এই বরফদের বড় একটা অংশ ইদ্রিস আলী খান কমিশন হিসেবে ঘুষ নেন তখন এটা নিয়ে এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল কিন্তু সেই ঘটনা তিনি ধামাচাপা দিয়ে তিনি থেকে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাহিরে।
অভিযোগ আছে, গত ১৮ জুলাই তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনই আরএন্ডএইচ-সিপাইপাড়া রোড হয়ে কাশিমগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি সড়ক প্রকল্পে কাজের এক-চতুর্থাংশ সম্পন্ন না করে কোটি কোটি টাকার বিল উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছিল, এটা নিয়ে পঞ্চগড়ে ব্যাপক হইচই পড়ে যায় প্রথম শ্রেণীর সকল গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়, কিন্তু উপজেলা এলজিইডি র বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন ওই বিলের বড় একটা অংশ প্রকৌশলী ইদ্রিস আলীর পকেটে গিয়েছিল কিন্তু তিনি ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাহিরে, কারণ তিনি প্রচুর ধূর্ত ও চালাক টাইপের মানুষ, নিজে অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে ছুটি নিয়ে এই কাজ প্রত্যক্ষ পরোক্ষ ভাবে তার সমর্থনও হয়েছিল, এরকম আরও বহু অনিয়ম দুর্নীতির সাথে তিনি জড়িত কিন্তু প্রতিবারই তিনি অদৃশ্য কারণে ধরাছোঁয়ার বাহিরে থাকেন।
প্রকৌশলী ইদ্রিস আলী খান ঘুষ দুর্নীতি সরকারি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আছে। ইদ্রিস আলী বিবাহ করেছেন পাবনা সদরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ছাতিয়ানীর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মৃত ওয়াজ উদ্দিন শেখের কন্যা রোকেয়া বেগম স্বপ্নাকে, এখানেই তিনি করেছেন বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে তার একাধিক ডুপ্লেক্স বাড়ি আলিশান গাড়ি ছেলেদের জন্য ক্রয় করে রেখেছেন ছয়টি মোটরসাইকেল।
অনুসন্ধানে উঠে আসে চলাচলের জন্য রয়েছে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা দামের একটি আলিশান গাড়ি যাহার নম্বর ঢাকা মেট্রো চ ১৬-৪৩৪৫, এখানে তিনি প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন গাড়িটি ক্রয় করেছেন: মোঃ মনোয়ার হোসেন পাইলট, পিতা মোঃ মুখলেসুর রহমান, ঠিকানা বাড়ি ৪০/৪২, সেকশন ৭, আরামবাগ মিরপুর ঢাকা, কিন্তু গাড়িটি ক্রয় করার পর তিনি নাম পরিবর্তন করেননি একটি স্টাম্পে লিখিত চুক্তির মাধ্যমে মালিকানা করে নিয়েছেন কারণ তার নামে রেজিস্ট্রেশন হলে এই অর্থের হিসাব তিনি দিতে পারবেন না এটা সম্পূর্ণ অবৈধ অর্থে ক্রয় করা, এই মালিকানা পরিবর্তন না করার জন্য তিনি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে গাড়িটি ভাড়া দিতে পারেননি, তিনি এলাকায় কারো সঙ্গে তেমন একটা চলাফেরা বা কথা বলেন না বিশেষ করে ৫ ই আগস্টের পরে খুব সতর্ক অবস্থায় থাকেন, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের তার মোট তিনটি বাড়ি একটি বাড়ি আট তালা নির্মানাধীন যেখানে প্রায় কয়েক কোটি টাকা খরচ করছেন এবং এটি নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে অনেক এলাকাবাসী বলেন তিনি এই বাড়িতেই উঠবেন, বড় ছেলে ইমন একটি ব্যয়বহুল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যায়নরত ছোট ছেলে শিরোন উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছে দুই ছেলের বিলাসিতার জন্য ছয়টি মোটরসাইকেল ক্রয় করে দিয়েছে, স্ত্রী সন্তানদেরকে নিয়ে ঘুরে বেড়ান দেশ-বিদেশ, পাবনা মেইন শহরে তার তিনটি দোকান রয়েছে যার আনুমানিক মূল্য কয়েক কোটি টাকা, পাবনা সদর ও আশেপাশের বেশ কয়েকটি উপজেলায় বিপুল পরিমাণ সম্পদ স্ত্রী সন্তান ও বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের নামে বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ ও অর্থ রয়েছে তার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা বলেন ইদ্রিস আলী কারোর সঙ্গে তেমন কথা বলেন, না তার বাড়িতে কোন লোকজনকে সহজে ঢুকতে দেন না নিজেকে খুব অহংকারী ভাবে সরকারি একজন প্রকৌশলী হয়ে এত কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পত্তি তিনি কোথায় পেলেন কত টাকা তিনি বেতন পান ? তারা আরো বলেন সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার গোলাম ফারুক প্রিন্সের নির্বাচনে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছেন এছাড়াও ইউনিয়ন ও উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে অর্থ ব্যয় করতেন।
পাবনা ও তেতুলিয়া এলজিইডি অফিসের বেশ কয়েকজন প্রকৌশলী কর্মকর্তা কর্মচারীরা বলেন, ইদ্রিস আলীর সকল অপকর্ম অনিয়মে জড়িত কিন্তু তিনি কখনো ধরা পরেন না কোন এক অদৃশ্য কারণে তিনি সবসময় পার পেয়ে যান তার বিরুদ্ধে গভীরভাবে অনুসন্ধান করলে বিভিন্ন অনিয়ম ও তার অবৈধ অর্থের উৎস ধরে কাজ করলে সবকিছু প্রমাণ হয়ে যাবে তিনি দুর্নীতিবাজ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, অনেক এলজিইডি প্রকৌশলী আমাদের নজরদারিতে আছে কোন দুর্নীতিবাজ ছাড় পাবে না এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ আমরা খুব গুরুত্ব সহকারে পর্যালোচনা করি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকৌশলী ইদ্রিস আলীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ ও খুদে বার্তা পাঠানো হলে তিনি বার্তা দেন এগুলো সব মিথ্যা ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।
প্রকৌশলী ইদ্রিস আলীর অনিয়ম ঘুষ দুর্নীতি ও আরো সম্পদের তথ্য নিয়ে আসছে দ্বিতীয় পর্ব।