ডাকসু নির্বাচনে চট্টগ্রামের জয়জয়কার

আপলোড সময় : ১১-০৯-২০২৫ ০৪:৩৫:৪৬ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১১-০৯-২০২৫ ০৪:৩৫:৪৬ অপরাহ্ন

এম মনির চৌধুরী রানা চট্টগ্রাম 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদের নির্বাচনে শিবির সমর্থিত প্রার্থীরা অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে। এবারের নির্বাচনে মোট ২৮টি পদে ভোট হয়। এর মধ্যে ভিপি, জিএস ও এজিএসসহ শীর্ষ তিনটি পদ, ১২টি সম্পাদকীয় পদ এবং ১৩টি কার্যকরী সদস্য পদ রয়েছে। সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার আরও কয়েকজন বিভিন্ন হলে শীর্ষ পদে নির্বাচিত হয়েছেন। 


ফলাফলে দেখা গেছে, সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার অন্তত ১২ জন প্রার্থী জয় পেয়েছেন। ডাকসুর ২৮টি আসনের মধ্যে ১১টি পদেই জিতেছেন এই এক আসনের প্রার্থীরা। তারা সবাই শিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের অংশ। এর বাইরে বৃহত্তর চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের একজন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে দুইজন নির্বাচিত হয়েছেন। প্রায় ৬ বছর পর আয়োজিত এ নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ৩৯ হাজার ৮৭৪। এর মধ্যে ছাত্র ভোটার ২০ হাজার ৯১৫ এবং ছাত্রী ভোটার ১৮ হাজার ৯৫৯। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে টানটান উত্তেজনার মধ্যে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়  বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮টি কেন্দ্রে মোট ৮১০টি বুথে ভোট হয়।


সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ৪৫ জন এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সব মিলিয়ে প্রতিটি ভোটারকে ৪১টি করে ভোট দিতে হয়েছে। ভোট নেওয়া হয় ওএমআর ফরমে, ৬ পাতার ব্যালটে। ভোট গণনা হয়েছে ১৪টি গণনা মেশিনে।


বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টায় ডাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন। ডাকসুর পূর্ণাঙ্গ ২৮টি পদে প্রার্থী ছিলেন ৪৭১ জন। এর মধ্যে শিবির সমর্থিত প্রার্থীরা ২০টির বেশি পদে জয় পেয়েছে। শুধু সাতকানিয়া-লোহাগাড়া থেকেই জয়ী হয়েছেন ১২ জন। শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে হলভিত্তিক পদ সব জায়গায়ই প্রভাব বিস্তার করেছে এই অঞ্চলের প্রার্থীরা।


সহসভাপতি (ভিপি) হয়েছেন সাতকানিয়ার আবু সাদিক কায়েম। তিনি ১৪ হাজার ৪২ ভোট পেয়ে বিপুল ব্যবধানে জয় পান। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) হয়েছেন লোহাগাড়ার চুনতির এস এম ফরহাদ, যিনি ১০ হাজার ৭৯৪ ভোট পান। পরিবারের ব্যবসাসূত্রে দুজনের পরিবার যথাক্রমে পরে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে স্থায়ী হয়।


সম্পাদকীয় পদে স্বামী-স্ত্রীর জয় কমন রুম রিডিং রুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক হয়েছেন উম্মে ছালমা। তিনি সাতকানিয়ার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের মির্জাখীল গ্রামের বাসিন্দা। তার স্বামী রায়হান উদ্দীনও জিতেছেন কার্যকরী সদস্য পদে। তিনি সাতকানিয়ার ছদাহার বাসিন্দা। স্বামী-স্ত্রীর যুগল জয় এবারের নির্বাচনে অনন্য ঘটনা হিসেবে দেখা হয়েছে। শিবির সমর্থিত প্যানেল সম্পাদকীয় পদে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে। ১২টি সম্পাদকীয় পদের মধ্যে ৯টিতে জয়ী হয়েছে তারা। বাকি তিনটিতে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।


সাদিক কায়েম খাগড়াছড়ি বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া আদর্শ মাদ্রাসা থেকে দাখিল এবং পরে চট্টগ্রামের বায়তুশ শরফ থেকে আলিম পাস করেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। এসএম ফরহাদ রাঙামাটি জেলার মাইনী গাথাছড়া বায়তুশ শরফ মাদ্রাসার থেকে দাখিল পাস করেন। এরপর চট্টগ্রামের বায়তুশ শরফ মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করেন। দুজনেই বায়তুশ শরফের শিক্ষার্থী হলেও ছিলেন ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষাবর্ষের।


সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার আরও কয়েকজন বিভিন্ন হলে শীর্ষ পদে নির্বাচিত হয়েছেন। এরা হলেন স্যার এএফ রহমান হলের ভিপি রফিকুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ভিপি মুসলিমুর রহমান, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ভিপি ওসমান গণি ও এজিএস আবদুল মজিদ, মাস্টারদা সূর্যসেন হলের পাঠকক্ষ সম্পাদক মো. ইমরান, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের কার্যকরী সদস্য শাহেদ ইমন এবং কবি জসীম উদ্‌দীন হলের কার্যকরী সদস্য রোকন উদ্দীন।


অন্যদিকে বিভিন্ন হলে বাঁশখালীর বাসিন্দা যারা শীর্ষ পদে নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন বিজয় একাত্তর হলের ভিপি শেখেরখীলের হাসানুল বান্না আরাফাত, সূ্র্যসেন হলের জিএস আজিজুল হক, জসিম উদ্দীন হলের জিএস মাসুম আব্দুল্লাহ, শেখ মুজিবুর রহমান হলের সমাজসেবা সম্পাদক আজিজুর রহমান মানিক, জহুরুল হক হলের সদস্য ইমরুল ফয়েজ রাফসান বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের বহিরাঙ্গন ক্রীড়া সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন সন্দ্বীপের মেয়ে কানিজ ফাতেমা।


মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন মহেশখালীর ফাতেমা তাসনিম জুমা। কার্যকরী সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন সর্ব মিত্র চাকমা (শিবির সমর্থিত) ও হেমা চাকমা (সাত বামপন্থী সংগঠনের প্রতিরোধ পর্ষদ প্যানেল থেকে)।


ডাকসু ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির মেয়ে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের প্রার্থী উমামা ফাতেমা, সাতকানিয়ার বাসিন্দা বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় আহবায়ক আবদুল ওয়াহেদ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী বোয়ালখালী পৌরসভার বাসিন্দা আবু তৈয়ব হাবিলদার। এছাড়া স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী ছিলেন কক্সবাজারের পেকুয়ার বাসিন্দা জালাল আহমদ জালাল। রুমমেটকে ছুরিকাঘাতের অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে দায়ের করা এক হত্যাচেষ্টা মামলায় জালালকে পরে কারাগারে পাঠানো হয়। সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার বাসিন্দা স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের জাহেদ আহমদ ও চকরিয়ার বাসিন্দা আরমানুল হক।



 

সম্পাদকীয় :

প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ গোলাম মাওলা শাওন
মোবাইল : ০১৭১১-০০৬২১৪

অফিস :

প্রধান কার্যালয় : ৩১/১ শরীফ কমপ্লেক্স ৫ম তলা পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০

মোবাইল : ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০

ই-মেইল : [email protected],  [email protected]