ফাহাদ মোল্লা:
মিশরের ঐতিহ্যবাহী ও বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি তামহীদির ফাইনাল পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করেছেন, বাংলাদেশের মেধাবী শিক্ষার্থী মুহাম্মদ শিহাব উদ্দীন আজহারী। মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ী উপজেলার পাচগাঁও ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মান্দ্রা গ্রামের সন্তান এই সাফল্যের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের সক্ষমতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি।
শিক্ষাবর্ষ ২০২৪-২৫ খ্রিষ্টাব্দের পরীক্ষায় শিহাব উদ্দীন মোট ৯০০ নম্বরের মধ্যে ৭৬৭ নম্বর অর্জন করেন। শতকরা হিসেবে যা দাঁড়ায় ৮৫.২২ ভাগ। এর মাধ্যমে তিনি ‘জাইয়্যিদ জিদ্দান’ (এ+) গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন।
এই পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন, আলজেরিয়ার শিক্ষার্থী ফুয়াদ কুরাইশি (৭৫২ নম্বর, ৮৩.৫৫ শতাংশ)। তৃতীয় হয়েছেন শ্রীলঙ্কার মুহাম্মদ রুকজি আবদুর রশীদ (৭৪৮ নম্বর, ৮৩.১১ শতাংশ) এবং চতুর্থ হয়েছেন আলজেরিয়ার মুহাম্মদ আমিন হামূদি (৭৪৪ নম্বর, ৮২.৬৭ শতাংশ)।
চূড়ান্ত ফলাফলে মোট আটজন বিদেশি শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাদের মধ্যে বাংলাদেশের দুইজন, আলজেরিয়ার দুইজন, শ্রীলঙ্কার একজন, নাইজেরিয়ার দুইজন এবং ইন্দোনেশিয়ার একজন রয়েছেন।
মুহাম্মদ শিহাব উদ্দীন আজহারী মান্দ্রা গ্রামের মরহুম আব্দুস সোবহান মুন্সীর ছোট ছেলে। তিনি দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসার কৃতি শিক্ষার্থী ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ইসলামী জ্ঞানচর্চার উদ্দেশ্যে মিশরে পাড়ি জমান এবং আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের উসুলুদ্দীন অনুষদের হাদিস বিভাগে ভর্তি হন।
নিজের এই ঐতিহাসিক অর্জনকে শিহাব উদ্দীন কৃতজ্ঞতার সঙ্গে উৎসর্গ করেছেন, তার শিক্ষকদের প্রতি। তিনি বলেন, আমার এই ছোট্ট সফলতাটি নাজাত কাননের উস্তাদগণের প্রতি উৎসর্গ করলাম।
বিশেষ করে আমাদের পরম শ্রদ্ধাভাজন, উস্তাজুল আসাতিজা, অধ্যক্ষ হযরত মাওলানা আখম আবুবকর ছিদ্দিক (হাফি:) এর প্রতি, যিনি সর্বদা নিজের সন্তানের মতো খোঁজখবর নেন এবং বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেন। তাছাড়া আমার বড় ভাই আলহাজ্ব মুফতী গোলাম মোস্তফা বিক্রমপুরী, মান্দ্রা মাদরাসার বড় হুজুর মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান এবং আমার ভাই মাওলানা জামাল উদ্দিন জামান – তাদের অবদান কখনো পরিশোধ করতে পারবো না।”
বিশেষ করে আমাদের পরম শ্রদ্ধাভাজন, উস্তাজুল আসাতিজা, অধ্যক্ষ হযরত মাওলানা আখম আবুবকর ছিদ্দিক (হাফি:) এর প্রতি, যিনি সর্বদা নিজের সন্তানের মতো খোঁজখবর নেন এবং বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেন। তাছাড়া আমার বড় ভাই আলহাজ্ব মুফতী গোলাম মোস্তফা বিক্রমপুরী, মান্দ্রা মাদরাসার বড় হুজুর মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান এবং আমার ভাই মাওলানা জামাল উদ্দিন জামান – তাদের অবদান কখনো পরিশোধ করতে পারবো না।”
তিনি আরও যোগ করেন, “মহান আল্লাহ তাদের সকলকে নেক হায়াত দান করুন এবং আমাদের সবাইকে ইসলামের একনিষ্ঠ খাদেম হিসেবে কবুল করুন। আমিন।
মুন্সীগঞ্জ সহ সারাদেশে শিহাব উদ্দীনের এই কৃতিত্বে আনন্দের বন্যা বয়ে গেছে। তার এ অর্জন কেবল ব্যক্তি বা পরিবারের নয়, বরং গোটা বাংলাদেশের জন্য এক গৌরবের অধ্যায়। ইসলামী জ্ঞানচর্চা ও গবেষণার জন্য বিশ্বজুড়ে খ্যাত আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের সাফল্য নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক মহলে উজ্জ্বল করেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের অর্জন ভবিষ্যতে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের ইসলামী শিক্ষা ও গবেষণায় আরও উৎসাহিত করবে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক জায়গা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
শিহাব উদ্দীনের এই সাফল্য প্রমাণ করে যে প্রতিকূলতা সত্ত্বেও মেধা, অধ্যবসায় এবং আল্লাহর সাহায্যে বড় অর্জন সম্ভব। তার এই অর্জন বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে এবং ইসলামী জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে।