তৈয়বুর রহমান (কালীগঞ্জ) গাজীপুর:
গাজীপুরের কালীগঞ্জে হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে গেছে আবাসিক গ্যাস সংযোগ। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন দেড় শতাধিক বৈধ গ্রাহক। নিয়মিত বিল পরিশোধ করেও কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
গত ২০ আগস্ট সকালে রান্না শেষ করে চুলা বন্ধ করেছিলেন স্থানীয় গৃহবধূ সুইটি বেগম। দুপুরে আবার চুলা জ্বালাতে গিয়ে দেখেন আগুন আর মিলছে না। একাধিকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তিনি। একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় গৃহবধূ শিলা, রোজিনা, মিলি ও শান্তা।
শান্তা বলেন, “আগে থেকে জানলে অন্তত কিছু প্রস্তুতি নিতে পারতাম। এখন মাটির চুলা বা লাকড়ির কোনো ব্যবস্থা নেই। সংসারের সীমিত আয়ে গ্যাস সিলিন্ডার কেনাও কষ্টকর। তাই দুই সপ্তাহ ধরে চরম ভোগান্তিতে আছি।”
প্রথম দিকে বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা থাকলেও পরে জানা যায়, পুলিশ প্রহরায় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ কালীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের কর্ণার থেকে ভাদার্ত্তী হয়ে রূপগঞ্জের দাউদপুরমুখী একমাত্র লাইনের সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছে।
ত্রিশোর্ধ গৃহবধূ মিলি অভিযোগ করে বলেন, “আমাদের সব বিল পরিশোধ করা আছে। অথচ হঠাৎ করে কোনো নোটিশ ছাড়াই সংযোগ বন্ধ করে দিল তিতাস। আশেপাশে বৈধ গ্রাহকদের লাইন সচল থাকলেও আমাদের অংশে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।”
তিতাস গ্যাসের সূত্র জানায়, ওই লাইনে বৈধ গ্রাহক আছেন মাত্র ১৫০ জন। তাদের ২৫০টি চুলার বিপরীতে রয়েছে প্রায় তিন হাজার অবৈধ সংযোগ। অবৈধ ব্যবহার ও অতিরিক্ত বার্নার ব্যবহারের কারণে কোম্পানি রাজস্ব হারাচ্ছে। এজন্যই অস্থায়ীভাবে সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে।
তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, কালীগঞ্জ অংশে অবৈধ সংযোগ নেই। অবৈধ লাইনগুলো মূলত রূপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়-আতলাপুর, বেলদী, দুয়ারা, দাউদপুর, রহিলা, চরপাড়া, আগলা ও পুটিনা। অথচ ওই একই লাইনের কালীগঞ্জের বৈধ গ্রাহকরাই এখন বিপাকে।
কালীগঞ্জের দায়িত্বে থাকা তিতাস গ্যাস টঙ্গী জোনের ম্যানেজার মেজবাউর রহমান বলেন, লাইনটিতে বৈধ গ্রাহকের চেয়ে অবৈধ সংযোগ কয়েকগুণ বেশি। সীমিত জনবল দিয়ে প্রতিদিন এত দূরত্বে তদারকি সম্ভব হয় না। তাই নিয়ম মেনেই আপাতত লাইন বন্ধ রাখা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে শিগগিরই বৈধ গ্রাহকদের সংযোগ পুনঃস্থাপন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, রূপগঞ্জ এলাকায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গেলে তিতাসের কর্মীরা একাধিকবার হামলার শিকার হয়েছেন। তাই ধাপে ধাপে ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার এটিএম কামরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি একাধিক মাধ্যমে আমি অবগত হয়েছি। তিতাস গ্যাসের অবৈধ সংযোগের কারণে কালীগঞ্জের বৈধ গ্রাহকরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবে। পাশাপাশি অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর কীভাবে দ্রুত বৈধ গ্রাহকদের সংযোগ পুনঃস্থাপন করা যায়, সে বিষয়েও তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবো।