রানা ইসলাম বদরগঞ্জ রংপুর।
রংপুরেের বদরগঞ্জে বিধ্বস্ত ভাঙ্গা সেতুর ওপর দিয়ে দুই পারের দশ গ্রামের বাসিন্দাদের মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন। এই অবর্ননীয় দুর্দশা লাঘবে জনপ্রতিনিধি সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কেউ এগিয়ে আসছেনা।
সাকিল নামে এক শিক্ষার্থী সাইকেল চালিয়ে ভেঙে যাওয়া সেতু ও নড়বড়ে সাঁকো পার হচ্ছে। রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার রাধানগর ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের পাঁচ গ্রামের অন্তত ৪০ হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম একটি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো। ভেঙে যাওয়া একটি সেতুর ওপর ব্যক্তি উদ্যোগে জোড়াতালি দিয়ে সাঁকোটি নির্মাণ করা হয়, যা দিয়ে প্রতিদিন স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থী, কৃষকসহ হাজারও মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন।
স্থানীয়রা বলছেন, নির্বাচন এলে জনপ্রতিনিধিরা সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিলেও শেষ পর্যন্ত কেউ কথা রাখেননি। তাই চাপা ক্ষোভ নিয়ে বাধ্য হয়ে তাদের এই সাঁকো পারাপার হতে হয়। তবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিষয়টি তিনি জানতেন না। এখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
স্থানীয়রা বলছেন, নির্বাচন এলে জনপ্রতিনিধিরা সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিলেও শেষ পর্যন্ত কেউ কথা রাখেননি। তাই চাপা ক্ষোভ নিয়ে বাধ্য হয়ে তাদের এই সাঁকো পারাপার হতে হয়। তবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিষয়টি তিনি জানতেন না। এখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউনিয়নের বিন্দিরধর দক্ষিণপাড়া ও কাচিপাড়ার মধ্যবর্তী স্থানে ভেঙে যাওয়া সেতুটির অবস্থান। ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যায় সেতুটির অর্ধেক অংশ ভেঙে পড়ে। তখন ইউনিয়নের ধোদরারপাড়, বিন্দিরধর দক্ষিণপাড়া, কাচিপাড়া, দিলালপুর ও পচানালা গ্রামের বাসিন্দাদের পাঁচ কিলোমিটার ঘুরে নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছিল। এলাকাবাসী তখন সেতুটি চলাচলের উপযোগী করার উদ্যোগ নেন। বাঁশ ও কাঠ দিয়ে সেতুর ভেঙে যাওয়া অংশে একটি সাঁকো নির্মাণ করা হয়। কিন্তু গত তিন বছরের সাঁকোটি ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁশের খুঁটিগুলো নড়বড়ে হয়ে গেছে। দুপাশের বাঁধও ভেঙে সেতুর নিচে পড়েছে। ফলে সাঁকোটি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চলাচলের সময় বাঁশ সরে যায়, তাই অনেক শিক্ষার্থী ও পথচারী সাঁকোর নিচ দিয়ে ভেজা জমির ওপর দিয়ে পার হওয়ার চেষ্টা করছেন। বিশেষ করে কৃষিপণ্য পরিবহনে কৃষকদের ভোগান্তির সীমা থাকে না।
জানা গেছে, ভাঙা সেতুর কারণে পাঁচ গ্রামের মানুষকে লালদীঘি, পাঠানেরহাট, মাদারগঞ্জ, ঢোলাইঘাট, বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ বাজারে যেতে ৪-৫ কিলোমিটার পথ বেশি ঘুরতে হচ্ছে। এতে সময় ও অর্থ বেশি ব্যয় হচ্ছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি। লালদীঘি পীরপাল ডিগ্রি কলেজ, লালদীঘি দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়, পাঠানপাড়া উচ্চবিদ্যালয়, মাদারগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসা, লাইসিয়াম রেসিডেন্সিয়াল স্কুলসহ অন্তত ৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়া-আসায় শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এক শিক্ষার্থীকে তখন ওই সাঁকো পার হতে দেখা যায়। কথা হয় তার সঙ্গে। নাম জানায় নুরুনবীন হোসেন। স্থানীয় লাইসিয়াম রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের দশম শ্রেণির এই শিক্ষার্থী বলে, ‘আমার গ্রামের কয়েক শ শিক্ষার্থী এই সাঁকো দিয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করে থাকে। প্রায়ই আমরা ভয়ে সাঁকোতে উঠতে পারি না। আমাদের কথা ভেবে হলেও সেতুটি নির্মাণ করা প্রয়োজন।’
অর্থকরী ফসল লিচু, আম, ভুট্টা, গমসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য পরিবহনেও কৃষকরা বিপাকে পড়ছেন। কৃষকদের পাঁচ কিলোমিটার ঘুরে বাজারে পণ্য নিতে হয়। এতে পরিবহন খরচ বাড়ছে। স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচন এলে সবাই খালি আশ্বাস দেন। কিন্তু কাজের কাজ হয় না। এতে আমাদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। কৃষিপণ্য নির্বিঘ্নে পরিবহন করতে না পারায় ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। ছেলেমেয়েদের বর্ষায় স্কুলে যাতায়াতে অসুবিধা হয়।’
কাছিপাড়ার বাসিন্দা মিজানুর রহমান (৪০) বলেন, ‘ব্রিজের এপারে আমার গ্রাম। ওপারে বিন্দিরধর দক্ষিণপাড়া। এই দুই গ্রামে ১৪ হাজার মানুষের বসবাস। কেউ অসুস্থ হলে ভাঙা সেতুর ওপর দিয়ে গাড়ি নেওয়া যায় না। চার-পাঁচ কিলোমিটার ঘুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হয়। সেতুটি নির্মাণ করা খুবই দরকার হয়ে পড়েছে।’
দিলালপুর বিন্দিরধার দক্ষিণপাড়ার সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘তিন বছর ধরে এই সেতু ভেঙে পড়ে আছে। আমরা এলাকাবাসীই বাঁশ-কাঠ দিয়ে জোড়াতালি দিয়েছি। এখন আবার তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য জীবন-মরণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে সেতুটি ভেঙে আছে। আমি এলজিইডিকে জানিয়েছি, তারা পরিদর্শনও করেছে। চেষ্টা করছি দ্রুত কাজ শুরু করতে।’
রাধানগর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নুরুজ্জামান প্রামানিক বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে এই সেতটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা জনগণের ওয়াদা রাখেনি। বিএনপি ক্ষমতা এলেই এই সেতুটি নির্মাণ করা হবে।
উপজেলা প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আমি সম্প্রতি যোগদান করেছি। বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানলাম। দ্রুত সরেজমিনে পরিদর্শন করে সেতুর জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।’ বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা আছে। ইতোমধ্যে লোক পাঠানো হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’