দেলোয়ার হোসেন সোহেল তানোর থেকে:
রাজশাহীর তানোরে ‘মহানগর’ নামক মানহীন এক ক্লিনিকে ভুল অপারেশনে রোগীর কিডনির ক্ষতি সহ নানান অভিযোগে ইউএনওর ভ্রাম্যমান আদালতে দুই লক্ষ টাকা অর্থদন্ড করা হয়েছে। তাৎক্ষণিক ভাবে এই দন্ডের টাকা আদায় করে সরকারি কোষাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরের দিকে অভিযান চালিয়ে ক্লিনিক মালিকের বিরুদ্ধে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। আর এক মাসের মধ্যে বৈধ কাগজপত্র ও প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও পর্যাপ্ত জনবল দেখিয়ে ক্লিনিক পরিচালনার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়।
জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও আয়া নার্স দিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। অপারেশন থিয়েটারে ছিল না প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও পর্যাপ্ত জনবল। নোংরা ও অনিরাপদ পরিবেশে চালু ছিল অপারেশন থিয়েটার। এমন পরিবেশে ১১ জুলাই এক নারীর অ্যাপেন্ডিসাইটিসের একটি ভুল অপারেশন করা হয়। এসব অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে ক্লিনিক মালিকের দুই লক্ষ টাকা অর্থদন্ড করা হয়।
প্রসঙ্গ, তানোর উপজেলার আকচা গ্রামের পুলিশ কন্সটেবল জাহেরুল ইসলামের স্ত্রী রোজিনা খাতুন (৩৫)। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পেটের ব্যথায় ভুগছিলেন। সম্প্রতি ১১ জুলাই অ্যাপেন্ডিসাইটিসের একটি অপারেশন করেন তানোর পৌর এলাকার আমশো মহল্লায় অবস্থিত মহানগর ক্লিনিকে। কিন্তু অপারেশনের ২-৩ দিন পরে প্রচন্ড জ্বর আসে। এঅবস্থায় স্বাভাবিক ভাবে বিছানা থেকে উঠতে না পারলেও পরিবারের সহযোগিতায় পুনরায় তানোর মহানগর ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয় রোজিনাকে। তারা কোন ব্যবস্থা না নিয়ে শুধু জ্বরের জন্য সাপোজিডার দিতে বলে। পরে তার অবস্থা আরো গুরুত্বর হয়ে পড়লে তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তারের কথা মতো বিভিন্ন ধরণের টেষ্ট করে দেখা যায় তানোর মহানগর ক্লিনিকের অপারেশন সম্পূর্ণ ভুল ছিল। একারণে কিডনি ক্ষতির আশঙ্কা হয়েছে বলে রাজশাহী ল্যাব কেয়ার হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ভুক্তভোগি রোজিনা জানান, তানোর হাসপাতালের কর্তব্য চিকিৎসকদের কথা শোনে রাজশাহী ল্যাব কেয়ার হাসপাতালে গিয়ে পুনরায় অপারেশন করান তিনি। ওই অপারেশনের সময় দেখা যায় তানোর মহানগর ক্লিনিক ভুল চিকিৎসার পাশাপাশি তার কিডনির ক্ষতি হয়েছে। এজন্য নতুন করে তার শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে।
এহেন ভুল অপারেশনে তার ২৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে থানায় এক অভিযোগে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু রাজশাহী ল্যাব কেয়ার হাসপাতালে গিয়ে আরও ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এই খরচের ব্যাপারে তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেননি। শুধু মহানগর ক্লিনিকে খরচের টাকা দাবি করে থানায় অবিযোগ দেন। থানাপুলিশ সমাধানের জন্য ক্লিনিক মালিক হেলাল উদ্দিনকে নিয়ে বসে ক্ষতিপূরণ বাবদ ২০ হাজার টাকা দিতে রাজি হন।
কিন্তু তিনি কোনো টাকা না দিয়ে টালবাহানা করেন। এহেন অবস্থায় নিরুপাই হয়ে রোজিনা খাতুন ৩১ আগস্ট সরকারি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। যার প্রেক্ষিতে ইউএনও ভ্রাম্যমান আদালত পরিচলনা করে শাস্তি মূলক অর্থদন্ড আদায় করেন। এনিয়ে তানোর মহানগর ক্লিনিকের প্রোপাইটার হেলাল উদ্দিনের মোবাইলে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে মোবাইল সংযোগ পাওয়া যায় নি।
এব্যাপারে তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লিয়াকত সানমান বলেন, মানহীন চিকিৎসার জন্য জনস্বাস্থ্য রক্ষায় ওই ক্লিনিক মালিকের বিরুদ্ধে দুই লক্ষ টাকা অর্থদন্ড আদায় করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আর এক মাসের মধ্যে বৈধ কাগজপত্র ও প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও পর্যাপ্ত জনবল দেখিয়ে ক্লিনিক পরিচালনার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। অপচিকিৎসা ও অনুমোদিত কার্যক্রমে আমরা কোনো ছাড় দেব না। জনস্বাস্থ্য নিয়ে খেলা চলতে দেওয়া হবে না বলে জানান ইউএনও।