
এম এ কুদ্দুছ, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি : কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্সের টাকার নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। এবার পাওয়া গেছে ১২ কোটি ৯ লাখ ৩৭ হাজার ২২০ টাকা। পাওয়া গেছে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার ও বৈদেশিক মুদ্রা। সেসবও অন্যান্যবারের চেয়ে বেশি পরিমাণে পাওয়া গেছে।
এছাড়া, মিলেছে মানতকারীদের ইচ্ছেপূরণের হাজারো চিঠি। শনিবার (৩০ আগস্ট) পাগলা মসজিদের দানসিন্দুকগুলো খুলে টাকা গণনার পর এই হিসাব পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহŸায়ক মো. এরশাদুল আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, সকাল ৭টায় মসজিদটির ১০টি দানসিন্দুক এবং ৩টি ট্রাঙ্ক খোলার মধ্য দিয়ে টাকা গণনার কাজ শুরু করা হয়। এবার বস্তার হিসাবে বড় বস্তায় মোট ৩২ বস্তা টাকা পাওয়া যায়, যা বস্তার হিসাবেও সর্বোচ্চ। টাকা গণনার এ এলাহী কাÐ তদারকি করেন ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। গণনা শেষ হয় রাত ৮টায়। এবারের টাকা মিলিয়ে পাগলা মসজিদের ব্যাংকে জমা হওয়া টাকার পরিমাণ শত কোটি ছাড়িয়েছে।
এর আগে, পাগলা মসজিদের ব্যাংক হিসেবে ৯১ কোটি টাকা ছিলো। এবার চার মাস ১৮ দিন পর এ মসজিদের দানসিন্দুকগুলো খোলা হয়। এর আগে সর্বশেষ গত ১২ এপ্রিল দানসিন্দুক খোলা হয়েছিল। তখন ২৮ বস্তা টাকা পাওয়া গিয়েছিল। পরে টাকা গণনা করে তৎকালীন সর্বোচ্চ ৯ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার ৬৮৭ টাকা পাওয়া গিয়েছিলো। সকাল ৭টায় কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীর নেতৃত্বে দান সিন্দুক খোলা হয়।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহŸায়ক মো. এরশাদুল আহমেদ, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুল হাসান মারুফ, রূপালী ব্যাংকের এজিএম মোহাম্মদ আলী হারেছী এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণসহ মসজিদ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া, পাগলা মসজিদে গিয়ে জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক মো. রমজান আলী, আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা শাব্বির আহমেদ রশিদ, জেলা খেলাফত মজলিসের সভাপতি শায়খুল হাদিস মাওলানা আব্দুল আহাদ, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা এমদাদুল্লাহ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ দান সিন্দুক খোলা ও টাকা গণনার কাজ প্রত্যক্ষ করেন। টাকা গণনার কাজ চলার সময় সকাল ১০টার দিকে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন জেলা প্রশাসক ও মসজিদ কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান।
তিনি বলেন, এবারের টাকা বাদে ব্যাংকে প্রায় ৯১ কোটি টাকা জমা রয়েছে। পাগলা মসজিদ কমপ্লেক্সের ৫.৫ একর নিজস্ব জায়গা আছে।
এছাড়া মসজিদ কমপ্লেক্স এলাকায় থাকা ব্যক্তি মালিকানাধীন কিছু জায়গা রয়েছে, যেগুলো কেনার জন্য ওয়াক্ধসঢ়;ফ প্রশাসনের অনুমোদন চাওয়া হয়েছিলো। ওয়াক্ধসঢ়;ফ প্রশাসন এ ব্যাপারে অনুমোদন দিয়েছে। এখন পাগলা মসজিদকে ঘিরে একটি অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিকমানের ইসলামিক কমপ্লেক্স বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা হবে।
এ লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। জেলা শহরের নরসুন্দা নদী তীরের ঐতিহাসিক এ মসজিদটিতে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এসে দান করছেন। যারা দান করতে আসেন তারা বলে থাকেন, এখানে দান করার পরে নাকি তাদের মনের আশা পূরণ হয়েছে। আর এ কারণেই দিন দিন দানের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।