রামেকে কোটি টাকার দরপত্রে অনিয়মের অভিযোগ: সিন্ডিকেট ও ভুয়া কাগজপত্রের বিতর্কের জেরে উত্তেজনা

আপলোড সময় : ৩১-০৮-২০২৫ ০৯:১০:৩১ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ৩১-০৮-২০২৫ ০৯:১০:৩১ অপরাহ্ন


মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী: রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য এমআরআই, সিটি স্ক্যান ও এক্স-রে ফিল্মসহ (কোড: ৩২৫২১০৫) সরবরাহের জন্য আহ্বানকৃত দরপত্র (আইডি নং: ১১৩০৬৩৯) ঘিরে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দরপত্রে অংশ নেওয়া একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘প্যারাগন এন্টারপ্রাইজ’ এর স্বত্বাধিকারী মোঃ জাহিদুল ইসলাম এই অভিযোগ তুলেছেন এবং স্বাস্থ্য উপদেষ্টাসহ সরকারের উচ্চপদস্থ দপ্তরগুলোতে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। এর ফলে রামেক হাসপাতালের দরপত্র প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।



প্যারাগন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মোঃ জাহিদুল ইসলাম তার লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, এই দরপত্রে বাংলাদেশের একমাত্র ফুজি ফিল্ম (জাপান) এর প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ‘মেডি গ্রাফিক ট্রেডিং লিমিটেড’ কেবলমাত্র রাজশাহীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্যারাগন এন্টারপ্রাইজকে ম্যানুফ্যাকচারারস অথরাইজেশন লেটার প্রদান করেছে। অথচ কার্যাদেশপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ‘গেটওয়ে ইন্টারন্যাশনাল’ এই ধরনের কোনো অথরাইজেশন লেটার দিতে ব্যর্থ হয়েছে।


অভিযোগ অনুযায়ী, গেটওয়ে ইন্টারন্যাশনাল একজন ডিলারের কাছ থেকে অথরাইজেশন লেটার নিয়ে দরপত্রে অংশ নিয়েছে, যা সরকারি ক্রয়বিধিমালা পিপিআর-২০০৮ এর ধারা-৫৬, উপধারা-১১ ও ১২ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। জাহিদুল ইসলাম দাবি করেছেন, হাসপাতালের দরপত্র কমিটি সঠিকভাবে কাগজপত্র যাচাই না করেই গেটওয়ে ইন্টারন্যাশনালকে কাজ দিয়েছে। অন্যান্য অংশগ্রহণকারী ও মেডি গ্রাফিকের বক্তব্য অনুযায়ী, এই দরপত্রে প্যারাগন এন্টারপ্রাইজসহ মোট তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়।


অন্য দুটি প্রতিষ্ঠান হলো:- গেটওয়ে ইন্টারন্যাশনাল ও মোঃ শাহাজাহান চৌধুরী। জাহিদুল ইসলাম দাবি করেছেন, মেডি গ্রাফিক ট্রেডিং লিমিটেড কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছেন তারা ফুজি এক্স-রে ফিল্মের জন্য শুধুমাত্র প্যারাগন এন্টারপ্রাইজকেই অনুমোদনপত্র দিয়েছে।


তার অভিযোগ, দরপত্রের মূল্যায়ন কমিটি গেটওয়ে ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক দাখিলকৃত অনুমোদনপত্রের সত্যতা যাচাই করেনি। গেটওয়ে ইন্টারন্যাশনাল একজন তৃতীয়পক্ষ ডিলারের কাছ থেকে অনুমোদনের নাম করে ভুয়া কাগজ দাখিল করে, যা যাচাই না করেই কর্তৃপক্ষ তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়। জাহিদুল ইসলাম আরও গুরুতর অভিযোগ করেছেন, সাবেক পলাতক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের এবং আওয়ামী লীগ মদদপুষ্টরা একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে হাসপাতালটিকে এখনো নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। তিনি এই সিন্ডিকেট ভাঙার দাবি জানিয়েছেন।


অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গেটওয়ে ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী সোহেল রানা বলেন, এ ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেন। তারা বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা (প্যারাগন এন্টারপ্রাইজ) যেহেতু ডিস্ট্রিবিউটরের কাছ থেকে  অথরাইজেশন নিয়েছে, তাই আমিও ডিলারের কাছ থেকে অথরাইজেশন লেটার নিয়ে জমা দিয়েছি।


এ ব্যপারে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ বলেন, এ বিষয়ে গঠিত কমিটি যাচাই করেই কাজ দিয়েছে। এখানে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। আর সর্বনিম্ন দরদাতাই কাজ পেয়েছে। প্যারাগন এন্টারপ্রাইজের এই অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) সরকারের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন দফতর গুলোতে পাঠানো হয়েছে। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কী ধরনের তদন্ত শুরু হয় এবং এর ফলাফল কী হয়, তা জানতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে সংশ্লিষ্ট মহল। রামেক হাসপাতালের এই কোটি টাকার দরপত্র ঘিরে ওঠা অনিয়মের অভিযোগ জনমনে প্রশ্ন তৈরি করেছে এবং এর সুষ্ঠু তদন্তের দাবি উঠেছে।


 

সম্পাদকীয় :

প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ গোলাম মাওলা শাওন
মোবাইল : ০১৭১১-০০৬২১৪

অফিস :

প্রধান কার্যালয় : ৩১/১ শরীফ কমপ্লেক্স ৫ম তলা পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০

মোবাইল : ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০

ই-মেইল : [email protected],  [email protected]