মাদারগঞ্জে সেই চাঁদাবাজ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে এবার লিখিত অভিযোগ

আপলোড সময় : ২৬-০৮-২০২৫ ০৬:৩৬:৩৬ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ২৬-০৮-২০২৫ ০৬:৪৪:১৪ অপরাহ্ন
 
জামালপুর প্রতিনিধি : 
জামালপুরের মাদারগঞ্জের পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খালেদ মাসুদ তালুকদার সোহেলের বিরুদ্ধে এবার জমি দখল, প্রতিবেশীর ওপর হামলা, মানবাধিকার লঙ্গনের অভিযোগ উঠেছে।  তিনি মাদারগঞ্জ উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের মরহুম গোলাম আম্বিয়া এর ছেলে৷ প্রতিকার চেয়ে ২৫ আগস্ট জামালপুর পুলিশ সুপার ও মাদারগঞ্জ উপজেলা ও জেলা বিএনপির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছে মাদারগঞ্জ উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের মাগফেরাত আলী তালুকদারের ছেলে গোলাম মোস্তফা। এদিকে গত ১৯ আগস্ট মাদারগঞ্জের পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খালেদ মাসুদ তালুকদার সোহেলের ৬ মিনিট ১০ সেকেন্ডের স্বীকারোক্তি মুলক একটি চাঁদাবাজির অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে বেশ আলোচনা ও সমালোচনা ৷



সেই অডিওতে কথোপকথনের এক পর্যায়ে সোহেল বলেন, 'ডিআইজির নাম কইরাই তো খাই আমি। আমি পৌর বিএনপির সেক্রেটারি, আমি ডিআইজির বইনতে, তো আমি খাব না তে ক্যাডা খ্যাব?' গত মঙ্গলবার দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া অডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়। ছয় মিনিট ১০ সেকেন্ডের ওই অডিওতে সোহেলকে বলতে শোনা যায়, এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে তিনি ১০ লাখ টাকার মধ্যে ছয় লাখ টাকা নিয়েছেন এবং প্রতি মাসে আরও এক লাখ টাকা দিতে বলেছেন।

 
একজন বলেন, তুমি শুধু সোহেল না, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। তুমি যে টাকাই খাও সেটা কিন্তু মানুষ-এটুকু বলতেই সোহেল চটজলদি জবাব দেন, 'জানবোই তো! আমি দিবার পাই দেইখা খাবার পাই। আমার অতখানিক ক্ষমতা আছে তো, তুমগের নাই, তুমরা খ্যাবার পাও না।' ৬ মিনিট ১০ সেকেন্ডের ভাইরাল হওয়া অডিওতে পদ-পদবি ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথাও বলেন তিনি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা উপজেলা এবং জেলা বিএনপি থেকে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলেও শুনা যায়। বিষয়টি নিয়ে দল থেকে অব্যাহতি বা বহিষ্কারের দাবী জানিয়েছেন মাদারগঞ্জ বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।  

 
লিখিত অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, সোহেল তালুকদারের সাথে দীর্ঘ দিন ধরে প্রতিবেশী গোলাম মোস্তফার সাথে জমি জমা নিয়ে বিরোধ চলছে। সোহেল তালুকদার তার পালিত সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে মোস্তফার বাড়ীতে হামলা চালিয়ে বাড়ীর বেড়া ভেঙ্গে, তার সীমানায় থাক গাছ কেটে নিয়ে সেখান দিয়ে সোহেল তালুকদার বাউন্ডারি করেছে। এ নিয়ে মামলা দায়ের করলেও  মামলার তদন্ত রিপেটি ও মামলার মূল নথি পেশকারে যোগসাজস্বে সরিয়ে ফেলে। পরবর্তীতে দায়রা জজ আদালতে আপিল করে নথি গুলো উদ্ধার করেন গোলাম মোস্তফা। অভিযোগে আরো উল্লেখ্য করা হয় সোহেল তালুকদারের বিরুদ্ধে থানায় বা সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ করলে সোহেল তালুকদার ডিআইজির বোনের জামাই হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেই কোন অভিযোগ গ্রহণ করে না এবং কোন ব্যবস্থা নেয় না। যেমন ২০২৪ সালের ২৬ নভেম্বর এবং ২০২৫ সালের ৩১ আগস্ট জামালপুর পুলিশ সুপার এর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা নিয়ে কর্তব্যরত এস,আই  তদন্তে গেলে কাগজটি নিয়ে সোহেলের পালিত সন্ত্রাসীরা ছিড়ে ফেলে এবং এদিকে ২০১১ সালে ২৭ নভেম্বর মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার থানাকে সোহেল তালুকদার এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বললে মাদারগঞ্জ মডেল থানা থেকে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় নাই। পরবর্তীতে এস.আই থাকাকালীন সময়ে সোহেলে পালিত সন্ত্রাসীরা মোস্তফার বাড়ীতে হামলা করে তার বউ ও সন্তানকে মারধর করে আহত করে স্ত্রী ও সন্তানের হাত ভেঙ্গে দেয়।


অভিযোগে আরো উল্লেখ্য করা হয়, বর্তমানে মোস্তফার বাড়ী গেট ভাংচুর করেছে এবং বাড়ীর গেটের সামনে গোবরের স্তুপ করে এবং যাতায়াত রাস্তার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্ঠি করে যাহা সম্পূর্ণ মানবাধিকার লঙ্ঘন। বিষয়টি সরোজমিনে তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন গোলাম মোস্তফা। বিভিন্ন সময় থানায় ও বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করে সে কোন বিচার পায় নাই। সোহেলে তালুকদারের কাছে সবাই অসহায়। সে দলীয় প্রভাব ব্যবহার করে এরূপ অপকর্ম করিতেছে।


অভিযোগে আরো উল্লেখ্য যে, বিভিন্ন সময় মোস্তফা ও তার পরিবারে উপর নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ এস,আই নজরুল, উয়াজিউর, জিন্নাহ এবং ওয়াজেদ সাহেদ উনাদের কাছে এই ফুটেজ আছে। বিবাদী তার সন্ত্রাসী কার্যকলাপ এলাকাতে বিদ্যমান রেখেছেন। সে বলে যে, তার অনুমতি ছাড়া পুলিশ বা উপজেলা প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারিবে না। 


এদিকে অভিযোগ কারী গোলাম মোস্তফা জানান, আমাদের ওপর একাধিকবার হামলা করেছে৷ লিখিত অভিযোগ দিয়েও বিচার পাইনা। এর আগে বাড়ী ঘর ভাংচুর, লুটপাট করেছে। পুলিশের সামনেও মারছে আমাদের। আমি আবারো বিচারের জন্য গত ২৫ আগস্ট জামালপুর পুলিশ সুপার ও মাদারগঞ্জ উপজেলা বিএনপি বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছি। আমি আপনাদের মাধ্যমে সরকার ও প্রশাসনের কাছে বিচার চাই।   


এদিকে এ বিষয়ে সোহেল তালুকদার জানান, দীর্ঘদিন সমস্যা। মামলা চলছে। অডিও ভাইরাল নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি সাংবাদিকদের এডিয়ে গিয়ে বলেন, সাংবাদিক সম্মেলন করেছি।  
মাদারগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মঞ্জুর কাদের বাবুল খান জানান, একটি আবেদন দিয়েছে এমন শুনেছি। চাদাবাজির অডিও ভাইরালের বিষয় প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, জেলা বিএনপিকে আমরা জানিয়েছি।  
 

অন্যদিকে জামালপুর পুলিশ সুপার সৈয়দ রফিকুল ইসলাম পিপিএম সেবা মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায় জানান, অফিস থেকে জানিয়েছে একটি অভিযোগ এসেছে। একজন দক্ষ অফিসারকে দিয়ে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চাঁদাবাজির অডিও ভাইরাল নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেউ অভিযোগ দেয়নি তবে আমি আমাদের একজন অফিসার এর মাধ্যমে পেয়েছি।


 

সম্পাদকীয় :

প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ গোলাম মাওলা শাওন
মোবাইল : ০১৭১১-০০৬২১৪

অফিস :

প্রধান কার্যালয় : ৩১/১ শরীফ কমপ্লেক্স ৫ম তলা পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০

মোবাইল : ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০

ই-মেইল : [email protected],  [email protected]