
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি ও দৈনিক আজকের বসুন্ধরা পত্রিকার সাংবাদিক লালন সরকারের বিরুদ্ধে ইউপি সদস্য নুরুজ্জামান আদালতে মিথ্যা মামলা করায় এর প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে অংশ নেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল কার্ড বাতিল করার অভিযোগ উঠেছে ইউপি সদস্য নুরুজ্জামানের বিরুদ্ধে।
গত ১৫ এপ্রিল সকালে পৌর শহরের বিজয় চত্বরে “দেবীগঞ্জের সর্বস্তরের সাধারণ নাগরিক” ব্যানারে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে গত ৮ এপ্রিল পঞ্চগড় আদালতে সাংবাদিক লালন সরকারকে প্রধান আসামি করে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। অপর আসামি হিসেবে ছিলেন শাকিল ইসলাম ও হালিম। একটি মামলার বাদী দেবীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরুজ্জামান এবং অপর মামলার বাদী একই এলাকার মোছাঃ জয়তুন বেগম।
নিজের মামলায় ইউপি সদস্য নুরুজ্জামান উল্লেখ করেন, সাংবাদিক লালন সরকার আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর বিক্রির মিথ্যা অভিযোগে সংবাদ প্রকাশ না করার শর্তে তার কাছে দুই লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে ১৫ এপ্রিল সদর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড উপনচৌকি ভাজনি আশ্রয়ন প্রকল্প এলাকার দেড় শতাধিক নারী-পুরুষ মানববন্ধনে অংশ নেন। তারা দুটি মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
অভিযোগ উঠেছে, সাংবাদিকের পক্ষে মানববন্ধনে অংশ নেওয়ায় ও প্রতিবাদ করায় ইউপি সদস্য নুরুজ্জামান খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১৫ টাকা কেজি দরে মাসে ৩০ কেজি চাল পাওয়ার কার্ডধারীদের নাম তালিকা থেকে কেটে দেন। এতে একাধিক দরিদ্র পরিবার বঞ্চিত হয়েছেন।
এছাড়া ইউপি সদস্য নুরুজ্জামানের বিরুদ্ধে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর ও জমি দখল, প্রকল্পের রাস্তায় অবৈধ পাকা দালান নির্মাণ, সরকারি ঘরের টিন খুলে বিক্রি এবং ভিজিডি কার্ড দেওয়ার নামে অসহায় মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি-তিনি প্রায়ই সুযোগ বুঝে ভিন্ন ব্যক্তিকে বাদী করে মামলা দেন, আর তার অপকর্মের কথা প্রকাশ পেলেই মামলা-হামলার হুমকি দেন।
অভিযোগ পাওয়া যায় ইউপি সদস্য নুরুজ্জামান খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১৫ টাকা কেজি চাল পাওয়ার কার্ডধারীদের মধ্যে নারী-পুরুষসহ মোট ১৭ জন তাদের অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোঃ ইলিয়াজ হোসেনকে প্রদান করেন।
সোমবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে উপজেলা পরিষদ চত্বরে অভিযোগে মোর্শেদা বেগম বলেন, আমি গরিব মানুষ সাংবাদিকের পক্ষে মিথ্যা মামলা হওয়ায় প্রতিবাদ করার জন্য আমার নাম কেটে দিয়েছে মেম্বার। ভুক্তভোগী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, আমি একজন গরিব মানুষ আমার কাছে টাকা চেয়েছে আমি টাকা দেই নাই বলে আমার চাউলের কার্ডের নাম কেটে দিয়েছে জামাল মেম্বার। ভুক্তভোগী মোর্শেদা, ছাবিনা,রিনা সহ সকল ভুক্তভোগী বলেন সাংবাদিক লালন সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদ করতে গিয়ে আজকে আমাদের কার্ডের নাম কেটে দিয়েছেন নুরুজ্জামান মেম্বার।
তবে এ বিষয়ে ইউপি সদস্য নুরুজ্জামান বলেন, “আমার ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম কিন্তু কার্ডধারী বেশি। অপরদিকে অন্য ওয়ার্ডে ভোটার বেশি হলেও কার্ডধারী কম। এ কারণে সমন্বয়ের অংশ হিসেবে কিছু কার্ড বাতিল করা হয়েছে। যাদের নাম বর্তমানে তালিকায় নেই তারাও গরিব-এটা আমি স্বীকার করি। তবে সাবেক চেয়ারম্যান এমুর আমলে আমার ওয়ার্ডে একাধিক কার্ড বিতরণ করা হয়েছিল। সাংবাদিক লালন সরকারের মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের কার্ড বাতিলের অভিযোগ সঠিক নয়। আমরা জনপ্রতিনিধি, আমরা কখনোই এমন অন্যায় কাজ করতে পারি না।”
সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকায় প্রশাসক মোঃ ইলিয়াজ হোসেন বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোঃ ইলিয়াজ হোসেন বলেন, পূর্বের বরাদ্দ শেষ হয়েছে নতুন বরাদ্দের নতুন তালিকায় পূর্বের সচ্ছল ব্যক্তিদের নাম বাতিল করে অসচ্ছল ব্যক্তিদের কে এ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। আপনারা এসেছেন আমরা বিষয়টা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবো।
এ বিষয় দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহমুদুল হাসান বলেন, এ মাসের চাল দেওয়া শেষ হয়েছে পরবর্তী মাসে কার্ডধারীদের নাম যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।