
রাজশাহী প্রতিনিধি: নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই পিএলসি (নেসকো)-এর আলোচিত শ্রমিক নেতা সিরাজুল ইসলাম আবারো বিতর্কের কেন্দ্রে। এক সময় তিনি ছিলেন, বিদ্যুৎ শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি। আর এখন তিনি নিজেকে পরিচয় দিচ্ছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের অন্তর্ভুক্ত নেসকো শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে। সিরাজুল ইসলামের দলবদল ও রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন।
অভিযোগ রয়েছে, বিগত স্বৈরাচার আমলে শ্রমিক লীগের পদে থেকে দুর্নীতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে তিনি বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক হন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সুবিধাভোগী এ নেতা, ক্ষমতার পালাবদলের পর নিজ অবস্থান রক্ষায় বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের আশ্রয় খুঁজতে মরিয়া হয়ে পড়েছেন।
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করার পাশাপাশি তিনি বর্তমানে তদবিরে ব্যস্ত। ইতোমধ্যে বাগমারা উপজেলার ৪ নম্বর বড়বিহানালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. মাহমুদুর রহমান মিলনের স্বাক্ষরিত একটি ‘সাফাই প্রত্যয়নপত্র’ নিয়েই ঘুরছেন রাজশাহী মহানগর ও জেলা বিএনপি নেতাদের দপ্তরে। শুধু তাই নয়, যুবদল ও ছাত্রদলের একাধিক নেতার কাছেও ধর্ণা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সাধারণত ক্ষমতাসীন দলের পতনের পর তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতারা আত্মগোপনে চলে যান। সেখানে সিরাজুল ইসলাম ব্যতিক্রম। আওয়ামী লীগের শাসনামলে যিনি ছিলেন দুর্দান্ত প্রতাপশালী, তিনিই এখন প্রকাশ্যে বিএনপির কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন, যেন তার অতীত কেউ ভুলে গেছে।
বাগমারা উপজেলার ৪ নম্বর বড়বিহানালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. মাহমুদুর রহমান মিলন বলেন, “আমি শুরুতে জানতাম না যে সিরাজুল ইসলাম নেসকো বিদ্যুৎ শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। পরে বিষয়টি জানার পর বিস্মিত হই। গ্রামে নিজেকে বিএনপির কর্মী হিসেবে পরিচয় দেওয়া আর শহরে গিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা—এ ধরনের দ্বিমুখী আচরণ যে কোনো রাজনৈতিক দলের জন্যই ক্ষতিকর। যদি আগে থেকেই তার এ অবস্থান সম্পর্কে অবগত থাকতাম, তাহলে কখনোই তাকে প্রত্যায়ন দিতাম না।
নেসকো শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. মিলন শেখ বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “সিরাজুল ইসলামকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সংবাদপত্রে একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে, যা আমাদের বিব্রত করছে। আগামী জেনারেল মিটিংয়ে বিষয়টি আলোচনা হবে এবং তার বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।”
এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. কামরুল হায়দার জানান, “রাজশাহী মহানগর ও জেলা শ্রমিক দল আমাদের কমিটির অনুমোদন দিয়েছে, যেখানে সিরাজুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন। তবে ৫ আগস্টের পর যে পদ্ধতিতে তিনি আওয়ামীপন্থী শ্রমিক লীগ থেকে বিএনপিপন্থী শ্রমিক দলে এলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।”
তবে নিজের অবস্থান নিয়ে সরাসরি কোনো বক্তব্য না দিয়ে তিনি পরামর্শ দেন রাজশাহী মহানগর শ্রমিক দলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম পাখির সঙ্গে যোগাযোগ করতে।সিরাজুল ইসলামের এক দল থেকে আরেক দলে যাওয়া, অতীত বিতর্কিত কর্মকাণ্ড এবং বর্তমানে বিএনপির উচ্চপদস্থ নেতাদের কাছে তদবির চালানোর বিষয়টি রাজনীতিতে ‘উপলক্ষবাদী সংস্কৃতি’র একটি উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব এই বিতর্কিত নেতার প্রতি কতটা সহনশীল থাকেন-না কি দলীয় ভাবমূর্তি রক্ষায় কঠোর সিদ্ধান্ত নেন।