জুলাই যোদ্ধাদের জন্য সরকার যা করতে পারেনি, জামায়াতে ইসলামী তা করেছে - মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল

আপলোড সময় : ১৬-০৭-২০২৫ ১২:১২:৫০ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ১৬-০৭-২০২৫ ১২:১২:৫০ পূর্বাহ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক 


অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যা করতে পারেনি, জামায়াতে ইসলামী তা করেছে, উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ছাত্র-জনতার রক্তের উপর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব ছিল জুলাই আন্দোলনে আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা, শহীদ পরিবার ও আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারীদের পুনর্বাসন, জুলাই সনদ, রাষ্ট্রের সংস্কার, গণহত্যার বিচার।


কিন্তু সরকার কেবল জুলাই ফাউন্ডেশন গঠন করেই দায়িত্ব শেষ মনে করেছে। জুলাই ফাউন্ডেশনের সুফল জুলাই যোদ্ধারা পায়নি। জুলাই যোদ্ধাদের মাসিক ভাতা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলেও ১ বছরেও কেউ সেই ভাতা পায়নি।


অথচ ৫ আগস্ট পরবর্তী জামায়াতে ইসলামী সকল শহীদ পরিবারকে আর্থিক ২ লাখ টাকা করে উপহার প্রদান করেছে। যাতে করে পরিবারগুলো নিজেরা চলতে পারে। পিজি হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল সহ রাজধানীর বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে আহতদের খোঁজ খবর নিয়ে তাদের চিকিৎসার দায়িত্ব জামায়াতে ইসলামী গ্রহন করেছিল। জুলাইয়ের শহীদ নিয়ে ১০ খন্ডে ১৫শ পৃষ্ঠার বইয়ের মোড়ক উম্মোচন করা হয়েছে। যাতে করে কেউ জুলাইয়ের ইতিহাস মুছে দিতে না পারে কিংবা বিকৃত করতে না পারে। আগামীতে আহতদের নিয়ে বই প্রকাশ করবে জামায়াতে ইসলামী। অথচ এসব দায়িত্ব ছিল রাষ্ট্রের ও সরকারের। 


মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বিকেলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের পল্টন - মতিঝিল জোনের (ঢাকা -৮ আসন) উদ্যোগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শহিদ পরিবার ও আহত পঙ্গুদের সাথে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।


এসময় তিনি আরো বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের সদস্যদের এবং আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারীদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশা জানতে জামায়াতে ইসলামী শহীদ পরিবারের সদস্যদের এবং আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারীদের সাথে মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে। জুলাই বর্ষপূর্তিতে জামায়াতে ইসলামী মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আমরা তাদের পরামর্শ শুনছি এবং সেই আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহন করবো। 


নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান আগামী দিনে বিশ্বের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। এটি আগামী বিশ্বের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পৃথিবীর যেখানেই কেউ ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠতে চাইবে, তাকে আগে বাংলাদেশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কথা স্মরণ করতে হবে। বিশ্ববাসী সকল ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে আমাদের জুলাই আন্দোলনকে প্রেরণা হিসেবে গ্রহন করবে। দুর্নীতি, অনাচার, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজদের কবল থেকে জাতিকে মুক্ত করতে জুলাই যোদ্ধারা জীবন ও রক্ত দিয়েছে। যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে জীবন দেয়, তারা যেন আল্লাহর রাস্তায়ই জীবন দিলো। তারা আল্লাহর দৃষ্টিতে শহীদ।


তিনি বলেন, যারা জুলাই সনদকে গুরুত্ব দেয় না, তারা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকেও স্বীকার করে না। তারা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নেতাদের প্রতিনিয়ত হেয়প্রতিপন্ন করে কথা বলছে। অথচ জুলাই যোদ্ধাদের ত্যাগের বিনিময় এরা আজ লম্বা লম্বা কথা বলছে। যেখানে বিগত ১৫ বছর তারা রাজপথে আসতে পারেনি, দাঁড়াতে পারেনি।


জামায়াতে ইসলামী জুলাই যোদ্ধাদের যেকোন প্রয়োজনে, যেকোন সময় সবার আগে পাশে ছিল এবং থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, জুলাইয়ের চেতনা বাস্তবায়নে জামায়াতে ইসলামীর ঘোষিত ৭ দফা বাস্তবায়ন করতে হবে। ৭ দফা বাস্তবায়ন হলে নতুন বাংলাদেশ গঠিত হবে। নয়তো আবারও নতুন রূপে ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে। যার আলামত জাতি ইতোমধ্যে দেখতে পাচ্ছে। কারা ফ্যাসিবাদী কায়দায় সারাদেশে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষন ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে এটা জনগণ বুঝতে পারছে, বুঝতে পারে। সুতারাং যেনতেন একটি নির্বাচন করে ক্ষমতা দখল করা যাবে না। তিনি, উপস্থিত জুলাই যোদ্ধাদের ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের আগামী ১৯ জুলাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জাতীয় সমাবেশে যোগ দিয়ে জাতীয় স্বার্থে ৭ দফা আদায়ে ভূমিকা রাখতে আহ্বান জানান। 


কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও মহানগরীর নায়েবে আমীর ঢাকা- ৮ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য ও পল্টন থানা আমীর শাহীন আহমেদ খানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শাহজাহানপুর পূর্ব থানা আমীর মাওলানা শরীফুল ইসলাম, শাহবাগ পূর্ব থানা আমীর আহসান হাবীব, শাহবাগ পশ্চিম থানা আমীর এডভোকেট শাহ মাহফুজুল হক, মতিঝিল পূর্ব থানা আমীর মো. নুর উদ্দিন। শহীদ হৃদয়ের মা, শহীদ লিটনের ছোট বোন, শহীদ আল-আমীনের মা, শহীদ কামাল মিয়ার মেয়ে সুরাইয়া, আহত জুলাই যোদ্ধা আবু বক্কর, আহত জুলাই যোদ্ধা হারুন, আহত জুলাই যোদ্ধা হেলাল মিয়া, আহত জুলাই যোদ্ধা রফিকুল ইসলাম রুবেল প্রমুখ। 


শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত জুলাই যোদ্ধা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, জামায়াতে ইসলামী ব্যতিত আর কোন রাজনৈতিক দলকে তারা তাদের পাশে পায়নি। আর্থিক সহযোগিতা কিংবা চিকিৎসা তো দূরের কথা কেউ তাদের খোঁজ রাখেনি। রাষ্ট্রের চেয়েও বেশি ভূমিকা রেখেছে জামায়াতে ইসলামী। তাই তারা জামায়াতে ইসলামীর অবদান ভুলবেন না। এসময় তারা অনতিবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা এবং গণহত্যার বিচার নিশ্চিত ও রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের আয়োজন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। 


সভাপতির বক্তব্যে এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সরকারের সর্বপ্রথম কাজ ছিল আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং শহীদ পরিবারের ও আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারীদের পুনর্বাসন করা। এরপরই রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার ও গণহত্যার বিচার নিশ্চিতের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ব্যবস্থা করে জনদুর্ভোগ নিরসন করা। তারপর লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। কিন্তু সরকার এর কোনটিই এখন পর্যন্ত করতে পারেনি।


কারণ একটি দল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হওয়ার পর থেকে শুধু নির্বাচন, নির্বাচন করছে। তারা সরকারকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করেনি। সরকার তাদের চাপে কোন কাজ করতে পারেনি। জামায়াতে ইসলামী ৫ আগস্ট পরবর্তী বারবার বলেছে আমরা নির্বাচন চাই।


তবে তার আগে, বিগত ১৭ বছরের প্রতিটি হত্যাকান্ডের বিচার, রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার, জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন, শহীদ ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন, পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন, প্রবাসীদের ভোট প্রদানের ব্যবস্থা এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত’ করতে হবে। এই দাবি বাস্তবায়িত না হওয়া জামায়াতে ইসলামী ১৯ জুলাই জাতীয় সমাবেশের ডাক দিয়েছে। এই সমাবেশ সফল করে ৭ দফা আদায় করতে পারলেই নতুন বাংলাদেশ গঠন করা যাবে। তাই জুলাই যোদ্ধাদের এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের এই সমাবেশে যোগদানে তিনি আহ্বান জানান। 




 

সম্পাদকীয় :

প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ গোলাম মাওলা শাওন
মোবাইল : ০১৭১১-০০৬২১৪

অফিস :

প্রধান কার্যালয় : ৩১/১ শরীফ কমপ্লেক্স ৫ম তলা পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০

মোবাইল : ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০

ই-মেইল : [email protected],  [email protected]