মেয়াদ শেষ, হয়নি সেতুর কাজ ভোগান্তিতে এলাকাবাসী

আপলোড সময় : ২২-০৫-২০২৫ ০৩:১৯:২০ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ২২-০৫-২০২৫ ০৩:১৯:২০ অপরাহ্ন

মোঃ আকতারু জ্জামান দেবীগঞ্জ (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি: পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে উমেষের ডাঙ্গায় খড়খড়ি নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতুর কাজ নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার দুই মাস পরও অর্ধেকও সম্পন্ন হয়নি। এতে আশপাশের কয়েকটি গ্রামের প্রায় দশ হাজার মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।


স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোনাহার মল্লিকাদহ ইউনিয়নের উমেষের ডাঙ্গা খড়খড়ি নদী পার হয়ে সোনাহার ইউনিয়নের ৪, ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার বাদশা বাজার ও ভবানীগঞ্জ এলাকার প্রায় দশ হাজার মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করেন। ইউনিয়ন পরিষদ, হাসপাতাল ও উপজেলা সদরে যাওয়ার এটি একমাত্র সহজ যোগাযোগের পথ। এছাড়া শত শত শিক্ষার্থী প্রতিদিন এই নদী পার হয়ে বিদ্যালয়ে যায়। শুষ্ক মৌসুমে নদীটি হেঁটে পার হওয়া গেলেও বর্ষা মৌসুমে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগের মুখে পড়তে হয়।


দেবীগঞ্জ উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ‘IRIDP-3’ প্রকল্পের আওতায় পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার সোনাহার মল্লিকাদহ ইউনিয়নের উমেষের ডাঙ্গা এলাকায় খড়খড়ি নদীর ওপর ৯০ মিটার দীর্ঘ একটি পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে।


সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে, ৬ কোটি ৩০ লাখ ৪৭ হাজার ৪৮৪ টাকা। নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ এলাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদ ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স লিমিটেড।



২০২৩ সালের ১৮ অক্টোবর নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং ২০২৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ার পর দুই মাস অতিবাহিত হলেও এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি পিলার নির্মাণ কাজও।


বুধবার (২১ মে) সরেজমিনে সোনাহার মল্লিকাদহ ইউনিয়নের উমেষের ডাঙ্গা এলাকায় সেতু নির্মাণকাজের অগ্রগতি পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, নির্ধারিত চারটি পিলারের মধ্যে এখন পর্যন্ত তিনটি পিলারের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি একটির কাজ এখনও শেষ না হওয়ায় সেতুর মূল কাঠামো নির্মাণেও কোনো অগ্রগতি নেই। নদীর দুই পাশেই নির্মাণ সামগ্রী এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। কোথাও কোথাও রডে জং ধরে গেছে। পিলারের ঢালাইয়ের কাজে ব্যবহৃত পাথরের সঙ্গে মাটির মিশ্রণ স্পষ্ট যা নির্মাণ কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন তুলছে। এছাড়া কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে।


স্থানীয়রা জানান, আগে এই নদীর ওপর বাঁশের তৈরি একটি সাঁকো থাকলেও সেতুর নির্মাণ শুরুর আগে সেটি ভেঙে ফেলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফলে বর্তমানে এলাকাবাসীকে ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে হচ্ছে। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এমন ধীর গতিতে কাজ চলতে থাকলে আগামী বর্ষার আগেই সেতুর নির্মাণ শেষ হওয়া অনিশ্চিত, আর তা হলে ভোগান্তি আরও চরমে পৌঁছাবে।


স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম রব্বানী বলেন, ২০২৩ সালে সেতুর কাজ শুরু হয়েছে, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। অথচ এখনো পিলার নির্মাণের কাজই শেষ হয়নি। এখানে একটা বাঁশের সাঁকো ছিল, সেটিও কাজের সুবিধার্থে ভেঙে ফেলা হয়েছে। যেভাবে কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে অল্প কিছুদিনের মধ্যে নদীতে পানি চলে আসবে। তখন এই এলাকার মানুষ কীভাবে যাতায়াত করবে ?


ভ্যানচালক আব্দুল হাকিম বলেন, এক বছর ধরে ব্রিজের কাজ চলছে। কখনো কাজ করে, আবার থেমে যায়। যাতায়াত করতে খুব কষ্ট হয়। নদী পার হতে আমাদের অনেক ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে।


কলেজ শিক্ষার্থী মো. মামুন ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এখানে কোনো ব্রিজ ছিল না। বাঁশের সাঁকো দিয়ে কষ্ট করে স্কুল-কলেজে যেতে হতো। দেড় বছর আগে ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু হলেও এখনও তা শেষ হয়নি। মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু কবে কাজ শেষ হবে তার কোনো খবর নেই।


কাজের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হলেও কেন এখনো ব্রিজের অর্ধেক কাজও সমাপ্ত হয়নি- এমন প্রশ্নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান 'মোহাম্মদ ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স লিমিটেড'-এর প্রতিনিধি আরিফ ইসলাম বলেন, আমি এখানে ১৫ দিন আগে এসেছি। ইতিপূর্বে এখানে কী হয়েছে সে সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। আপনাদের অভিযোগগুলো আমি শুনেছি সেগুলো আমি ঠিকাদারকে জানাবো।


এদিকে, অভিযোগ উঠেছে সেতুটির নির্মাণে এলজিইডির পর্যাপ্ত তদারকি না থাকায় গুণগত মান অনেক খারাপ হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলায় নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অভিযোগ করলেও সমাধান মেলে না বলে জানান তারা।


স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক আল আমিন খন্দকার বলেন, সেতুর নির্মাণে শুরু থেকেই অনিয়ম চলছে। ঢালাইয়ের কাজে দিনাজপুরের ব্ল্যাক স্টোন ব্যবহারের কথা থাকলেও মাটিযুক্ত নিম্নমানের পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব অনিয়ম এলজিইডির ইঞ্জিনিয়ারকে জানালে তিনি উল্টো মামলার হুমকি দেন। এই এলাকায় কাজ না করার কথা বলেন।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেবীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. শাহরিয়ার ইসলাম শাকিল বলেন, সময় বাড়ানো হয়েছে। আকস্মিক বৃষ্টিপাতের কারণে টেম্পোরারি সেতুটি নষ্ট হয়ে গেছে। এটি পুনরায় নির্মাণ করে সচল করা হবে।


এদিকে, দ্রুত নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে সেতুটি জনসাধারণের চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। 










 

সম্পাদকীয় :

প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ গোলাম মাওলা শাওন
মোবাইল : ০১৭১১-০০৬২১৪

অফিস :

প্রধান কার্যালয় : ৩১/১ শরীফ কমপ্লেক্স ৫ম তলা পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০

মোবাইল : ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০

ই-মেইল : [email protected],  [email protected]