ঠাকুরগাঁও দলিল লেখক সমিতির চাঁদাবাজি বছরে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ

আপলোড সময় : ২১-০৫-২০২৫ ০৩:৫৭:৫৪ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ২১-০৫-২০২৫ ০৩:৫৭:৫৪ অপরাহ্ন
 

রুবেল ইসলাম ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: সমিতির নামে জমি ক্রেতা-বিক্রেতাদের জিম্মি করে ঠাকুরগাঁও সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দলিল লেখক সমিতির বিরুদ্ধে বছরে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

 

তাদের এ চাঁদাবাজি ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের হয়রানী বন্ধ করতে সাব-রেজিস্ট্রার অফিস থেকে কয়েকবার লিখিত প্রদক্ষেপ নিলেও তোয়াক্কা করেন না সমিতির নেতারা।

 

খোজ নিয়ে দেখা গেছে, শুধু সাব-রেজিস্ট্রার অফিস নয়, স্বয়ং বাংলাদেশ নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক শহিদুল আলম ঝিনুক এক স্বাক্ষরিত পত্রে বলা হয়, দেশের কোন সাব রেজিস্ট্রি অফিসে যেন দলিল লেখক সমিতির ব্যানারে দলিল লেখকরা অবৈধভাবে দলিল প্রতি নির্দিষ্ট হারে চাঁদা আদায় করা না হয়। এ ব্যাপারে সতর্ক ও নজরদারি রাখার জন্য সকল সাব রেজিস্টার ও জেলার রেজিস্টারদের নির্দেশ প্রদান করা হয়।

 

অভিযোগ রয়েছে, সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ সরকার কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগ সরকারের ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেনের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে বেপরোয়া ভাবে সমিতির নামে চাঁদাবাজি শুরু করে। তাঁর কাছে জিম্মি সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের কর্মকর্তা- কর্মচারীরাও। একটি রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় কয়েক বছর ধরে সমিতির সভাপতির চেয়ারটি দখল করে রয়েছেন তিনি।

 

অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, জমি রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে দলিল লেখক সমিতির বেপরোয়া চাঁদাবাজি ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার পরিবর্তন হলেও দলিল লেখক সমিতির চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। তাদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

 

দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে গেলে সমিতির নামে একটি নির্ধারিত হারে চাঁদা আদায় করা হয়। টাকা না দিলে কাজ হয় না। সে কারনে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করান।

 

সমিতির সদস্য কছির উদ্দিন স্বীকার করে বলেন, প্রতিদিন ৬০/৭০টি দলিল লেখা হয়। এর বিপরীতে সমিতির নাম করে দলিল প্রতি ৩০০ টাকা আদায় করা হয়। এ টাকা জমা হয় সংগঠনে।

 

আর টাকা না পেলে দলিলের ফাইল ছাড়েন না। তবে এ টাকা তিনি সমিতির ফান্ডে জমা করেন। এখানকার নিয়য় হলো ৩০০ টাকা করে দিতে হবে। টাকা না দিলে কাজ কিভাবে হবে। নিজের পকেট থেকে তো দেয়া সম্ভব না।

 

জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে সনদপ্রাপ্ত দলিল লেখক রয়েছেন ৮১ জন। নিয়ম অনুযায়ী দলিল লেখকরা দলিল লেখার বিনিময়ে প্রতি পৃষ্ঠা বাবদ ও সরকারি ফিথর হার নির্ধারণ করে। সে অনুযায়ী সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের সামনে একটি তালিকা করে টানিয়ে রাখার নির্দেশনা রয়েছে।

 

এ ছাড়া লাইসেন্সধারী কোনো দলিল লেখক আইন লঙ্ঘন করলে সাব-রেজিস্ট্রার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবেন। কিন্তু সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে এসব নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না দলিল লেখক সমিতি।

 

দলিল করতে আসা আরিফুল ইসলাম, সমসের আলী ও আব্দুর রহিমসহ ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, দুই শতক জমি রেজিস্ট্রি বাবদ সাড়ে তিন হাজার টাকা দিতে হয়েছে। দলিল লেখক সমিতি নিয়েছে ২ হাজার টাকা। এ ছাড়াও অফিস খরচ বাবদ দেড় হাজার।

 

তারা বলেন, শুনেছি ওই টাকা নাকি সমিতির সবাই ভাগ করে নেয়। টাকা না দিলে তো আর জমি রেজিস্ট্রি হয় না। তাই সবাই বাধ্য হয়ে টাকা দিচ্ছে। আবার কোন কোন ব্যাক্তির কাছে নেয়া হচ্ছে চার থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত।

 

সদর উপজেলা ভুক্তভোগী হুমায়ুন কবির রেজা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা যদি কোন দলিল রেজিস্ট্রি করতে আসি তখন দেখি দলিল লেখক সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বা তাদের মাধ্যমে যারা দলিল লিখে এরা বিভিন্নভাবে প্রতি দলিলে মানুষকে চরমভাবে হয়রানী করে।

 

যখন প্রশ্ন করি আপনাদের লিখনীর ফি কতো? তখন তারা বলে তাদের নির্ধারিত কোন ফি নেই। তারা তাদের মতো করে মানুষের পকেট কাটছে। সমিতির নামে এরা চাঁদাবাজি শুরু করেছে।

 

তিনি আরও বলেন, আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল ওয়াদুদ সরকার আর কত বছর সভাপতি থাকবেন। তিনি মানুষকে জিম্মি করে সমিতির নামে চাঁদাবাজি করছে। তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে টাকা ছাড়া কথা বলে না। সমিতির এমন বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে আমরা অতিষ্ট। এর প্রতিকার চাই।

 

অভিযোগের বিষয়ে দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরিচয় পেয়ে কথা না বলে ব্যস্ততা দেখিয়ে এড়িয়ে যান।

 

তবে নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক জানান, সমিতির নামে চাঁদাবাজি নয়, আমরা আমাদের পারিশ্রমিক নিয়ে থাকি। আর সেবা-প্রত্যাশীদের কাছে যে অর্থ নেওয়া হয় তা সমিতির ফান্ডে জমা করা হয়। ঈদে বা সমিতির কোন সদস্য অসুস্থ হলে তাদের সাহায্য করা হয়। একটি দলিল লেখাতে কত টাকা নেওয়া হয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দলিল লেখার নিদিষ্ট কোন ফি নেই। অনেকেই খুশি হয়ে ৫/১০ হাজার টাকাও দেয়, আবার কেউ ২ হাজারও দেয়।

 

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর সাব-রেজিস্ট্রার রেজাউল করিম জানান, সমিতির নামে জিম্মি করে দাতা বা গ্রহীতার কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় গ্রহণযোগ্য নয়। অফিসিয়ালিভাবে বলা হয়েছে কাউকে জিম্মি করে সমিতির নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা যাবে না। মানুষ যেনো সরকারি ফিতে সেবা পায় সে বিষয়ে নজর রাখা হচ্ছে। তবে তারপরেও অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হলে ব্যবস্থা নিতে উর্ধতনদের লিখিতভাবে জানানো হবে। এছাড়াও মাঝে মাঝে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলি। অভিযোগ থাকলে সমাধান করে দেই। তার পরেও যদি আমার অগচরে অনিয়ম বা হয়রানীর অভিযোগ উঠে এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

আর দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত ঠাকুরগাঁও জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আজমির শরিফ মারজী জানান, আমাদের জানা মতে সমিতির নামে চাঁদা বা অতিরিক্ত অর্থ নেয়া যাবে না। তবে যদি নিয়ে থাকে আর আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেন তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

 

 

সম্পাদকীয় :

প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ গোলাম মাওলা শাওন
মোবাইল : ০১৭১১-০০৬২১৪

অফিস :

প্রধান কার্যালয় : ৩১/১ শরীফ কমপ্লেক্স ৫ম তলা পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০

মোবাইল : ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০

ই-মেইল : [email protected],  [email protected]