
নিজস্ব প্রতিবেদক : মাসব্যাপী বৈশাখী মেলার অনুমতি নিয়ে জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর এলাকায় চলছে রমরমা অবৈধ লটারি বাণিজ্য, জুয়ার আসর ও যাত্রাপালার নামে রাতভর অশ্লীল নৃত্য। বিষয়টি দেখার যেন কেউ নেই।
শনিবার দুপুরে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, মেলায় কোনধরনের জুয়া কিংবা অশ্লীলতা চললে তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উজিরপুরের বাসিন্দা মো. কামরুজ্জামান স্থানীয় কতিপয় বিএনপি নেতাদের সহায়তায় প্রশাসনের শর্ত সাপেক্ষে অনুমতি নিয়ে পহেলা বৈশাখের দিন থেকে মাসব্যাপী "বৈশাখী মেলা"র আয়োজন করেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মেলা শুরুর প্রথমদিন থেকেই র্যাফেল ড্র'র নামে চলছে লটারি বাণিজ্য। যা এখন মেলার প্রধান আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। লোভনীয় বিভিন্ন অফারের লোভে সাধারণ মানুষ প্রতিদিন লটারি ক্রয় করছেন। এছাড়াও মেলার একপাশে চলছে রমরমা জুয়ার আসর ও যাত্রাপালার নামে চলছে গভীরে রাতে অশ্লীল নৃত্য পরিবেশন।
সূত্রটি আরও জানিয়েছেন, স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা, থানা পুলিশ ও স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তিকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে এসব অবৈধ কর্মকান্ড পরিচালনা করা হচ্ছে।
তবে এ অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে বাবুগঞ্জ থানার ওসি শেখ আমিনুল ইসলাম বলেন, মেলার নামে অবৈধ কর্মকান্ড পরিচালনার কোনধরনের সুযোগ নেই। তারপরেও বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সরজমিনে দেখা গেছে, প্রতিদিন রাত হলেই মেলার মাঠের একপ্রান্তে ছোট্ট একটি টিনের ঘরের স্টলে চলছে জুয়ার আসর। আশেপাশে শিশু-কিশোর থেকে নানা বয়সের মানুষ জুয়ার কোটে অংশগ্রহণ করছেন। এরপর রাত ১০ টায় শুরু হয় র্যাফেল ড্র নামের লটারি বাণিজ্যর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।
মেলার পেছনের দিকে লটারি ড্রয়ের মঞ্চে সাজিয়ে রাখা হয়েছে টিভি, ফ্রিজ, মোটরসাইকেলসহ নানা ধরনের পুরস্কার। মাইকে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। মঞ্চের সামনেই টেবিল-চেয়ার পেতে প্রকাশ্যে প্রতিটি লটারি ২০ টাকা দামে বিক্রি করছেন একাধিক যুবক। এখান থেকে লটারি ক্রয় করছেন বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ।
র্যাফেল ড্র'র পর পরই শুরু হয় যাত্রাপালার নামে অশ্লীল নৃত্য। যা চলে ভোররাত পর্যন্ত। জনপ্রতি দুই থেকে আটশ' টাকা দিয়ে টিকিট কেটে নানা বয়সের মানুষ এই অশ্লীলতা দেখতে ভিড় করছেন।
যাত্রা মঞ্চের পার্শ্ববর্তী এলাকার একাধিক প্রবীণ ব্যক্তিরা বলেন, জীবনে যাত্রাপালা দেখেছি অনেকবার। কিন্তু এমন নগ্ন নৃত্যের কথা কখনও শুনিনি। এই অশ্লীলতা বন্ধ না হলে এলাকার যুব সমাজ ধ্বংসের মুখে পরবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক যুবকরা জানিয়েছেন, খুব সতর্কতার সাথে মেলা চালানো হচ্ছে। কোন দর্শক যাতে নগ্ন নৃত্যের দৃশ্য মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করতে না পারে সেজন্য কয়েকজন লোক পাহাড়ায় থাকছেন।
সার্বিক বিষয়ে মেলা পরিচালনা করা মো. কামরুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আপনারা তো সবই বোঝেন আমিতো সবাইকে ম্যানেজ করেই এভাবে মেলা পরিচালনা করছি। নিউজ করার দরকার নেই, আপনাদের কিছু লাগলে জানাবেন।
এ ব্যাপারে বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফারুক আহমেদ বলেন, মেলার জন্য প্রশাসনের অনুমতি রয়েছে। কিন্তু সেটা শর্তসাপেক্ষে। সেইসব শর্ত অমান্য করে মেলা পরিচালনা করা যাবেনা। শর্ত অমান্য করে কোন কিছু পরিচালনার অভিযোগ পেলে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।