
নিজস্ব প্রতিবেদক
জামায়াতের পর্দানশীন নারী কর্মীদের ওপর হামলাকারীদের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে -মোবারক হোসাইন
আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান মহেশপুরে মহিলা জামায়াতের নারী কর্মীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার খোঁজ-খবর রাখছেন। তিনি এই ঘটনায় বিস্মিত ও স্তম্ভিত। তাঁর নির্দেশে ১১ মার্চ সকালে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চল পরিচালক জনাব মোবারক হোসাইন মহেশপুরে গিয়ে মহিলা জামায়াত আয়োজিত বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জনাব মোবারক হোসাইন বলেন, “নারীদের মাথা ঢেকে রাখা ইসলামের একটি ফরয বিধান। বিএনপির সন্ত্রাসীরা ইসলামী শরীয়তের একটি মৌলিক ফরয বিধানকে ন্যক্কারজনকভাবে অবমাননা করেছে। ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের পর এমন ইসলাম বিরোধী চক্রান্ত দেশবাসী কিছুতেই মেনে নিবে না। এই অবমাননাকর ঘটনায় সারাদেশের ইসলাম প্রিয় জনতা ফুঁসে উঠেছে। বিএনপির হাইকমান্ডকে এই ইসলাম বিরোধী ঘটনার যথাযথ তদন্ত করতে হবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। যদি এর ব্যত্যয় ঘটে তাহলে দেশবাসী বিএনপিকে ইসলাম বিরোধী শক্তি হিসেবে গণ্য করবে।
উল্লেখ্য, গত ৯ মার্চ রবিবার সকাল ১০টার দিকে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলা জামায়াতের উদ্যোগে বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের কুল্লোপাড়া গ্রামের খাইরুল ইসলামের বাড়িতে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ উপলক্ষ্যে স্থানীয় নারীদের নিয়ে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভা চলাকালে বিএনপির স্থানীয় সন্ত্রাসী আল আমিন, ঝুমুর, সাহেব, সোহেল ও আশরাফুল হাতুড়ি, কাঁচি ও বাঁশের লাঠি নিয়ে জামায়াতের মহিলা নেত্রী হাসিনা খাতুনসহ নিরীহ ১০/১২ মহিলাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে বেধড়ক পেটাতে থাকে এবং অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। বিএনপির সন্ত্রাসীরা জামায়াত নেত্রী হাসিনা খাতুনকে ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে লাঠি দিয়ে উপর্যুপরি নির্দয়ভাবে পেটাতে থাকে এবং গালে-মুখে প্রচণ্ড চড় মারতে থাকে। বিএনপির সন্ত্রাসী আল আমিন, সাহেব ও সোহেল হাসিনা খাতুনের মাথার ওড়না টান দিয়ে খুলে ফেলে এবং রাস্তার ওপর দাঁড় করিয়ে রেখে হেনস্থা করে।
মহেশপুর উপজেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক ফারুক আহম্মদের সভাপতিত্বে ও উপজেলা কর্মপরিষদ সদস্য ইসমাইল হোসেন পলাশের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, অঞ্চল টিম সদস্য জনাব আলমঙ্গীর বিশ্বাস, জেলা আমীর অধ্যাপক আলী আজম মোহাম্মাদ আবু বকর ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য অধ্যাপক মতিয়ার রহমান। আরও বক্তব্য রাখেন জেলা সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল আওয়াল ও সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক আব্দুল হাই। প্রতিবাদ সমাবেশে মহিলাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চল পরিচালিকা মাসুমা পারভীন, ঝিনাইদহ জেলা মহিলা বিভাগের সেক্রেটারি ইয়াসমিন আরা, মহেশপুর উপজেলা মহিলা বিভাগের সেক্রেটারি রেহেনা বেগম, সহকারী সেক্রেটারি জোবাইদা খানম, জামায়াতের মহিলা নেত্রী হাসিনা বেগম, শাহানারা বেগম, আমিনা খাতুন প্রমুখ।
জনাব মোবারক হোসাইন প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “সম্প্রতি মাগুরাসহ দেশের কতিপয় স্থানে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এরই প্রেক্ষিতে নারীদের সুরক্ষার জন্য অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার করতে প্রধান উপদেষ্টার সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও আমরা দেখতি পাচ্ছি পুলিশ প্রশাসন অপরাধীদের গ্রেফতার করতে গড়িমসি করছে। আপনাদের এই নিরব ভূমিকা দেশবাসী কিছুতেই বরদাশত করবে না। আমরা জানতে পেরেছি শেষ পর্যন্ত জনগণের প্রচণ্ড চাপে পুলিশ প্রশাসন বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদেরের ছেলে সোহেল আহমেদকে গ্রেপ্তার করেছে। আমরা সকল অপরাধীকে দ্রুত গ্রেফতার করে আদালতের নিকট সোপর্দ করার জন্য পুলিশ প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। সেই সাথে আমি ঝিনাইদহে জামায়াতের নেত্রীদের উপর বিএনপির সন্ত্রাসীদের ন্যক্কারজনক হামলা ও নারীদের লাঞ্ছিত করার ঘটনার অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।
প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে জনাব মোবারক হোসাইন বিএনপির সন্ত্রাসীদের হামলায় গুরুতর আহতদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তাদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন ও সমবেদনা জানান।