এম মনির চৌধুরী রানা চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (চমেকহা) পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন বলেছেন, আগামী ১৫ মার্চ শনিবার সারা দেশের ন্যায় চট্টগ্রাম বিভাগেও দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন-২০২৫। ক্যাম্পেইন চলাকালীন ৬-১১ মাস বয়সী শিশুকে একটি করে নীল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল (১ লক্ষ আই.ইউ) ও ১২-৫৯ মাস বয়সী শিশুকে একটি করে লাল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল (২ লক্ষ আই.ইউ) খাওয়ানো হবে। সংশ্লিষ্ট সকলের সম্মিলিত উদ্যোগে এ ক্যাম্পেইন সফল করতে হবে। এ বয়সের কোন শিশু যাতে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়া থেকে বাদ না পড়ে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক থাকতে হবে। অসুস্থতার কারণে ৬-৫৯ মাস বয়সী কোন শিশু যদি ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়া থেকে বাদ পড়ে তাকে সুস্থতা পরবর্তী এ ক্যাপসুল খাওয়াতে হবে। সিটি কর্পোরেশসহ চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ে ৬-৫৯ মাস বয়সী মোট ৫২ লাখ ২৪ হাজার ৫৩৬ জন শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন উপলক্ষে আজ ১১ মার্চ মঙ্গলবার সকালে নগরীর সিনেমা প্যালেস সংলগ্ন রয়েল রোডস্থ চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্টিত অবহিতকরণ ও কর্মপরিকল্পনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের আওতাধীন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্টান ও জাতীয় পুষ্টি সেবার বাস্তবায়নে বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) কার্যালয় সভার আয়োজন করেন।
তিনি বলেন, ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল শিশুর অপুষ্টি, অন্ধত্ব প্রতিরোধ, দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিশ্চিত, হাম ও ডায়রিয়াজনিত মৃত্যুর হার হ্রাসসহ সকল ধরণের মৃত্যুর হার হ্রাস করে। পরিবারের রান্নায় ভিটাামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ ভোজ্য তেল ব্যবহার শিশুর জন্য যথেষ্ট উপকারী। মা ও শিশুর পুষ্টির জন্য গর্র্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি করে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ খাবার খেতে দিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. অং সুই প্রু মারমা বলেন, বিভিন্ন কারণে শিশুরা অপুষ্টিতে ভূগছে। শিশুর সুস্থভাবে বেঁচে থাকা, স্বাভাবিক বৃদ্ধি, দৃষ্টিশক্তি, রক্ত স্বল্পতা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন ‘এ’ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক অনুপুষ্টি। তাই এই ক্যাম্পেইন কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে অপুষ্টি দূরীকরণ সম্ভব হবে। শিশুর জন্মের সাথে সাথে মায়ের বুকের শাল দুধ খাওয়াতে হবে এবং ৬ মাস পর্যন্ত বুকের দুধ ছাড়া অন্য কিছু দেয়া যাবে না। শিশুর বয়স ৬ মাস পূর্ণ হলে দুই বছর পর্যন্ত মায়ের দুধের পাশাপাশি পরিমানমত ঘরে তৈরি পুষ্টি সমৃদ্ধ সুষম খাবার খাওয়াতে হবে। অনুষ্ঠিতব্য এ ক্যাম্পেইন নিয়ে যাতে কেউ গুজব ছড়াতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন ও পুষ্টিবার্তা বিষয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সোস্যাল মিডিয়া, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় নিয়মিত প্রচার প্রচারনার ব্যবস্থা করলে জনগণ এ ব্যাপারে আরও সচেতন হবে।
তিনি আরও বলেন, ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন সফল করতে হলে মসজিদ, মন্দির, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাটবাজার, বাস স্ট্যান্ড, নৌ-ঘাটসহ গুরুত্বপূর্ণস্থানে মাইকিং করে সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা চালানো হবে। স্বাস্থ্য বিভাগ, সরকারী প্রতিষ্টান, জনপ্রতিনিধি, আনসার-ভিডিপি ও এনজিও সংস্থাগুলোকে ক্যাম্পেইন বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে হবে। স্থায়ী ও অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে মাঠকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী শিশুদেরকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর কাজে নিয়োজিত থাকবে। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এমসিএস ডা. মোঃ নওশাদ খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত অবহিতকরণ ও কর্মপরিকল্পনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ডা. কমরুল আযাদ।
রিসোর্স পারসন হিসেবে বক্তব্য রাখেন, পরিবার পরিকল্পনা চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক আবু সালেহ মোঃ ফোরকান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক মোঃ ফজলুল কাদের চৌধুরী, প্রাথমিক শিক্ষা চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক আতাউর রহমান, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোঃ মাসুদ মিয়া, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি অফিসের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রওশন আরা, পরিবার পরিকল্পনা চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক বেগম শাহান ওয়াজ, পরিবার পরিকল্পনা লক্ষীপুর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নাজমুল হাসান, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মনোয়ার হোসেন চৌধুরী, সহকারী পরিচালক (ডেন্টাল)) ডা. আবু সৈয়দ মোঃ ইমতিয়াজ হোসাইন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তপন কুমার চক্রবর্তী ও ইউনিফের প্রতিনিধি ডা. উবাসুই প্রমুখ। অবহিতকরণ ও কর্মপরিকল্পনা সভায় বিভিন্ন জেলার সিভিল সার্জন, সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি, পরিবার পরিকল্পনা বিভিন্ন জেলার উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক, সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিগণ অংশ নেন।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয় সূত্র জানায়, আগামী ১৫ মার্চ শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন চলাকালীন সময়ে বিভাগের ১১ জেলা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৬-১১ মাস বয়সী মোট ৬ লাখ ২১ হাজার ৮৩৫ জন শিশুকে একটি করে নীল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল (১ লক্ষ আই.ইউ) ও ১২-৫৯ মাস বয়সী ৪৬ লাখ ২ হাজার ৭০১ জন শিশুকে একটি করে লাল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল (২ লক্ষ আই.ইউ) খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিভাগীয় পর্যায়ে ৬-৫৯ মাস বয়সী মোট ৫২ লাখ ২৪ হাজার ৫৩৬ জন শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে।
তন্মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৬-১১ মাস বয়সী ৯২ হাজার ৭২৭ জন, ১২-৫৯ মাস বয়সী ৭ লাখ ৩২ হাজার ৯৮৯ জন, কক্সবাজার জেলায় ৬-১১ মাস বয়সী ৬১ হাজার ৬৫৯ জন, ১২-৫৯ মাস বয়সী ৪ লাখ ২৭ হাজার ৮০৬ জন, বান্দরবান জেলায় ৬-১১ মাস বয়সী ৮ হাজার ৫৯৬ জন, ১২-৫৯ মাস বয়সী ৫৩ হাজার ৯৪৬ জন, রাঙ্গামাটি জেলায় ৬-১১ মাস বয়সী ১০ হাজার ৫৩৭ জন, ১২-৫৯ মাস বয়সী ৭৫ হাজার ৩২৩ জন, খাগড়াছড়ি জেলায় ৬-১১ মাস বয়সী ১৫ হাজার ৯২২ জন, ১২-৫৯ মাস বয়সী ৯৮ হাজার ৭৪০ জন, ফেনী জেলায় ৬-১১ মাস বয়সী ৩১ হাজার ৬৭৫ জন, ১২-৫৯ মাস বয়সী ২ লাখ ২০ হাজার ৮৯৪ জন, নোয়াখালী জেলায় ৬-১১ মাস বয়সী ৬৪ হাজার জন, ১২-৫৯ মাস বয়সী ৫ লাখ ৯২ হাজার ৫’শ জন, লক্ষীপুর জেলায় ৬-১১ মাস বয়সী ৩৫ হাজার ৪২৬ জন, ১২-৫৯ মাস বয়সী ২লাখ ৬৫ হাজার ৭৩৪ জন, চাঁদপুর জেলায় ৬-১১ মাস বয়সী ৪১ হাজার ৪৪১ জন, ১২-৫৯ মাস বয়সী ৩ লাখ ১৬ হাজার ৩৪৮ জন, কুমিল্লা জেলায় ৬-১১ মাস বয়সী ১ লাখ ১১ হাজার ৯৯১ জন, ১২-৫৯ মাস বয়সী ৮ লাখ ৫০ হাজার ৯৫১ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ৬-১১ মাস বয়সী ৫৭ হাজার ৮৬১ জন, ১২-৫৯ মাস বয়সী ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৪৭০ জন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় ৬-১১ মাস বয়সী ৯০ হাজার, ১২-৫৯ মাস বয়সী ৪ লাখ ৭০ হাজার শিশু।