
মাসুদুর রহমান, জামালপুর প্রতিনিধি :
অবশেষে সরিষাবাড়িতে চাঞ্চল্যকর বিপুল হত্যা মামলার প্রধান আসামী মোঃ আসাদুজ্জামান তালুকদার আপেল (৪৮) কে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশ। তিনি জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের তারাকান্দি গ্রামের মৃত আনোয়ার হোসেনের ছেলে । ঘটনার পর থেকেই অতিরক্তি পুলিশ সুপার (সদর সার্কেলের) সরাসরি তত্ত্বাবধানে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)র ওসি নাজমুস সাকিবের নেতৃত্বে ১০ জন আসামীর মধ্যে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা শাখা ।
বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা এবং তথ্যের ভিত্তিত্বে রবিবার রাত দেড়টার দিকে হত্যা মামলার প্রধান আসামী আসাদুজ্জামান আপেলকে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর থানার হরিপুল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় । গ্রেফতারের বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সচেতন মহল ও স্থানীয় এলাকা বাসী এবং মামলার বাদী।
রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২ টায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার সৈয়দ রফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান,২০২৫ সালের ১৭ জানুয়ারি সরিষাবাড়ির তারাকান্দি পোগলদিগায় ১৩ শতাংশ জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে চাচাতো ভাই আতাউর রহমান বিপুল ও তার পরিবারের উপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করে আপেল ও তার স্বজনেরা। এসময় কুপিয়ে বিপুলের ডান হাত ও ডান পা বিচ্ছিন্ন করে আপেল ও তার সহযোগীরা। এছাড়াও তাদের দায়ের আঘাতে গুরুত্বর আহত হয় বিপুলের মা আসমা বেগম ও তার স্ত্রী মুক্তা বেগম। এই নির্মম ঘটনায় বিপুলের ভাই বাদী হয়ে সরিষাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যার ঘটনাটি পুরো জেলাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। পুলিশ সুপার সৈয়দ রফিকুল ইসলাম প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানান, ঘটনার পরপরই দেশের বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালিয়ে এজাহারনামীয় ১০ জন আসামীর মধ্যে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা শাখা । সবশেষ রাত দেড়টার দিকে এই হত্যা মামলার প্রধান আসামী আপেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই হত্যা মামলায় ভুক্তভোগীরা ন্যায় বিচার পাবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
এদিকে জামালপুর ডিবি পুলিশের ওসি মো: নাজমুস সাকিব জানান, ১০ এজাহারভুক্ত আসামীর মধ্যেই ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ । পাশাপাশি ঘটনার দিনই সরিষাবাড়ী থানা পুলিশ ২ জনকে গ্রেফতার করেছে। বাকী আসামীদের গ্রেফতার অভিযান চলমান আছে।
উল্লেখ্য যে,সংক্রান্ত বিরোধে গত ১৭ জানুয়ারী তারাকান্দি গ্রামের মোঃ আনোয়ার হোসেন কালুর ছেলে মো: আলাউর রহমানের পরিবারের ওপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় মৃত আনোয়ার হোসেনের ছেলে আসাদুজ্জামান তালুকদার আপেলের নেতৃত্বে তার লোকজন। পরে গুরুত্বর আহত তিন জনকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বিপুলকে মৃত ঘোষনা করেন এবং বিপুলের স্ত্রী ও তার মাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করেন। বর্তমানে তারা ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে । ঘটনার দিন রাতেই বিপুলের ভাই আলামিন বাদী হয়ে সরিষাবাড়ি থানায় ১৪৩/৪৪৭/ ৩২৩/৩২৪/ ৩২৫/৩২৬/৩০৭/৩০২/৪০৬/ ১১৪/৫০৬/৩৪ ধারায় হত্যা মামলা দায়ের করে।
পরবর্তীতে সরিষাবাড়ি থানা পুলিশ তাৎক্ষনিক বিভিন্নস্থানে অভিযান পরিচালনা করিয়া ২নং আসামী মোছাঃ আনোয়ারা বেগম এবং ৪নং আসামী সাজিত ইসলাম তানজিল কে গ্রেফতার করেন। এদিকে হত্যাটি নিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) ও অতিরক্তি পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) এর সরাসরি তত্ত্বাবধানে জেলা গোয়েন্দা সংস্থা (ডিবি) ওসি মো: নাজমুস সাকিব ও তার সদস্যরা দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে গাজিপুর মেট্রোপলিটনের চক্রবর্তী ট্যাক এলাকা থেকে ৭নং আসামী তানজিল ইসলাম তাসিন (২৬), ৮নং আসামী মোঃ তাসলিমুল ইসলাম তমাল (২২), ৯নং আসামী বিন্দু তালুকদার (২৪)দের গত ২০ জানুয়ারী গ্রেফতার করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়। এরপর ৭ ফেব্রুয়ারী ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার জিরানী এলাকা হইতে ০৫ নং আসামী রোকেয়া ওরফে তুহিনা বেগম (৪২) গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়। আদালতেই ৫নং আসামী রোকেয়া ওরফে তুহিনা বেগম ও ৭নং আসামী তানজিরুল ইসলাম তাসিন (২৬) বিজ্ঞ আদালতে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে দোষ স্বীকার করে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী প্রদান করেছে ।