বোয়ালখালীতে স্কুল পর্যায়ে প্রথম শহীদ মিনার, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়নি এখনো

আপলোড সময় : ২২-০২-২০২৫ ০৪:৪২:৪৫ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ২২-০২-২০২৫ ০৪:৪২:৪৫ অপরাহ্ন

 

এম মনির চৌধুরী রানা চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের বোয়ালখালীাে স্কুল পর্যায়ে দেশের প্রথম শহীদ মিনার, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়নি এখনো, বায়ান্ন সালের মহান ভাষা আন্দোলন পরবর্তী সময়ে যখন পাকিস্তান সরকার এ দেশে শহীদ মিনার স্থাপনে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন, এমন কঠিন সময়ে পাকিস্তান সরকারের প্রশাসনিক রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে ১৯৬৫ সালে ২০ ফেব্রুয়ারি দিন রাতের আধাঁরে বোয়ালখালীতে কয়েকজন শিক্ষার্থী শহীদ মিনার স্থাপনের এ সাহসী পদক্ষেপের সূচনা করেছিলেন।

 


১৯৬৫ সালের তৎকালীন পাক সরকারের কঠোর বাধা উপেক্ষা করে বোয়ালখালী কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ে স্থাপন করা হয়েছিল এ শহীদ মিনার। যা সারা দেশের মধ্যে স্কুল পর্যায়ের প্রথম শহীদ মিনার হিসেবে খ্যাতি লাভ করে। তবে এখনো পর্যন্ত এ শহীদ মিনারটি রাষ্ট্রীয় ভাবে স্বীকৃতি না পাওয়া দূ:খ জনক বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সূশীল সমাজের নেতৃবৃন্দরা। এদিকে ১৯৬৫ সালের ২১ ফেরুয়ারি ভোর সকালে ছাত্র, শিক্ষক এলাকার জোয়ানরা রাতের আধাঁরে গড়ে উঠা শহীদ মিনারের খবর পেয়ে ফুল নিয়ে দলে দলে শ্রদ্ধা জানানোর খবর মুহুর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

 

এর পরই শুরু হয় তৎকালীন সরকারের দমন পীড়ন ও শহীদ মিনার নির্মাণ কারীদের উপর জুলুম নির্যাতন। এমনকি শহীদ মিনার নির্মাণকারীদের ছাত্রত্ব বাতিলেরও ঘোষণা দেয় তৎকালীন সরকার। এ নিয়ে একুশের বই মেলার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে প্রকাশিত ‘একুশের স্মারক গ্রন্থ’ এবং তৎকালীন এ শহীদ মিনার নির্মাণে উদ্যোক্তাদের সাথে কথা বলে এ তথ্যটি নিশ্চিত করা হয়।

 


কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনারটি নির্মাণের মূল কারিগর ও উদ্যোক্তা হওয়ার কারণে ঐ বিদ্যালয় থেকে আবুল হাসান ও সৈয়দ নুরুল হুদার ছাত্রত্ব বাতিল হওয়ার বিষয়টি সৈয়দুল আলম জীবদ্দশায় সভা সমিতি ও প্রশাসনিক সভায় নিশ্চিত করেছিলেন। সৈয়দ নুরুল হুদা ও আবুল হাসান এর সাথে শহীদ মিনার নির্মাণ কাজে সৈয়দুল আলম, মো. আবুল হোসেন, সৈয়দ রেজাউল আকবরী, মাহাবুব উল আলম, ফরিদ উদ্দিন জালাল, পিযুষ চৌধুরী, মিলন নাথ, যোগব্রত বিশ্বাস, আবদুস সাত্তার, দুলাল মজুমদার, আবুল কালাম আজাদ, মো. ওসমান, এস এম ইউছুফ, তসলিম উদ্দিন, জাকির হোসেন, মোহাম্মদ আলী, সৈয়দ জালাল উদ্দীন ও আবদুল্লাহ আল নোমান উল্লেখ যোগ্য।

 

এসময় তাদের কাজে সার্বিক সহযোগিতা করেছিলেন সেই বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আব্দুল গণি ছাবেরী। একুশের বই মেলার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে প্রকাশিত ভাষা আন্দোলনের গবেষক এম এ বার্নিকের লেখা ‘একুশের স্মারক গ্রন্থ’ এর জেলায় জেলায় শহীদ মিনার’ অধ্যায়ে উল্লিখিত ৮৯৭ নং পৃষ্ঠার বর্ণনায় বলা হয়েছে বোয়ালখালীতে অবস্থিত কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৫ সালের রাত্রি বেলায় শহীদ মিনারটি নির্মাণ করা হয়। তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে শহীদ মিনার নির্মাণের দায়ে আবুল হাসান ও সৈয়দ নুরুল হুদাকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করেছিলেন। এছাড়াও এ শহীদ মিনার নির্মাণের অপরাধে স্কুলটির ৩তলা বিশিষ্ট ভবন সহ বিজ্ঞান শিক্ষা বরাদ্দও ওই বছর বাতিল করা হয়েছিল।

 

১৯৬৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণকে ঘিরে এক অভাবনীয় দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছিল। খবর পেয়ে বেলা বাড়ার সাথে সাথে মানুষের ঢল নামে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি সম্মান জানানোর জন্য। বিশেষ করে স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজের হাজারো শিক্ষার্থীসহ কলেজের অধ্যাপক জসিম উদ্দিন হায়দার চৌধুরীর নেতৃত্বে এক জাগরণ দেখতে পায় বোয়ালখালীবাসী। কধুরখীল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ বড়ুয়া বলেন, ঐতিহ্যেবাহী কধুরখীল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে নির্মিত এই শহীদ মিনার বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্মিত প্রথম শহীদ মিনার। বাংলাদেশ স্বাধীনের ৬০ বছর পার হলেও এখনো আমরা এই শহিদ মিনারের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়নি। কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয় কতৃপক্ষ এ সংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দাবি করে বাংলা একাডেমির কাছে আবেদন করা হয়েছে।আজকের এই দিনে এই শহীদ মিনারের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির জোর দাবি জানাই।

সম্পাদকীয় :

প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ গোলাম মাওলা শাওন
মোবাইল : ০১৭১১-০০৬২১৪

অফিস :

প্রধান কার্যালয় : ৩১/১ শরীফ কমপ্লেক্স ৫ম তলা পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০

মোবাইল : ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০

ই-মেইল : [email protected],  [email protected]